কলকাতা: বুধবার ভালবাসার দিন। আর এদিনই সন্ধ্যায় ফতোরদার জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে যুযুধান মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan Super Giant) ও এফসি গোয়া (FC Goa)। কোনও পক্ষই যে পরস্পরের হাতে গোলাপ তুলে দেবে না বা কোনওরকম বন্ধুত্বপূর্ণ আবহাওয়ায় যে ম্যাচ হবে না, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। 


চলতি ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (ISL) টানা চারটি ম্যাচে জয়হীন থাকার পর গত ম্যাচেই জয়ে ফিরেছে গতবারের চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। সেই জয়হীন টানা চার ম্যাচের মধ্যে একটি ছিল এই এফসি গোয়ার বিরুদ্ধেই, ঘরের মাঠে। সেই ম্যাচে হোম টিমকে রীতিমতো হিমশিম খাইয়ে ৪-১ গোলে হারিয়ে ঘরে ফিরে বড় দিনের উৎসবে মেতে উঠেছিল এফসি গোয়া শিবির। 


এবার তাদের শহরে সেই মোহনবাগান এসজি, যারা সেদিনের সব সমস্যা মিটিয়ে নতুন কোচের তত্ত্বাবধানে গত শনিবার থেকেই ফের শুরু করেছে তাদের জয়যাত্রা। চলতি লিগের শুরুতে যেমন টানা পাঁচটি ম্যাচে জিতেছিল তারা, ফের তাদের সেই জায়গায় নিয়ে যেতে পারবেন কি না আন্তোনিও লোপেজ হাবাস, তার ইঙ্গিত বুধবারের এই ম্যাচেই পাওয়া যাবে।  


টানা সাতটি ম্যাচে অপরাজিত (ছটি জয় ও একটি ড্র) থাকার পর মুম্বই সিটি এফসি, এফসি গোয়া ও কেরল ব্লাস্টার্সের কাছে টানা তিন ম্যাচে হারে মোহনবাগান এসজি। এর পরে কলকাতা ডার্বিতেও ড্র। টানা চারটি ম্যাচে জয়হীন থাকার পর গত শনিবার হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে জয়ে ফিরে আসে তারা। লিগ টেবলে সবার নীচে থাকা হায়দরাবাদ এফসি-কে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে উঠে আসে চার নম্বরে। 


তরুণ দেশীয় ফুটবলারে ভরা হায়দরাবাদ এফসি-কে দুর্বল দল সবার নীচে থাকলেও শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মোহনবাগানকে যে কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় তারা, তার পরে তাদের দুর্বল মনে করাটা বোকামিই হবে। প্রথমার্ধে মোহনবাগান আধিপত্য বিস্তার করলেও তাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেন মহম্মদ রফি, আব্দুল রাবি-রা। কিন্তু খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতার অভাবই এ দিন তাঁদের গোল করার পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যার ফলে মোহনবাগানকে এ দিন কোনও বিপদে পড়তে হয়নি।


এফসি গোয়ার ক্ষেত্রে কিন্তু সে রকম হওয়ার কথা নয়। এ পর্যন্ত ১২টি ম্যাচে ১৯টি গোল করেছে তারা। কার্লোস মার্তিনেজ, নোয়া সাদাউই-র মতো সুযোগসন্ধানী স্কোরাররা রয়েছেন তাদের দলে। দলের ১৯টি গোলের মধ্যে এই দু’জনই ন’টি গোল করেছেন। তাই মোহনবাগানকে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে। প্রতিপক্ষের গোলের সামনে যে ভাবে খেই হারিয়ে ফেলে তারা, যে রকম সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে, সে সব এই ম্যাচে চললে, সাফল্যের সম্ভাবনা কম। 


এখন পর্যন্ত ১৩৬টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছে সবুজ-মেরুন বাহিনী। কিন্তু গোল করেছে ২৩টি। অর্থাৎ সুযোগকে গোলে পরিণত করার শতকরা হার মাত্র ১৭%, যা নামমাত্র বললেই চলে। যদিও এফসি গোয়ার চেয়ে মোহনবাগানের গোলের সংখ্যা বেশি। ১২ ম্যাচে তারা ২৩ গোল করেছে। এতগুলি গোল করলেও তারা হজম করেছে ১৬টি গোল। সেখানে এফসি গোয়া মাত্র ছ’টি গোল খেয়েছে। সবচেয়ে কম গোল খাওয়ার দিক থেকে এক নম্বরে রয়েছে তারা। 


এক ডজন ম্যাচে সাতটি ক্লিন শিট রয়েছে এফসি গোয়ার খাতায়, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। মোহনবাগান সেই তালিকায় সাত নম্বরে, মাত্র তিনটি ম্যাচে ক্লিন শিট। কিন্তু সে সব ভুলে এখন তাদের সামনের দিকে তাকানোর পালা। লিগ টেবলে এফসি গোয়ার চেয়ে পাঁচ পয়েন্টে পিছিয়ে রয়েছে মোহনবাগান। অর্থাৎ, এই ম্যাচে গতবারের হারের বদলা নিতে পারলে সবুজ-মেরুন শিবির তাদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলা শুরু করবে। কিন্তু সেটা সম্ভব কি না, এটাই তো সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। 


সবুজ-মেরুন শিবিরে একটা ভাল খবর এই ম্যাচে সাসপেনশন কাটিয়ে ফিরছেন আরমান্দো সাদিকু, লিস্টন কোলাসো ও দীপক টাঙরি। যাঁরা গত ম্যাচে ছিলেন না। সদ্য চোট সারিয়ে ফিরে আবার চোট পাওয়া আনোয়ার আলি-রও খেলার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কোচ হাবাস নিজেই। জনি কাউকো গত ম্যাচে আধ ঘণ্টার জন্য মাঠে নেমে বুঝিয়েছেন তিনি এই দলের একজন যোগ্য নেতা হয়ে উঠতে পারেন। মনবীর, লিস্টন, সহাল, টাঙরি, বিশাল, শুভাশিস বোসেরা জাতীয় শিবির থেকে ফিরে এসে দলকে ফের শক্তিশালী করে তুলেছেন। কিন্তু এখনও রক্ষণে ও প্রতিপক্ষের গোলের সামনে দুর্বলতা কাটেনি মোহনবাগানের খেলোয়াড়দের।


সবচেয়ে বিস্ময়কর পারফরম্যান্স জেসন কামিংসের। গত বিশ্বকাপ খেলে আসা স্ট্রাইকারের গোলের সামনে আত্মবিশ্বাস ও ক্ষিপ্রতার অভাব অবকা করার মতোই। তাঁর স্বদেশীয় দিমিত্রিয়স পেট্রাটস বরং অনেক ধারালো। কিন্তু প্রতিপক্ষের পেনাল্টি এরিয়ায় যে সঙ্গত দরকার তাঁর, তা পাচ্ছেন না দিমি। কিয়ান নাসিরি বরং অনেক ছটফটে ও গতিময়। মনবীর সিং গোলের সুযোগ তৈরি করছেন অনেক। পেট্রাটস যেখানে ২১টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন, সেখানে মনবীর ১৫টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন এ পর্যন্ত। 


দল হিসেবে গোলের সুযোগ তৈরির দিক থেকে এফসি গোয়ার (১৫৪) পরেই মোহনবাগান এসজি (১৩৬)। অর্থাৎ বুধবার সবচেয়ে বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করা দুই দলের দ্বৈরথ দেখা যাবে। স্বাভাবিক ভাবেই এই ম্যাচেও প্রচুর গোলের সুযোগ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু সুযোগকে কারা কত বেশি গোলে রূপান্তরিত করতে পারে, সেই পরিসংখ্যানই দুই দলের মধ্যে তফাৎ গড়ে দেবে, তৈরি করে দেবে এই ম্যাচের ফল। 


চলতি লিগে এখনও একটিও ম্যাচে হারের মুখ দেখেনি এফসি গোয়া। আটটি জয় ও চারটি ড্র নিয়ে তারা লিগ টেবলের দুই নম্বরে। গত শুক্রবার শীর্ষে থাকা ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে কঠিন ম্যাচে ১-১ ড্র করে তারা। দলের আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার কার্লোস মার্তিনেজ ও মার্কিন মিডফিল্ডার নোয়া সাদাউই এই দলের সবচেয়ে বিপজ্জনক দুই অ্যাটাকার। তাদের কড়া নজরে না রাখলে বিপদে পড়তে পারে মোহনবাগান। এই ম্যাচে গোলের সুযোগও বেশি পাবেন না পেট্রাটস, কামিংসরা। তাই হেলায় সুযোগ নষ্ট করলে সেই ভুল শোধরানোর সম্ভাবনাও কম। যেটুকু সুযোগ পাবেন, তা কাজে না লাগাতে পারলে তার মাশুল দিতে হতে পারে।  


(তথ্যসূত্র - আইএসএল মিডিয়া)


আরও পড়ুন: Sourav Ganguly: বাড়িতে না জানিয়ে ডোনার সঙ্গে রেজিস্ট্রি সেরেই শ্রীলঙ্কায় সৌরভ, বিয়ের খবর ফাঁস হয় কীভাবে?


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।