কলকাতা: দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে চলতি টেস্ট সিরিজে ব্যাট হাতে স্বপ্নের দৌড় চলছে রোহিত শর্মার। টেস্ট কেরিয়ারে প্রথমবার খেলছেন ওপেনার হিসাবে। আর নতুন ভূমিকায় নেমেই বাজিমাত। ৪ ইনিংসে দুটি সেঞ্চুরি ও একটি ডাবল সেঞ্চুরি-সহ ৫২৯ রান। ঝুলিতে একাধিক রেকর্ড।


কিন্তু কোন মন্ত্রে সম্ভব হল এমন রূপান্তর? ২০১৩ সালে টেস্ট অভিষেক। এই সিরিজের আগে পর্যন্ত ৬ বছরে খেলেছিলেন মাত্র ২৭টি ম্যাচ। তাতে ৩৯.৬২ ব্যাটিং গড় থাকা ব্যাটসম্যান কীভাবে চলতি সিরিজে ১৩২.২৫ গড় নিয়ে বোলারদের শাসন করে চলেছেন? রোহিত-সাফল্যের কাহিনি শোনালেন তাঁর ব্যক্তিগত কোচ দীনেশ লাড। যাঁর প্রশিক্ষণে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলেন মুম্বইয়ের তারকা ক্রিকেটার।

রবিবার রাঁচিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের পিটিয়ে ২১২ রান করেছেন রোহিত। টেস্টে ছাত্রের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি দেখে উচ্ছ্বসিত দীনেশ। মুম্বই থেকে ফোনে বললেন, ‘আমি আজ ভীষণ গর্বিত। হাজার হোক টেস্ট ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করেছে। কোচ হিসাবে ভীষণ খুশি।’

কীভাবে ক্রিজে সেট হয়ে গিয়েও উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসা কার্যত অভ্যাসে পরিণত করা রোহিতের খেলায় এত পরিণতিবোধ এল? দীনেশ বলছেন, ‘সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ও ওপেন করে। নতুন বল কীভাবে সামলাতে হয়, সেটা জানে। তবে সীমিত ওভারের ক্রিকেট খেলা হয় সাদা বলে। ওই বল হাওয়ায় মুভ করে কম। তুলনায় টেস্টে ব্যবহৃত লাল বল অনেক বেশি সুইং করে। তাই কিছু পরিবর্তন দরকার ছিল।’

দীনেশ জানিয়েছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্টে ওপেনার হিসাবে খেলানো হবে জানার পরই ছাত্রের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেছিলেন। ‘ওকে শুধু মনে করিয়ে দিয়েছিলাম যে, টেস্ট ক্রিকেটে তোমায় অন্তত প্রথম আধঘণ্টা দেখে খেলতে হবে। শট খেলার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তাহলে বাকি দিনটা তোমার হবে। সুনীল গাওস্করও ওকে একই পরামর্শ দিয়েছিল। সেই মন্ত্র মেনেই সাফল্য। আজ ধারাভাষ্য করার সময় গাওস্করকে বলতে শুনলাম, রোহিত বোলারদের শুরুর আধঘণ্টা দিয়েছিল। বাকি পাঁচ ঘণ্টা ও রাজত্ব করেছে। সত্যিই দারুণ ব্যাটিং করেছে,’ বলছিলেন রোহিতের গুরু।

ম্যাচ চলাকালীন প্রত্যেকদিন ছাত্রের সঙ্গে কথা হয় ফোনে। দীনেশ বলছেন, ‘সিরিজের শুরুতে ওকে বলেছিলাম, উইকেটে পড়ে থাকো। বিশ্বকাপেও বলেছিলাম ১০-১২ ওভার ক্রিজে থাকতে পারলে সেঞ্চুরি করবে। সেটা মেনেছিল। ফলাফল আপনারা সকলেই দেখেছিলেন। ক্রিজে আধঘণ্টা সময় কাটিয়ে দিতে পারলে ও বিপজ্জনক ব্যাটসম্যান। বিশ্বের যে কোনও বোলিং শক্তিকে শাসন করতে পারে। ওকে আউট করা তখন দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়।’ যোগ করেছেন, ‘আগ্রাসী ব্যাটিং ওর সহজাত। আগ্রাসী খেললেই নিজের স্বাভাবিক ব্যাটিংটা করতে পারে।’

বীরেন্দ্র সহবাগের জন্মদিন ছিল রবিবারই। অনেকেই রোহিতের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের মধ্যে সহবাগের আগ্রাসনের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। তবে দীনেশ বলছেন, ‘রোহিত টেকনিকের দিক থেকে বীরুর চেয়েও এগিয়ে। সহবাগের খেলাটা ছিল পুরোপুরি চোখ-হাতের মেলবন্ধনের (হ্যান্ড-আই কো-অর্ডিনেশন) ওপর নির্ভরশীল। তবে রোহিতের টেকনিক অনেক উন্নত। ওদের ঘরানাটা আলাদা। আমি ওদের মধ্যে সাদৃশ্য বড় একটা দেখি না। তবে সহবাগের জন্মদিনে ওকে রোহিত দারুণ একটা ডাবল সেঞ্চুরি উপহার দিল বলা যেতেই পারে।’

ওপেনার রোহিত

ইনিংস     রান      সর্বোচ্চ     গড়       সেঞ্চুরি

৪          ৫২৯      ২১২      ১৩২.২৫      ৩

তিন নম্বরে

ইনিংস     রান      সর্বোচ্চ     গড়       সেঞ্চুরি

৫          ১০৭      ৫৩       ২১.৪০         ০

চার নম্বরে

ইনিংস     রান      সর্বোচ্চ     গড়       সেঞ্চুরি

১              ৪           ৪            ৪          ০

পাঁচ নম্বরে

ইনিংস     রান      সর্বোচ্চ     গড়       সেঞ্চুরি

১৬        ৪৩৭      ৭৯       ২৯.১৩        ০

ছয় নম্বরে

ইনিংস     রান      সর্বোচ্চ     গড়       সেঞ্চুরি

২৫        ১০৩৭     ১৭৭      ৫৪.৫৭         ৩