মুম্বই: আইপিএলে (IPL) হারের হ্যাটট্রিক হয়ে গেল চেন্নাই সুপার কিংসের। তাদের হারিয়ে দিল পাঞ্জাব কিংস। উমেশ যাদবের প্রত্যাবর্তনের নেপথ্যে কী, জানালেন ব্যক্তিগত কোচ। আন্দ্রে রাসেলকে ওপরের দিকে ব্যাট করতে পাঠাবে কেকেআর? প্যাট কামিন্সকে পাওয়া যাবে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে? আইপিএলের সারাদিনের সব খবর এক ঝলকে।


জাডেজাদের আঁধার কাটল না


আইপিএল (IPL) শুরুর আগে বললে হয়তো অনেকে বিশ্বাসই করতেন না। গতবারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংস (CSK) টানা তিন ম্যাচে হেরে গেল। রবিবার রবীন্দ্র জাডেজা-মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের ৫৪ রানে হারিয়ে দিল পাঞ্জাব কিংস।


ম্যাচের প্রথমার্ধে যেন আদর্শ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের চিত্রনাট্য। ম্যাচের রাশ পেন্ডুলামের মতো একবার যাচ্ছিল চেন্নাই সুপার কিংসের (CSK) দিকে, তো আরেকবার পাঞ্জাব কিংসের (PBKS) দিকে।


শুরুতেই চেন্নাই বোলারদের দাপট। মাঝে লিয়াম লিভিংস্টোনের (Liam Livingstone) ব্যাটের ঝড়। শেষ লগ্নে সিএসকে বোলারদের প্রত্যাঘাত। চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যাট করে পাঞ্জাব তুলেছিল ১৮০/৮। টুর্নামেন্টে প্রথম জয়ের জন্য গতবারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাইয়ের সামনে লক্ষ্য ছিল ১৮১ রানের। কিন্তু রান তাড়া করতে নেমে কার্যত আত্মসমর্পণ করে বসল সিএসকে। মাত্র ১২৬ রানে অল আউট হয়ে গেল চারবারের চ্যাম্পিয়নরা। ব্যাট হাতে কিছুটা লড়াই করলেন শিবম দুবে। ৩০ বলে ৫৭ করেন তিনি। ধোনি ২৮ বলে ২৩ রানে আউট হন। পাঞ্জাব বোলারদের মধ্যে রাহুল চাহার ২৫ রানে তিন উইকেট নেন। অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা বৈভব অরোরা ২১ রানে ২ উইকেট নেন। ২৫ রানে ২ উইকেট লিভিংস্টোনের। তিনিই ম্যাচের সেরা হয়েছেন।


উমেশের বাঙালি গুরু


নাগপুরে বিদর্ভ ক্রিকেট সংস্থার (VCA) পেস বোলিং অ্যাকাডেমিতে পেটানো চেহারার কিশোরকে দেখেই মনে ধরে গিয়েছিল সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Subroto Banerjee)। জাতীয় দলের প্রাক্তন পেসার বুঝে গিয়েছিলেন, এ ছেলে লম্বা দৌড়ের ঘোড়া। পরের কয়েক বছর ধরে চলল ঘষামাজা। জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক ঘটালেন তরুণ ফাস্টবোলার। তাঁর বলের গতিতে মুগ্ধ হলেন সকলে।


কিন্তু টেস্টে প্রভাব ফেললেও সেদিনের সেই তরুণ পেসার উমেশ যাদব (Umesh Yadav) সীমিত ওভারের ক্রিকেটে যেন কিছুটা বর্ণহীন ছিলেন। লাল বলে গতি ও স্যুইংয়ের ভেল্কি দেখালেও সাদা বলে ততটা কার্যকরী হয়ে উঠতে পারছিলেন না। ফের শুরু বাঙালি কোচের ক্লাস। যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে এবারের আইপিএলে (IPL)। আগুনে গতি আর চকিত স্যুইংয়ের যুগলবন্দিতে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছেন বিদর্ভের পেসার। লাগাতার ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারেরও বেশি গতিতে বল করছেন। ৩ ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে আইপিএলে পার্পল ক্যাপের দৌড়ে শীর্ষে উমেশ। যা দেখে তৃপ্ত সুব্রত।


একসময় বাংলার হয়ে খেলা পেসার নাগপুর থেকে ফোনে এবিপি লাইভকে বললেন, 'অভিজ্ঞতা ওর বিরাট অস্ত্র। ১০-১২ বছর ধরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলছে। কোন ব্যাটারকে কীভাবে বল করতে হবে, স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়ে গিয়েছে।' তবে সুব্রতর কথায়, 'ওকে আরও সুযোগ দিতে হবে। ও চ্যাম্পিয়ন বোলার। আরও ধারাবাহিকভাবে খেলাতে হবে। জাতীয় দলে এক বছর খেলছে তো পরের বছর বাইরে থাকছে। উইকেট নিয়েও বাদ পড়েছে। অন্যান্য়দের ক্ষেত্রে সেটা হয় না। উমেশের ক্ষেত্রেই হয়। অধিনায়ক যদি ঠিকমতো সামলাতে পারে, উমেশ নিজেকে নিংড়ে দেবে।' যোগ করছেন, 'যে কোনও পেশাতেই বাদ পড়ে ফেরার পর ফের প্রতিষ্ঠিত হওয়া সহজ নয়। ও ফাস্টবোলিং করে। বাদ পড়লে চাপ বাড়ে। অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। সেটা মাথায় থাকলে পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়ে। ওকে যদি বলা হয়, ভাই তুই বল কর। আর কিছু ভাবতে হবে না, তাহলে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।'


কামিন্স-প্রাপ্তি


তিনি আগেও কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR) হয়ে খেলেছেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন নাইটদের বোলিং বিভাগকে। এবারও নিলাম থেকে ৭.২৫ কোটি টাকায় তাঁকে কিনেছিল শাহরুখ খান-জুহি চাওলার দল।


কে জানত যে, সেই প্যাট কামিন্স (Pat Cummins) নাইট শিবিরে পৌঁছে যাওয়ার পর চিন্তা বাড়বে কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালাম (Brendon McCullum), মেন্টর ডেভিড হাসি, অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ারদের (Shreyas Iyer)!


পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজ খেলছিলেন কামিন্স। দীর্ঘদিন পর পাকিস্তান সফরে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সেই সিরিজে খেলছিলেন বলে আইপিএলের শুরুর দিকে ছিলেন না কামিন্স, অ্যারন ফিঞ্চরা। কিন্তু পাকিস্তান সিরিজ শেষ হতেই মুম্বইয়ে পৌঁছে কেকেআর শিবিরে যোগ দিয়েছেন কামিন্স। তিনদিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন পর্ব কাটাচ্ছেন। বুধবার মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে নামবে কেকেআর। সেই ম্য়াচে কি পাওয়া যাবে অজি স্পিডস্টারকে?


রবিবার এবিপি লাইভের প্রশ্নে কেকেআরের কোচ ম্যাকালাম বলেন, 'প্যাট কামিন্সকে পাওয়া যাবে। আমাদের কাছে সেটা দারুণ খবর। ও এমন একজন যে, আমাদের দলের পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত। সহজে মানিয়ে নিতে পারে। দারুণ মানুষ। আমাদের দলে বরাবরই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারেরা ভাল খেলেছে। আমাদের এবারের দলেও বেশ কয়েকজন অজি ক্রিকেটার রয়েছে।'


মাসল রাসেল


ব্যাট হাতে ঘাতক। শক্তপোক্ত চেহারায় এতই জোরে বল মারেন যে, তাঁর নামকরণই হয়ে গিয়েছে 'মাসল রাসেল'। আর নিজের মেজাজে থাকলে সেই আন্দ্রে রাসেল (Andre Russell) কী করতে পারেন, কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR) শেষ ম্যাচে তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন পাঞ্জাব কিংসের (PBKS) ক্রিকেটারেরা। সেই ম্যাচে ৩১ বলে অপরাজিত ৭০ রান করেছিলেন ক্যারিবিয়ান তারকা। স্ট্রাইক রেট? ২২৫.৮।


ব্য়াটিং অর্ডারের ছয় নম্বরে নেমে রাসেলের আগ্রাসী ইনিংস দেখার পর থেকে কেকেআর ভক্তরা দাবি তুলছেন, আরও ওপরের দিকে ব্যাট করতে নামানো হোক ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডারকে। রাসেল নিজেও প্রত্যেক মরসুমে একাধিকবার বলেছেন যে, তিনি ওপরের দিকে ব্যাট করতে চান। এমনকী, দীনেশ কার্তিক অধিনায়ক থাকাকালীন বিস্তর জলঘোলাও হয়েছিল যে, কেন সাত নম্বরে ব্যাট করতে নামানো হচ্ছে রাসেলকে। যেখানে ৩০-৩৫ বল খেলার সুযোগ পেলে ম্যাচের রং বদলে দিতে পারেন রাসেল, সেখানে কেন তাঁকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না, তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে।


পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে ফের বিধ্বংসী ব্যাটিং করার পর কি ওপরের দিকে নামানো হবে রাসেলকে? রবিবার কেকেআরের কোচ ব্রেন্ডন ম্য়াকালামের (Brendon McCullum) কাছে জানতে চেয়েছিল এবিপি লাইভ। ম্যাকালাম অবশ্য আবেগে ভেসে যেতে নারাজ। বরং জোর দিচ্ছেন অঙ্কে। বলছেন, 'আমরা ওকে অন্যভাবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছি। ওর শক্তিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। ও ম্যাচউইনার। আমাদের দলে আরও কয়েকজন এমন খেলোয়াড় রয়েছে যারা ওকে সাহায্য করতে পারে। এখনও পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত (পড়ুন রাসেলকে পরে ব্যাট করতে নামানো) মতোই এগোচ্ছি। যদি দেখা যায় তাতে কাজ হচ্ছে না তখন রাসেলকে নিয়ে অন্য পরিকল্পনা করতে হবে। আশা করছি আমাদের পরিকল্পনা কাজে দেবে। ও কোথায় ব্যাট করে স্বস্তি পাচ্ছে দেখতে হবে।'