নয়াদিল্লি: এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের আগে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে জর্ডনের কাছে ০-২ হেরে গেল ভারত (India vs Jordan)। শনিবার দোহায় প্রতিপক্ষকে ৭৫ মিনিট পর্যন্ত ঠেকিয়ে রাখে ভারত। তবে মাঝে মাঝে প্রতি আক্রমণেও ওঠে তারা। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জর্ডনের রক্ষণের তৎপরতায় ব্যর্থ হয়ে যায় তাদের আক্রমণ।
কিন্তু ম্যাচের শেষ দিকে ভারতীয় রক্ষণের দেওয়ালে ফাটল ধরে এবং ৭৬ মিনিটের মাথায় আবু আমারা ও স্টপেজ টাইমে আবু জ্রায়েকের গোলে হার স্বীকার করেন সুনীল ছেত্রীরা। এ দিন এটিকে মোহনবাগান রক্ষণের তিন সদস্যই প্রথম এগারোয় ছিলেন। আক্রমণে মনবীরকেও দেখা যায় প্রথমার্ধে। তবে লিস্টন কোলাসোকে মাঠে নামাননি ভারতীয় কোচ ইগর স্টিমাচ।
শনিবারের ম্যাচে শুরুতে ভারতীয় দলের মধ্যে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রবণতা দেখা গেলেও তাদের প্রতিপক্ষ জর্ডন ঘন ঘন বিপক্ষে শিবিরে হানা দিয়ে ছবিটা পাল্টে দেয়। তবে ভারতীয় দল মাঝে মাঝে প্রতি আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করে। কিন্তু জর্ডনের শক্তিশালী রক্ষণে আটক হয়ে যান সুনীল ছেত্রী, মনবীর সিংরা। তবে বেশির ভাগ সময়ে ভারতীয় রক্ষণই চাপে ছিল।
২৫ মিনিটের পর থেকে জর্ডন ক্রমশ চাপ বাড়াতে থাকে এবং ভারতীয় রক্ষণের পরীক্ষা আরও কঠিন হতে শুরু করে। সেই পরীক্ষায় অবশ্য উতরে গিয়েছেন এটিকে মোহনবাগানের ডিফেন্ডার-ত্রয়ী সন্দেশ, প্রীতম, শুভাশিসরা।
৩২ মিনিটের মাথায় উইং দিয়ে আক্রমণে উঠে বিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়েন সাহাল আব্দুল সামাদ। কিন্তু তাঁর গোলমুখী শট বাঁচিয়ে দেন গোলকিপার। এর চার মিনিটের মাথায় বাঁ দিক থেকে মনবীর সিংহের কাছে বল এলেও তা ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় গোল করতে ব্যর্থ হন মনবীর সিংহ। বিরতিতে যাওয়ার এক মিনিট আগে ফ্রি কিক থেকে সরাসরি বল ভারতের গোলে উড়ে আসে, কিন্তু সে যাত্রা বাঁচিয়ে দেন অভিজ্ঞ গোলকিপার গুরপ্রীত।
বিরতিতে ফল গোলশূন্য থাকার পরে যখন খেলা শুরু হয়, তখন ভারতীয় দলে দুই পরিবর্ত খেলোয়াড়কে দেখা যায়। মহম্মদ ইয়াসির ও আশিক কুরুনিয়ান মাঠে নামেন যথাক্রমে অনিরুদ্ধ থাপা ও মনবীর সিংহের বদলে। ৪৮ মিনিটেই ভাল সুযোগ পেয়ে যান সুনীল ছেত্রী। কাউন্টার অ্যাটাকে বাঁ দিকের উইং দিয়ে আক্রমণে ওঠেন তিনি। তবে বক্সে পৌঁছে তিনি বিপজ্জনক কিছু করার আগেই জর্ডনের ডিফেন্ডাররা নিজেদের জায়গায় ফিরে আসেন এবং দলকে বিপন্মুক্ত করেন।
৫৭ মিনিটের মাথায় জর্ডনকে প্রায় এগিয়েই দিচ্ছিলেন আবু জ্রায়েক। কিন্তু বক্সের মধ্যে থেকে তাঁর গোলমুখী শট সোজা গুরপ্রীতের হাতে গিয়ে জমা হয়ে যায়। এর তিন মিনিট পরে আরও সহজ সুযোগ পায় জর্ডন, যখন বাঁ দিক থেকে আসা ক্রসে গোল করার অনবদ্য সুযোগ পেয়ে যান হামজা আলদারাদ্রে। কিন্তু তিনি গোলের বাইরে বল পাঠিয়ে দেন।
দ্বিতীয়ার্ধে জর্ডন ভারতকে রীতিমতো কোণঠাসা করে দেয় এবং ৭৬ মিনিটের মাথায় তারা এক গোলে এগিয়ে যায়। আহমেদ সালের পাস পেয়ে বক্সের বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয় পোস্টে শট নেন আবু আমারা। গুরপ্রীত তাঁর বাঁ দিকে ডাইভ দিয়েও বলের নাগাল পাননি।
গোল খাওয়ার পরে ভারতীয় দল কিছুটা নড়েচড়ে বসে ঠিকই। কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ কিছু হয়নি। ৮৭ মিনিটের মাথায় ভাল জায়গা থেকে ফ্রিকিক পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি ছেত্রীরা। রেফারি চার মিনিট বাড়তি সময় দিলেও গোল তো শোধ করতে পারেইনি ভারত, উল্টে স্টপেজ টাইমে আরও একটি গোল খেয়ে যায় তারা। বাড়তি সময়ের তিন মিনিটের মাথায় আবু জ্রায়েক বক্সের বাঁ দিক থেকে গোল করেন এবং এবারেও বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে গোল বাঁচানোর চেষ্টা করেও পারেননি গুরপ্রীত।
এই ম্যাচ খেলে ভারতীয় দল কলকাতায় ফিরে আসবে এবং এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের চূড়ান্ত প্রস্তুতি সারবে। এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে গ্রুপ ডি-র খেলাগুলি হবে কলকাতায়। এই গ্রুপে ভারত ছাড়াও রয়েছে হংকং, আফগানিস্তান ও কম্বোডিয়া। এরা প্রত্যেকেই ফিফা ক্রমতালিকায় ভারতের নীচে রয়েছে। জুনের ৮, ১১ ও ১৪ তারিখে এই ম্যাচগুলি হবে কলকাতায়। ২০২৩-এর ১৬ জুন থেকে আগামী এএফসি এশিয়ান কাপ হওয়ার কথা।
এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বে ছ’টি গ্রুপের জয়ীরা যেমন মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে, তেমনই দ্বিতীয় স্থানাধিকারী দলগুলির মধ্যে থেকে সেরা পাঁচটি দলকে মূলপর্বে খেলার ছাড়পত্র দেওয়া হবে। ভারত টানা দ্বিতীয়বারের জন্য এই টুর্নান্টের মূলপর্বে যোগ্যতা অর্জন করার লক্ষ্য নিয়ে নামবে। তবে শনিবারের ম্যাচের এই পারফরম্যান্স তাদের আত্মবিশ্বাসের স্তরকে খুব একটা ওঠাতে পারবে কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন।
ভারতীয় দল: গুরপ্রীত সিং সান্ধু (গোল), সন্দেশ ঝিঙ্গন, শুভাশিস বোস (ইশান পন্ডিতা), আনোয়ার আলি, অনিরুদ্ধ থাপা (ইয়াসির মহম্মদ), গ্ল্যান মার্টিন্স, আকাশ মিশ্র, প্রীতম কোটাল, সাহাল আব্দুল সামাদ, মনবীর সিং (আশিক কুরুনিয়ান), সুনীল ছেত্রী (অধি) (ব্রেন্ডন ফার্নান্ডেজ)।
আরও পড়ুন: ঋদ্ধির ট্রফি জয়ের সুযোগ থাকলেও অসুস্থতার জন্য পাশে থাকতে পারছেন না স্ত্রী