নয়াদিল্লি: দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কেপটাউনে তৃতীয় টেস্টে বল-বিকৃতির দায়ে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ ও ক্রিকেটার ক্যামেরন ব্যানক্রফটকে শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে ক্রিকেটবিশ্বে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে স্মিথদের সমালোচনা করা হচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বল-বিকৃতির অভিযোগ নতুন নয়। অতীতে বহুবার এই অভিযোগ উঠেছে। এর জন্য অনেক ক্রিকেটারকে শাস্তির মুখেও পড়তে হয়েছে। দেখে নেওয়া যাক সেই ঘটনাগুলি।


১৯৭৭ সালে চেন্নাইয়ে ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডের বাঁ হাতি মিডিয়াম পেসার জন লেভারের বিরুদ্ধে বেশি স্যুইং আদায় করার জন্য বলের একপাশে ভেজলিন লাগানোর অভিযোগ ওঠে। ইংল্যান্ড শিবির থেকে অবশ্য দাবি করা হয়, লেভার ও বব উইলিস কপালের ঘাম দূর করার জন্য চোখের উপর ভেজলিন দেওয়া গজ লাগান। শেষপর্যন্ত লেভারকে কোনওরকম শাস্তির মুখে পড়তে হয়নি।

১৯৯০ সালে ফয়সলাবাদে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে জলের বোতলের উপরের অংশের সাহায্য নিউজিল্যান্ড দল বল-বিকৃতি করেছিল বলে বহুবছর পরে স্বীকার করেন সেই দলে থাকা উইকেটকিপার অ্যাডাম প্যারোরে। তিনি জানান, এর ফলে বলের স্যুইং বেড়ে যায় এবং পেসার ক্রিস প্রিঙ্গল ১১ উইকেট নেন। তবে এই ঘটনার ক্ষেত্রেও কারও শাস্তি হয়নি।

১৯৯৪ সালে লর্ডসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ডের তৎকালীন অধিনায়ক মাইক আথারটনের বিরুদ্ধে পকেট থেকে ধুলো বার করে বলে লাগানোর অভিযোগ ওঠে। আথারটন অবশ্য দাবি করেন, তিনি হাত শুকনো রাখার জন্য পিচ থেকে নেওয়া মাটি ব্যবহার করেছিলেন। এই ঘটনার জন্য তাঁর জরিমানা হয়।

২০০০ সালে শ্রীলঙ্কায় ত্রিদেশীয় সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একদিনের ম্যাচে পাকিস্তানের পেসার ওয়াকার ইউনিসের বিরুদ্ধে বল-বিকৃতির অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনার জেরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে নির্বাসিত হতে হয় ওয়াকারকে। একইসঙ্গে তাঁর ম্যাচ ফি-র ৫০ শতাংশ জরিমানাও হয়।

২০০১ সালে ভারতের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের দ্বিতীয় টেস্টে কিংবদন্তী সচিন তেন্ডুলকরের বিরুদ্ধে বল-বিকৃতির অভিযোগ ওঠে। সচিন দাবি করেন, তিনি বলের উপর থেকে ধুলো-মাটি সরাচ্ছিলেন। কিন্তু ম্যাচ রেফারি মাইক ডেনেস বল-বিকৃতির দায়ে সচিনকে একটি টেস্টে নির্বাসিত করেন। ভারতীয় দল ও বিসিসিআই সচিনের পাশে দাঁড়ায়। সচিনের উপর থেকে নির্বাসন তুলে না নেওয়া হলে সফর বাতিল করারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এই বিতর্কের জেরে সিরিজের তৃতীয় টেস্ট ম্যাচটি বেসরকারি হয়ে যায়। শেষপর্যন্ত আইসিসি জানিয়ে দেয়, সচিন বল-বিকৃতি করেননি।

২০০৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ত্রিদেশীয় সিরিজে ব্রিসবেনে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে একদিনের ম্যাচে রাহুল দ্রাবিড়ের বিরুদ্ধে বল-বিকৃতির অভিযোগ ওঠে। ম্যাচ রেফারি ক্লাইভ লয়েড দ্রাবিড়ের ম্যাচ ফি-র ৫০ শতাংশ জরিমানা করেন।

২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ব্যাটসম্যান মার্কাস ট্রেসকোথিক তাঁর আত্মজীবনীতে লেখেন, ১৮ বছর পর তাঁদের অ্যাশেজ সিরিজ জয়ে বল-বিকৃতির বড় ভূমিকা ছিল। তিনি নিজেই বল-বিকৃতি করেছিলেন। এই বই প্রকাশিত হওয়ার আগেই ট্রেসকোথিক অবসর নেন। ফলে তাঁর কোনও শাস্তি হয়নি।

২০০৬ সালে ওভাল টেস্টে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে বল-বিকৃতির অভিযোগে ইংল্যান্ডকে অতিরিক্ত পাঁচ রান দেন দুই আম্পায়ার ড্যারেল হেয়ার ও বিলি ডকট্রোভ। এর প্রতিবাদে চা-পানের বিরতির পর আর মাঠে নামেনি পাকিস্তান দল।

২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্টে ইংল্যান্ডের দুই পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড ও জেমস অ্যান্ডারসনের বিরুদ্ধে বল-বিকৃতির অভিযোগ ওঠে। তাঁরা অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। শেষপর্যন্ত তাঁদের কোনও শাস্তি হয়নি।

২০১০ সালেই পার্থে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একদিনের ম্যাচে পাকিস্তানের অল-রাউন্ডার শাহিদ আফ্রিদিকে বল কামড়াতে দেখা যায়। তাঁকে দু’টি টি-২০ ম্যাচে নির্বাসিত করা হয়।২০১২ সালে হোবার্ট টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার পেসার পিটার সিডলের বিরুদ্ধে বল-বিকৃতির অভিযোগ করে শ্রীলঙ্কা দল। আইসিসি অবশ্য এই অভিযোগ খারিজ করে দেয়।

২০১৩ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচ চলাকালীন প্যান্টের চেনে বল ঘষতে দেখা যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যান ফাফ দু প্লেসিকে। আম্পায়াররা পাকিস্তানকে অতিরিক্ত পাঁচ রান দেন। দু প্লেসির ম্যাচ ফি-র ৫০ শতাংশ জরিমানা হয়।

২০১৬ সালে ফের দু প্লেসির বিরুদ্ধে বল-বিকৃতির অভিযোগ ওঠে। সেই সময় তিনি আবার দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ছিলেন। হোবার্টে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্টে বল-বিকৃতির দায়ে তাঁর ম্যাচ ফি-র পুরোটাই জরিমানা হয়।