সন্দীপ সরকার, কলকাতা: মাঠে হোক বা মাঠের বাইরে, তাঁরা হরিহর আত্মা। একসঙ্গে বাংলাকে ম্যাচ জিতিয়েছেন। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন। একই আবাসনে থাকেন। সপরিবার বেড়াতে যান একসঙ্গে।


শুনলে কে বলবে যে, মনোজ তিওয়ারি (Manoj Tiwary) ও অশোক ডিন্ডা (Ashok Dinda) রাজনীতির ময়দানে প্রবল প্রতিপক্ষ!


মনোজ তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক। রাজ্যের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। ডিন্ডা বিজেপির বিধায়ক। অথচ দুজনে একে অপরের বিরুদ্ধে এক শব্দও শরচ করেন না, এমনই বন্ধুত্বের রেশ।


মনোজের ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণার দিন আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছেন ডিন্ডা। বৃহস্পতিবার দুপুরে তখন বিধানসভা সরগরম। অথচ রাজনীতিক ডিন্ডা মনোজকে নিয়ে কথা বলার সময় সাবলীল। বিধানসভা থেকে ফোনে এবিপি লাইভকে বললেন, 'ক্রিকেট মাঠে, বিশেষ করে বাংলার হয়ে মনোজ তিওয়ারির অবদান দুর্দান্ত। ক্যাপ্টেন ছিল। বাংলাকে প্রচুর ম্যাচ জিতিয়েছি দুজনে মিলে। পরে ও রাজনীতিতে যোগ দিয়েছে। তবে তার ফাঁকেও চেষ্টা করেছিল ক্রিকেট খেলার। আরও ২ বছর খেলবে, বলেছিল। অবসরের সিদ্ধান্তে কিছুটা অবাকই হয়েছি।'


মাঠে মনোজ-ডিন্ডা থাকা মানেই বিপক্ষের রক্তচাপ বাড়বে। একজন ব্যাট হাতে বাংলা ক্রিকেটের সেরা পূজারি, তো অপরজন বল হাতে সেরা ম্যাচ উইনার। ডিন্ডা অবশ্য বলছেন, দলগত প্রয়াসেই আসত সাফল্য। বলছেন, 'মাঠে মনোজের অবদান ভোলার নয়। তবে আমরা সবাই মিলে জিততাম। কারও একার জন্য বলব না। কোচ-ফিজিও, ম্যানেজার থেকে শুরু করে ম্যাসিওর – সবার প্রচেষ্টায় সাফল্য আসত। তবে মনোজ থাকা মানে বড় স্কোর হবে জানতাম। বোলার হিসাবে বাড়তি ভরসাও পেতাম। বোর্ডে বড় রান মানে আরও আগ্রাসী বোলিং করতে পারব।' যোগ করলেন, 'আমাদের ওপর বাংলার ক্রিকেটপ্রেমী মানুষের প্রত্যাশা ছিল। পারফর্ম করতাম বলেই আস্থা ছিল। কারও জায়গা পড়ে থাকে না। মনোজের পরিবর্তেও কেউ না কেউ খেলবে। হয়তো ওর জায়গা কেউ নেবে। তবে বাংলা ক্রিকেট মনোজের অভাব টের পাবে।'


আপনার চোখে মনোজের সেরা ইনিংস কোনটা? ডিন্ডা একটুও না ভেবে বলছেন, 'মুম্বইয়ের সঙ্গে দুশো। ইডেনের সেই ম্যাচে অমল মুজুমদার থেকে শুরু করে রোহিত শর্মা, অজিঙ্ক রাহানে, ধবল কুলকার্নি, আবিষ্কা সালভি, রমেশ পওয়ার -  কে খেলেনি। প্রবল শক্তিশালী মুম্বই দল। তাদের বিরুদ্ধে ডাবল সেঞ্চুরি। সেই ম্যাচে আমিও পেয়েছিলাম ৫ উইকেট। দলীপ ট্রফিতে ওর সেঞ্চুরিও মনে পড়ছে।' ডিন্ডা আরও বললেন, 'ভাল প্লেয়াররা বড় দলের বিরুদ্ধে জ্বলে ওঠে। মনোজও তাই।  ভাল বোলিংয়ের বিরুদ্ধে রান করত। ভাল দল দেখলেই জ্বলে উঠত। তামিলনাড়ু, কর্নাটক, মুম্বই, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে ওর রেকর্ড দেখলেই বোঝা যাবে। বড় মঞ্চেই পারফরম্যান্স করতে হয়। মনোজের শৃঙ্খলা ছিল। চোট কাটিয়ে বারবার ফিরেছে।'


ঘরোয়া ক্রিকেটে মনোজ ও ডিন্ডার অভিষেক কার্যত একই সময়ে। ডিন্ডা বলছেন, 'পারস মামব্রে কোচ থাকাকালীন দুজনেরই অভিষেক। শুরুতে ওর লম্বা, স্ট্রেট চুল ছিল। আমার সঙ্গে শুরু থেকেই ভাল বন্ধুত্ব। মনোমালিন্যও হয়েছে। মিটেও গিয়েছে।'


অবসর নেওয়া বন্ধুকে কী বার্তা দেবেন? ডিন্ডা বলছেন, 'মনোজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি। পরিবারকে সময় দিক। ক্রিকেট মাঠকে মিস করবেই। আসলে আমাদের রক্তে ক্রিকেট। চা খাওয়ার নাম করেও ইডেনে আড্ডা দিতে চলে যাই এখনও। আশা করব ক্রিকেট ছাড়ার পরেও ওকে অন্য কোনও ভূমিকায় মাঠে দেখা যাবে।'


আরও পড়ুন: ABP Exclusive: আগের চেয়েও শক্তিশালী, সেরা ছন্দে বল করছি, ১ বছর পর ভারতীয় দলে ফিরে ফুটছেন প্রসিদ্ধ









https://t.me/abpanandaofficial