নয়াদিল্লি: ক্রিকেট কি শুধুই খেলা? হয়ত না। কোনও কোনও দেশের মানুষের কাছে ক্রিকেট মানে জীবন দর্শন। অদম্য লড়াইয়ে ইচ্ছাশক্তি। এক হয়ে ওঠার মঞ্চ। ঠিক যেমন আফগানিস্তান (Afganistan Cricket) শিবির। বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে যে দেশ ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত, সেই দেশই বিশ্বকাপের মঞ্চে ইতিহাস গড়ে ফেলেছে। গতবারের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে অঘটন ঘটিয়েছেন রশিদ, মুজিব, নবিরা। 


রবিবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল আফগানিস্তানে। রিখটার স্কেলে কম্পনের তীব্রতা ছিল ৬.৩। কম্পনের উৎসস্থল হেরাট শহর সংলগ্ন এলাকা। ভূগর্ভের ৬.৩ কিলোমিটার গভীর থেকে ছড়িয়ে পড়ে কম্পন। এখনও পর্যন্ত একজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০০ জন। কিন্তু কম্পনের তীব্রতার নিরিখে আরও হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে গত রবিবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬৯ রানে জয় ছিনিয়ে নেয় আফগানিস্তান। ম্যাচের জয়ের পরই একটি ভিডিও ক্লিপস ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যেখানে দেখা যায় আফগানিস্তানের তারকা স্পিনার মুজিব উর রহমনকে জড়়িয়ে ধরে কাঁদছেন এই খুদে।  


নিজের সোশ্য়াল মিডিয়ায় কয়েকটি ক্লিপিংস ও ছবি পোস্ট করেছেন মুজিব। সেখানে তিনি লেখেন, ''এই ছোট্ট ছেলেটি আফগানিস্তানি নয়, ভারতীয়। ওর সঙ্গে দেখা করে দারুণ লাগল। ক্রিকেট শুধুমাত্র খেলা নয়, ক্রিকেট এক আবেগের নাম। সমস্ত দর্শক ও সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের জন্য মাঠে এসে গলা ফাটনোর জন্য ও আমাদের পাশে থাকার জন্য়। এভাবেই পাশে থাকবেন সবাই। অনেক অনেক ভালবাসা দিল্লির মানুষদের।''


মাঠের সাইডলাইনের একেবারে ধারেই ছিল খুদে দর্শকের আসন। খেলা শেষ হওয়ার পর ম্যাচের সেরা মুজিব উর রহমান কাছাকাছি আসতেই তাঁকে ছোঁয়ার চেষ্টা করে ছেলেটি। তখন আফগানিস্তানের ক্রিকেটারেরা ইংল্যান্ডকে হারানোর আনন্দে মাতোয়ারা। কিন্তু খুদে সমর্থককে উপেক্ষা করতে পারেননি মুজিব। তাকে মাঠে ডেকে নেন আফগান অলরাউন্ডার। কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরেন। খানিক ক্ষণ কথা বলে খুদে ক্রিকেটারকে শান্ত করেন মুজিব। আফগান অলরাউন্ডার বোঝানোর পর থামে তার কান্না। 


এদিকে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয় নিজের দেশের ভূমিকম্প বিধ্বস্ত মানুষদের উৎসর্গ করতে চান রাশিদ খান। তারকা আফগান লেগি ম্যাচের পর বলেছিলেন, ''এটা আমাদের কাছে বিশাল জয়। এই ধরনের পারফরম্যান্স আমাদের বিশ্বাস জোগাবে। বিশ্বকাপের বাকি ম্যাচগুলির জন্য শক্তি দেবে। ক্রিকেট এমনই একটা খেলা, যা আমাদের দেশে সকলকেই আনন্দ দেয়। ইংল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে এই ঐতিহাসিক জয়ও আমার দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের আনন্দ দেবে। সম্প্রতি ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত আমার দেশ। তিন হাজারের বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে। অনেক ঘর-বাড়ি তছনছ হয়ে গিয়েছে। এই জয়টা হয়তো কারও মুখে একটু হাসি ফোটাবে। হয়তো সেই ভয়ংকর দিনের কথা কিছুক্ষণের জন্য ভুলে থাকতে পারবে।''