কলকাতা: আইপিএলের (IPL) জন্মলগ্ন থেকে টানা ১৫ বছর খেলে চলেছেন তিনি। কিন্তু এবারের টুর্নামেন্টটা তাঁর কাছে সম্পূর্ণ আলাদা। আইপিএলের আগের কয়েক সপ্তাহ যে তাঁর জীবনে অকাল কালবৈশাখী বয়ে গিয়েছে!


পারফর্ম করেও জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া। টিম ইন্ডিয়ার (Team India) হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের (Rahul Dravid) সাফ বলে দেওয়া যে, আমরা তোমাকে নিয়ে আর ভাবছি না। ভবিষ্যতের উইকেটকিপার তৈরিতে জোর দিতে চাই। নিজের কেরিয়ার নিয়ে তুমি কিছু ভাবতে চাইলে স্বাগত। যেন বকলমে বলে দেওয়া, এবার অবসর নাও হে! সেই সঙ্গে জনৈক সাংবাদিকের হুমকি। এমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে, শুরুর দিন থেকে নীরবে তলোয়ার চালিয়ে যাওয়া যোদ্ধা কেরিয়ারের সায়াহ্নে এসে হা রে রে রে করে ঝাঁপিয়ে না পড়লেও, অন্তত ক্ষত্রিয়ের হুঙ্কার শোনাতে বাধ্য হয়েছিলেন।


দেওয়াল লিখনটা পড়তে পারছিলেন ঋদ্ধিমান সাহা (Wriddhiman Saha)। তবু, লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে পিছু হঠেননি। আইপিএলের নতুন দল গুজরাত টাইটান্স (Gujarat Titans) তাঁকে প্রথম পাঁচ ম্যাচে খেলায়নি। চোয়াল শক্ত হয়েছে হয়তো। কিন্তু নিভৃতে আরও জোরাল শপথ নিয়েছেন। ঘুরে দাঁড়ানোর। ঘুরে দাঁড়িয়েওছেন। আইপিএলে গুজরাতের শেষ পাঁচ ম্যাচে সুযোগ পেয়েছেন। উইকেটের পিছনে ভরসা তো দিয়েছেনই, ব্যাট হাতেও দলের সম্পদ হয়ে উঠেছেন বঙ্গ ক্রিকেটের পাপালি। ইনিংস ওপেন করে ঝোড়ো হাফসেঞ্চুরি করেছেন। দলের বড় ইনিংসের ভিত তৈরি করে দিচ্ছেন।


যাবতীয় ঝড়-ঝাপ্টার পর কতটা কঠিন ছিল এবারের আইপিএলে মাঠে নেমে নিজেকে প্রমাণ করা? বুধবার বিকেলে মুম্বই থেকে জুম কলে এবিপি লাইভের প্রশ্নে ঋদ্ধিমান বললেন, 'কোনও চ্যালেঞ্জের কথা ভেবে নামিনি। অফিস ম্যাচ হোক বা ক্লাব ম্যাচ, বাংলা দল হোক বা টিম ইন্ডিয়া, আমি কখনও চাপ নিয়ে মাঠে নামি না। আমার মনে হয় চাপ নিয়ে মাঠে নামলে পারফর্ম করা বা নিজের সেরাটা মেলে ধরা কঠিন হয়ে যায়। আমি ক্রিকেট মাঠে উপভোগ করি। শুরুতে সুযোগ হয়তো পাইনি। পরে যখন সুযোগ পেলাম, সেটাই কাজে লাগাতে চেয়েছি। আমি জানি কী করতে পারি। নিজের দক্ষতা অনুযায়ী খেলতে পারলে ভাল লাগে।'


গুজরাত টাইটান্সের প্রথম পাঁচ ম্যাচে সুযোগ পাননি। ঋদ্ধিমানের পরিস্থিতিতে পড়লে যে কারও মুষড়ে পড়ার কথা। এ যেন নিজেকে প্রমাণ করতে চাওয়া বক্সারকে রিং থেকে দূরে রাখা। বা টেনিস গ্রহে পুরনো ঔজ্জ্বল্যে মরচে পড়েনি প্রমাণ করতে মরিয়া তারকাকে কোর্টে প্রবেশ করতে না দেওয়া। কীভাবে উদ্বুদ্ধ করতেন নিজেকে? ঋদ্ধিমান বলছেন, 'প্রথম একাদশে কারা খেলবে, তা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। পিচ আর পরিবেশ-পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে টিম কম্বিনেশন ঠিক হয়। আমি হয়তো শুরুর দিকে খেলিনি। ম্যাথু ওয়েড খেলেছে। তখন হয়তো ওটাই সেরা দল মনে হয়েছে। পরে পরিবর্তন হয়। সকলের সম্মিলিত লক্ষ্য হল ম্যাচ জেতা। আমরা ১০ ম্যাচের মধ্যে আটটিতে জিতে শীর্ষে রয়েছি। এইটাই ধরে রাখতে হবে। শুরুর দিকে সুযোগ পাইনি। তারপর সুযোগ পেলেও প্রথম ২-১টি ম্যাচে ভাল পারফর্ম করতে পারিনি। তারপর হাফসেঞ্চুরি করেছি। শেষ দুটো ম্যাচে রান করে দলের হয়ে অবদান রেখেছি। তবে ধারাবাহিকভাবে রান করে যেতে হবে। দলকে ম্যাচ জেতাতে হবে। সেটা পারলে তবেই তৃপ্তি পাব।'


এবারের আইপিএলে গুজরাত টাইটান্সের তুরুপের তাস রাহুল তেওয়াটিয়া ও রশিদ খান জুটি। দুজনে মিলে অবিশ্বাস্য সমস্ত ইনিংস খেলে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জেতাচ্ছেন গুজরাতকে। 'শুধু রাহুল বা রশিদই নয়, ডেভিড মিলারও লোয়ার মিডল অর্ডারে দারুণ সব ইনিংস খেলছে। ম্যাচ জেতাচ্ছে। ওদের ফর্ম টপ অর্ডারের ওপর থেকে চাপ অনেকটাই কমিয়ে নিচ্ছে। রশিদ খান বা ডেভিড মিলার কেমন খেলে সেটা বিশ্বক্রিকেটে সকলেই জানেন। তবে রাহুল তেওয়াটিয়াও অনবদ্য। গত কয়েক বছর ধরেই দুর্ধর্ষ ফর্মে। ওর জন্য ১৭০-১৮০ রান তাড়া করেও বেশ কয়েকটি ম্যাচ জিতেছি,' বলছিলেন ঋদ্ধি।


আর হার্দিক পাণ্ড্য? তাঁর সামনেও তো অগ্নিপরীক্ষা। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া। তার ওপর নতুন ভূমিকা। অধিনায়কত্বের গুরুভার। সব মিলিয়ে কেমন দেখছেন হার্দিককে? ঋদ্ধিমান বলছেন, 'হার্দিক অধিনায়ক হিসাবে ভীষণ খোলা মনের। সকলের সঙ্গে কথা বলে। দলের সকলে নিজের ভূমিকা জানে। কখন কে কী করবে, কোন বোলার কীরকম ফিল্ড সেট নিয়ে বল করবে, সবটাই পরিষ্কার করে দিচ্ছে হার্দিক। ক্যাপ্টেন, কোচ ও ম্যানেজমেন্ট সকলের সঙ্গে কথা বলছে বলেই দলের ভেতরের আবহটা চমৎকার। মাঠের পারফরম্যান্সে যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।'


নতুন দলের হয়ে আইপিএল ট্রফি জিতেই হয়তো নিজের ভেতর জমতে থাকা ক্ষোভ আর অব্যক্ত যন্ত্রণার উপশম চান বাংলার তারকা।


আরও পড়ুন: ঋদ্ধিমানকে হুমকি, সাংবাদিককে ২ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করল সৌরভের বোর্ড