সন্দীপ সরকার, কলকাতা: শুক্রবার বিকেলের পর থেকে নিরন্তর বেজেই চলেছে তাঁর ফোন। সকলের ফোন ধরতেও পারছেন না। চেনা নম্বর দেখে ফোন ধরেই এবিপি লাইভের কাছে আরও একটি চমকপ্রদ তথ্য পেলেন বাংলার পেসার মুকেশ কুমার (Mukesh Kumar)। যাঁকে কোচির মিনি নিলাম থেকে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকায় কিনেছে দিল্লি ক্যাপিটালস (Delhi Capitals)।
মুকেশই হলেন এখনও পর্যন্ত আইপিএলে (IPL) খেলা বাংলার ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে দামি। তিনি ছাপিয়ে গেলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কেও (Sourav Ganguly)। আইপিএলে সর্বোচ্চ ৪ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন সৌরভ। মুকেশের দর উঠল তাঁর চেয়েও ১ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা বেশি। উচ্ছ্বসিত বাংলার পেসার বললেন, 'এই তথ্য আমি জানতাম না। ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। ভাল লাগছে সিএবি তথা বাংলা ক্রিকেটের প্রতিনিধি হিসাবে এই জায়গায় পৌঁছতে পেরেছি বলে।'
বিহারের গোপালগঞ্জে পৈতৃক বাড়ি। সেখান থেকে রুজিরুটির টানে কাশীনাথ সিংহ এসেছিলেন কলকাতায়। বাংলায় এসে ট্যাক্সি চালাতেন। ভেবেছিলেন, ছেলেকে কলকাতায় এনে কাজে লাগিয়ে দেবেন। সংসারে যে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা। কিন্তু ছেলে শুনলে তো! তাঁর যে ধ্যান জ্ঞান ক্রিকেট।
শিবপুর ক্লাবের হয়ে তখন খেলছেন ডানহাতি মিডিয়াম পেসার। এদিকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ভবিষ্যতের ক্রিকেটার তুলে আনতে 'ভিশন ২০২০' শিবির চালু করছে সিএবি। মুকেশ বলছিলেন, 'ক্লাব কর্তা রবি মিত্র ও কোচ বীরেন্দ্র সিংহ আমার নাম ভিশনের শিবিরে পাঠান। সেখানে প্রথমে ওয়াকার ইউনিস ও পরে টি এ শেখরের তত্ত্বাবধানে প্র্যাক্টিস করি। তারপর বাংলা দলে সুযোগ পাই।'
বাংলা দলের হয়ে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স। জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়ছেন মুকেশ। বাংলাদেশ এ দলের বিরুদ্ধে টেস্টে ভারত এ দলের হয়ে দুরন্ত বোলিং করেছেন। ভারতীয় ক্রিকেট মহলের অনেকের মতে, চোট না পেলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্টে ভারতের সিনিয়র দলেও দেখা যেত ২৯ বছরের পেসারকে। যে জায়গায় মীরপুর টেস্টে খেলছেন জয়দেব উনাদকট।
আপাতত বেঙ্গালুরুতে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে রিহ্যাব করছেন মুকেশ। সেখান থেকে মোবাইল ফোনে বলছিলেন, 'এত বড় অঙ্ক পেয়ে খুশি। তবে অর্থই আমার কাছে বড় কথা নয়। যদি ন্যূনতম দর ২০ লক্ষ টাকাও পেতাম, ভালই লাগত। আমি চেয়েছিলাম সুযোগ। মাঠে নামতে পারাটাই আমার কাছে আসল। দিল্লি আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে। আমি কৃতজ্ঞ।'
গত আইপিএলেও দিল্লি ক্যাপিটালস শিবিরে ছিলেন। তবে নেট বোলার হিসাবে। মুকেশ বলছেন, 'কেউ চোট পেলে হয়তো দলে সুযোগ পেতাম। তবে দিল্লি ক্যাপিটালস শিবিরের আবহ আমাকে মুগ্ধ করেছে। ৬-৭ জন নেট বোলার হিসাবে ছিলাম। অন্যান্য ক্রিকেটারদের মতোই মনে করা হতো আমাদের। কখনও বুঝতে পারিনি যে, আমি নেট বোলার। ২টি প্র্যাক্টিস ম্যাচে আমাকে খেলিয়েছিলেন কোচ রিকি পন্টিং। আমার বোলিং ওঁর পছন্দ হয়েছিল। নেট বোলার বলে খাটিয়ে নেব, এরকম মানসিকতা কারও ছিল না। এমনকী, কখনও ব্যথা লাগলে বিশ্রাম পেতাম। একদিন ক্লান্ত লাগছিল। পন্টিং স্যারকে বলায় ২ দিনের বিশ্রাম দিয়েছিলেন। জানতাম যে, দল সব সময় সকলের পাশে আছে। দারুণ পরিবেশ।'
নিজে নিলাম দেখেননি। খবর পেলেন কীভাবে? মুকেশ বলছেন, 'হাওড়ার এক বন্ধু ফোন করে বলল, কী করছিস। তারপরই বলল, টিভি খোল। তখনই জানতে পারলাম। তারপর বাড়ির সকলকে জানালাম। সকলেই ভীষণ খুশি।' বিহারের বাড়িতে মা, দাদা-বৌদি, ভাইপো-ভাইঝিরা সকলে অভিনন্দন জানিয়েছেন ফোনেই।
তবে আনন্দের দিনেও বাবার জন্য মন খারাপ মুকেশের। বাবা প্রয়াত হয়েছেন। মুকেশ আবেগ মেশানো গলায় বলছেন, 'এখন হয়তো একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছি। তবে রাতে যখন একা খেতে বসব, আমার চোখে জল আসবেই। বাবা আজীবন কষ্ট করেছেন। আজকের দিনটা দেখে যেতে পারলেন না। বাবার স্বপ্নপূরণ হল।'
সৌরভকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছেন মুকেশ। বলছেন, 'সৌরভ স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ। ভিশন ২০২০ প্রকল্প না হলে আমি এই জায়গায় আসতাম না। এবার দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেল। ভাল খেলে সকলের আস্থার মর্যাদা দিতে হবে।'
আরও পড়ুন: ধোনির গড় থেকে ক্রিকেটার তুলে নিলামে ব্যাটিং শুরু কেকেআরের