কলকাতা: ২০২৩-কে বিদায় জানানোর আগে মোহনবাগান সমর্থকেরা হতাশ হতে পারেন। কিন্তু ফেলে আসা বছরটার দিকে একবার ফিরে তাকালে বোধহয় অতটা হতাশ হবেন না। কারণ, ইন্ডিয়ান সুপার লিগে সবচেয়ে ভাল খবরটা তারা পেয়েছে এই বছরেই। নিশ্চয়ই কেউ ভুলে যাননি আইএসএল ২০২২-২৩ মরশুমে কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দিনটির কথা?
মনে করিয়ে দেওয়া যাক সেই দিনটার কথা। ম্যাচটা যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে হলে বোধহয় ৬০ হাজার মানুষের চিৎকারে চারদিকের বাড়িগুলির দেওয়ালে ফাটল ধরে যেত। সুদূর মারগাওয়ে পন্ডিত জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে কুড়ি হাজার মানুষের চিৎকারই যেরকম তুঙ্গে ওঠে, তাতেই বোঝা যায়, সে দিন গোয়ার স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে কত সবুজ-মেরুন সমর্থক ছিলেন।
স্মরণীয় সেই মুহূর্ত
আসলে মুহূর্তটাই ছিল সে রকম। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলায় ১৪ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন সবুজ-মেরুন বাহিনীর অস্ট্রেলীয় ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স পেট্রাটস। প্রথমার্ধের একেবারে শেষ মিনিটে পেনাল্টি থেকেই গোল শোধ করেন সুনীল ছেত্রী। ৭৮ মিনিটে কর্নারে হেড করে দলকে এগিয়ে দেন প্রাক্তন সবুজ-মেরুন তারকা রয় কৃষ্ণা। কিন্তু ৮৫ মিনিটের মাথায় ফের পেনাল্টি পায় মোহনবাগান ও তা থেকে ফের সমতা আনেন পেট্রাটস। ২-২ হওয়ার পরেও জয়সূচক গোলের একাধিক সুযোগ হাতছাড়া করে তারা।
অতিরিক্ত সময় গোলশূন্য থাকার পরে ম্যাচ পেনাল্টি শুট আউটে গড়ায়। মোহনবাগানের দিমিত্রিয়স পেট্রাটস, লিস্টন কোলাসো, কিয়ান নাসিরি ও মনবীর সিং একের পর এক গোল করে চলে যান। তাঁদের গোলকিপার গোল্ডেন গ্লাভজয়ী বিশাল কয়েথ প্রথমে বেঙ্গালুরুর ব্রুনো সিলভার শট আটকাতেই জয়ের উল্লাস শুরু হয় গ্যালারিতে। শেষে সুনীল ছেত্রীর দলের মিডফিল্ডার পাবলো পেরেজ বারের ওপর দিয়ে বল উড়িয়ে দিতেই প্রায় শব্দের বিষ্ফোরণ ঘটে জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে। এ রকম একটা কষ্টার্জিত অথচ অনিশ্চয়তায় ভরা সাফল্যের পর এ রকম প্রতিক্রিয়া হওয়াই স্বাভাবিক। আর বঙ্গ ফুটবলপ্রেমীরা যে ফুটবলের জন্য পাগল, সে তো সারা দুনিয়া জানে।
টানা দুই মরশুম অপেক্ষার পর কলকাতা তাদের প্রিয় দল এটিকে মোহনবাগানকে চ্যাম্পিয়ন হতে দেখে নেয় সেই দিনে, ১৮ মার্চ ২০২৩। তাই এই উল্লাস একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। ফতোরদা স্টেডিয়ামে শুধু নয়, সারা বাংলা, ভারত জুড়ে আনাচে কানাচে সর্বত্র সে দিন সবুজ-মেরুন বাহিনীর সাফল্য উদযাপন করেন এই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের সমর্থকেরা।
২০২৩-এ মোহনবাগান এসজি’র আইএসএল অভিযান: ম্যাচ- ২২, জয়- ১০, হার- ৬, ড্র- ৬, গোল- ৩০, প্রতিপক্ষের গোল- ২১, ওপেন প্লে থেকে গোল- ২৩, সেট পিস থেকে গোল- ৭, সেভ- ৫৩, ক্লিন শিট- ৯।
বছরের সেরা পাঁচ স্কোরার: দিমিত্রিয়স পেট্রাটস- ১০, জেসন কামিংস- ৪, আরমান্দো সাদিকু- ৩, কার্ল ম্যাকহিউ- ২, মনবীর সিং- ২, হুগো বুমৌস- ২।
সেরা নজির: ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ১৩টি ম্যাচে অপরাজিত (জয় ৯, ড্র ৪)।