কলকাতা: রবিবার কলকাতার যুবভারতী স্টেডিয়ামে মহারণ। মুখোমুখি দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গল এফসি ও মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (East Bengal FC vs Mohun Bagan SG)। কে জিতবে রবিবারের ডার্বি, তা নিয়ে চায়ের আড্ডায় তুফান উঠছে। তিনি, ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের কিংবদন্তি ঝুলন গোস্বামী কোন দলকে সমর্থন করবেন?
নিজেকে লাল-হলুদ সমর্থক বলতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেন না ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি ঝুলন গোস্বামী। দু’দশকের ক্রিকেট জীবনে দেশের হয়ে যিনি ২৮৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন, মহিলাদের ক্রিকেটে সারা সেই ঝুলনের নাম বিশ্বে সর্বকালের সেরাদের তালিকায় অবশ্যই থাকবে। কারণ, মেয়েদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর মতো ৩৫৫ উইকেট আর কেউই নিতে পারেননি।
ক্রিকেট থেকে অবসরের পর ঝুলন মেন্টর ও বোলিং কোচ হিসেবে যোগ দেন ডব্লিউপিএলের দল মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে। ২০২৩-এর উইমেন্স প্রিমিয়ার লিগে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পিছনে তাঁর অবদানও ছিল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সেই ঝুলন আইএসএলের ওয়েবসাইটে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শুনিয়েছেন ফুটবল, ইস্টবেঙ্গল ও ডার্বির প্রতি তাঁর অমোঘ আকর্ষণের কথা।
ফুটবল দেখেন নিয়মিত। কলকাতা ডার্বি নিয়ে তাঁর আগ্রহ যথেষ্ট। একটা সময়ে স্টেডিয়ামে গিয়ে ইস্টবেঙ্গলের জন্য গলা ফাটাতেন। ঝুলন বলছেন, 'ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান একটা অন্য স্তরের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিতা। যদি কেউ এই ম্যাচ দেখতে স্টেডিয়ামে গিয়ে না থাকে, তা হলে সে বুঝতেই পারবে না, সেখানে কী কী হয়। এর বর্ণনা দেওয়াও কঠিন। এর ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না। আমরা অন্যান্য দেশের ডার্বি নিয়ে কথা বলি। কিন্তু কলকাতা ডার্বি অনন্য। আমি যতগুলো ডার্বি দেখেছি, তার মধ্যে এটাই সেরা।'
ক্রিকেট জীবনে যখন বাংলার হয়ে খেলতেন, তখন ড্রেসিংরুমে সতীর্থদের সঙ্গে বসে ডার্বি দেখার মজার অভিজ্ঞতার কথাও শুনিয়েছেন প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়িকা। বলেন, 'বাংলার ড্রেসিংরুমে কখনও সবাই একসঙ্গে বসে ডার্বি দেখতে চাইতাম না আমরা। বাংলা দলে অনেকেই মোহনবাগান সমর্থক ছিল। যখনই ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচ দেখতে টিভির সামনে বসতাম আমরা, তখনই নিজেদের মধ্যে অনেক মারপিট করেছি। সে জন্যই ড্রেসিংরুমে একসঙ্গে বসে ডার্বি দেখতে চাইতাম না আমরা। এ এক দারুণ ব্যাপার। সমর্থকদের মধ্যে এমন আবেগ আর কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না।'
পরিবারের কাছ থেকেই যে তাঁর মধ্যে ইস্টবেঙ্গল-প্রীতি এসেছে, তা অকপটে স্বীকার করেন ঝুলন। এই প্রসঙ্গে বলেছেন, 'আমাদের পরিবারের সবাই ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। তাই আমিও ছোট থেকে ইস্টবেঙ্গলকেই সমর্থন করে এসেছি। আমার সবচেয়ে প্রিয় ডার্বি-মুহূর্ত ১৯৯৭-এর ফেডারেশন কাপ ডার্বিতে বাইচুং ভুটিয়ার হ্যাটট্রিক। সে দিন সল্টলেক স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে প্রায় দেড় লাখ মানুষ ছিল। ইস্টবেঙ্গল ম্যাচটা ৪-১-এ জিতেছিল। সেটাই আমার দেখা ডার্বির সেরা এবং সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত।'
তবে গত তিন মরশুমের মতো এ বারও যে ইস্টবেঙ্গল আইএসএল-এ খুব একটা ভাল জায়গায় নেই, সে জন্য তিনি দুঃখিত। নতুন বছর শুরু হওয়ার পর থেকে মোহনবাগান যে ভাবে এখনও ছ’টি ম্যাচের মধ্যে চারটিতে জয় পেয়ে ও দু’টিতে ড্র করে ১৪ পয়েন্ট অর্জন করেছে এবং সেই জায়গায় ইস্টবেঙ্গল আটটি ম্যাচের মধ্যে পাঁচটিতেই হেরেছে, সে জন্য আসন্ন ডার্বিতে সবুজ-মেরুন শিবিরকেই অনেকে এগিয়ে রাখতে চাইছে।
নতুন বছর শুরুর পর ইস্টবেঙ্গল আটটি ম্যাচ খেলে ফেললেও জিতেছে মাত্র দুটিতে, একটিতে ড্র করে তারা এবং পাঁচটি ম্যাচে হারে তারা। চলতি লিগে জেতার জায়গায় গিয়েও ১৬ পয়েন্ট খুইয়েছে তারা। ফলে লিগ টেবলের ন’নম্বরে রয়েছে তারা। এ মরশুমের আগে যোগ দেওয়া স্প্যানিশ কোচ কার্লস কুয়াদ্রাতের প্রশিক্ষণে দল আগের চেয়ে উন্নত পারফরম্যান্স দেখালেও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাদের ব্যর্থতাই তাদের ফের টেবলের নীচে নামিয়ে দিয়েছে।
তবে প্রাক্তন আইএসএল জয়ী কোচ কার্লস কুয়াদ্রাতকে আরও একটু সময় দেওয়া উচিত বলে মনে করেন ঝুলন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'শুধু এই মরশুমের পারফরম্যান্স দিয়ে কুয়াদ্রাতকে বিচার করা ঠিক নয়। আমার বিশ্বাস, আগামী মরশুমে ইস্টবেঙ্গল আরও ভাল খেলবে। আর কুয়াদ্রাত যদি কোচের পদে থাকেন, তা হলে উনি আরও নতুন প্রতিভাদের তুলে আনবেন এবং আগামী মরশুম আমরা দারুন ভাল ফল করব।'
বহু বছর পর ইস্টবেঙ্গলের সর্বভারতীয় ট্রফি জয়ের (কলিঙ্গ সুপার কাপ) প্রশংসা করে কিংবদন্তি ক্রিকেট তারকা বলেন, 'এক যুগ পরে আমরা একটা ট্রফি জিতেছি। ২০১২-য় ট্রেভর মর্গ্যানের প্রশিক্ষণে ফেডারেশন কাপ জিতেছিলাম আমরা। এ বার আমরা সুপার কাপ জিতলাম। আমরা খুশি ও রোমাঞ্চিত যে, আমরা আবার ট্রফি জেতা শুরু করেছি। অনেকদিন ধরেই এটা আমাদের প্রাপ্য ছিল।'
উইমেন্স প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যেও রবিবারের ডার্বিতে নজর থাকবে তাঁর। আসন্ন এই ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়দের ঝুলনের পরামর্শ ও শুভেচ্ছাবার্তা, 'মাঠে নেমে খেলাটা উপভোগ করো। জয় ইস্টবেঙ্গল!'
আরও পড়ুন: তাঁকে খেলানো নিয়ে কুম্বলে-কোহলির ঝগড়া! সেই ধর্মশালাতেই ভেল্কি কুলদীপের