কলকাতা: লিগের শুরুটা জয় দিয়ে করতে না পারলেও সমর্থকদের পুরোপুরি হতাশ করেনি ইস্টবেঙ্গল এফসি। জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচ গোলশূন্য ড্র রেখে মাঠ ছাড়ে তারা। কিন্তু শতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের সমর্থকেরা জয় ছাড়া কোনও ফলকে ইতিবাচক বলে মনে করেন না। অথচ সেই ক্লাবেরই আইএসএলে ঘরের মাঠে রেকর্ড খুবই খারাপ। চলতি লিগের শুরুটা ঘরের মাঠে করলেও জিততে না পারার সেই ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণই ছিল সে দিন। 


শনিবার আবার একটা ঘরের ম্যাচ। এ বার প্রতিপক্ষ হায়দরাবাদ এফসি। যারা গত দুই মরশুম ধরে দ্বিতীয় সেরার জায়গায় থেকে লিগ শেষ করেছে। ২০২১-২২ মরশুমে তারা নক আউট চ্যাম্পিয়নও হয়। কিন্তু এ বার তারা দল ঢেলে সাজিয়েছে। কথায় বলে চেনা শত্রুর চেয়ে অচেনা শত্রু অনেক বেশি বিপজ্জনক। তাই এই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল ফের হোঁচট খাবে, না কি জয়ের পথে ফিরবে, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। 


হায়দরাবাদের এটাই প্রথম ম্যাচ। গোয়া এফসি-র বিরুদ্ধে তাদের আইএসএল শুরু করার কথা থাকলেও সেই ম্যাচ পিছিয়েছে। ফলে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে এই ম্যাচ দিয়েই অভিযান শুরু করছে হায়দরাবাদ এফসি, সারা লিগে একমাত্র যে দল একজন ভারতীয় কোচের হাতে তৈরি হয়েছে। থাঙবই সিংতোর তত্ত্বাবধানে তৈরি এই দলটি সপ্তাহ দুয়েক আগে কলকাতায় এসে প্রস্তুতি ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে গিয়েছে। যদিও সেই দলের অনেকেই হয়তো এই ম্যাচে নেই। আবার সেই ম্যাচে ছিলেন না, এমন অনেকেই এই ম্যাচে খেলবেন। তবু দুই দল একে অপরকে কিছুটা হলেও পরখ করে নিয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা তাদের কতটা কাজে লাগে, তা শনিবারের ম্যাচেই বোঝা যাবে।  


দুই শিবিরের খবর  


ইস্টবেঙ্গল এফসি: লাল-হলুদ বাহিনীর নতুন স্প্যানিশ কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত দলে যোগ দিয়ে বেশ কয়েকজন তারকা ফুটবলারকে দলে নিয়ে আসেন, যাঁদের আইএসএলে অভিজ্ঞতা ও সাফল্য দুইই আছে। স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড হাভিয়ে সিভেরিও ও সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার সল ক্রেসপোর সঙ্গে হায়দরাবাদ এফসি থেকে আসা স্প্যানিশ মিডফিল্ডার বোরহা হেরেরা গঞ্জালেস এসেছেন তাঁর দলে। যোগ দেন আর এক স্প্যানিশ ডিফেন্ডার হোসে পার্দো। এ ছাড়া গত মরশুমের দলে থাকা বিদেশি স্ট্রাইকার ক্লেটন সিলভা তো এ বারেও আছেন।  


এঁদের সঙ্গে নির্ভরযোগ্য উইঙ্গার নাওরেম মহেশ সিং, সিনিয়র ডিফেন্ডার হরমনজ্যোৎ সিং খাবরা, মান্দার রাও দেশাই ও রাইট ব্যাক এডুইন ভন্সপল, ওডিশা এফসি থেকে আসা উইঙ্গার নন্দকুমার শেখর, কেরালা ব্লাস্টার্স থেকে আসা ডিফেন্ডার নিশু কুমার ও পাঞ্জাবের গোলকিপার প্রভসুখন গিলও রয়েছেন দলে। একাধিক জুনিয়র ফুটবলার, যেমন, অনূর্ধ্ব ১৭ ভারতীয় দলের দুই সদস্য ভানলাপেকা গুইতে ও গুনরাজ সিং গ্রেওয়াল, প্রভসুখনের ভাই ডিফেন্ডার গুরসিমরাত গিল ও অজয় ছেত্রীও রয়েছেন কুয়দ্রাতের বাহিনীতে। মহেশের সঙ্গে ২০২৭ পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির ঘোষণা ইস্টবেঙ্গল করেছে সম্প্রতি। এই ঘোষণায় আরও উজ্জীবিত ফুটবল খেলছেন তিনি। এই খেলোয়াড়রা তিন মরশুম পরে ডুরান্ড কাপে রানার্স আপ হয়ে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবকে সাফল্যের মুখ দেখালেও আইএসএএলের শুরুতে গোছানো ফুটবল খেলতে পারেননি। 


হায়দরাবাদ এফসি: আইএসএলের অন্যতম ধারাবাহিক ও সফল দলটি এ বার তাদের বাহিনী ঢেলে সাজিয়েছে। কোচ মানোলো মার্কেজের সঙ্গে দল ছেড়েছেন একাধিক তারকা। হাভিয়ে সিভেরিও, বোরহা হেরেরা যোগ দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলে। এ ছাড়া আকাশ মিশ্র, হালিচরণ নার্জারি, জোয়েল চিয়ানিজ, ওনাইন্দিয়া, গোলমেশিন বার্থোলোমিউ ওগবেচে কেউই এ বারের দলে নেই। অথচ এঁরাই গত দুই মরশুমে ক্লাবকে সাফল্য এনে দিয়েছিলেন। তারকা মিডফিল্ডার জোয়াও ভিক্টর অবশ্য রয়েছেন এই দলে। যোগ দিয়েছেন মেক্সিকান ডিফেন্ডার অসওয়াল্দো এলানিস, ফিনল্যান্ডের জুহানা পেনানেন, ব্রাজিলের ফরোয়ার্ড ফিলিপ দা সিলভা আমোরিম, কোস্তা রিকার ফরোয়ার্ড জোনাথন মোয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার ফরোয়ার্ড জোসেফ পল নোয়েলস। ভারতীয়দের মধ্যে এ মরশুমে যোগ দিয়েছেন ডিফেন্ডার বিগ্নেশ দক্ষিণামূর্তি এবং দুই মিডফিল্ডার মাকান চোথে ও লালচানহিমা সাইলো। এ ছাড়া গোলকিপার কাট্টিমণি, ডিফেন্ডার চিঙলেনসানা সিং, নিখিল পূজারি, নিম দোরজি,  মিডফিল্ডার আব্দুল রাবি, মহম্মদ ইয়াসিরও রয়েছেন এই দলে। নতুন দল আগের কয়েক মরশুমের মতো অতটা ধারালো কি না, তার ইঙ্গিত পাওয়া যাবে শনিবারের ম্যাচে।