কলকাতা: সকালবেলা উঠে এমন খবর শুনতে হবে, তা কখনওই ভাবতে পারেননি। বন্ধুর শারীরিক অসুস্থতার খবর পেয়েছিলেন আগেই। কিছুদিন আগে একটি অনুষ্ঠানে একসঙ্গে দেখাও হয়েছে। তবে সুভাষ ভৌমিকের সঙ্গে যে ওটাই শেষ দেখা হবে জানতেন না। শনিবার সকালে প্রাক্তন ফুটবলার সুভাষ ভৌমিকের মৃত্যুর খবরটা মানতেই পারছেন না প্রাক্তন ফুটবলার শ্যাম থাপা। ফোনে এবিপি লাইভকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ''সুভাষের সঙ্গে আমার কত স্মৃতি জড়িয়ে। ১৯৭০ সালে যখন ও আর আমি একসঙ্গে জাতীয় দলে সুযোগ পাই, তখন বোম্বেতে আমার রুমে এসে চিৎকার করে জানিয়েছিল প্রথম সে কথা। সেই থেকে আমরা বন্ধু। কলকাতাতে আমি যখন আসি তখন ওই আমার বন্ধু ছিল। আমার মনে আছে রোভার্স কাপে ১৯৭১ সালে একবার জেসিটির বিরুদ্ধে ম্য়াচ ছিল। তখন আমরা ইস্টবেঙ্গলে। সেই ম্যাচে ২-১ গোলে পিছিয়ে ছিলাম আমরা। কিন্তু সুভাষই পুরো দলটাকে চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করছিল। মাঠেই প্রতিপক্ষের প্লেয়ারের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে ও। আমাকেও সেই সময় ওঁর পাশে দাঁড়াতে লড়াইয়ে জড়াতে হয়েছিল। মনে আছে, রীতিমতো বক্সিং করেছিলাম যেন সেদিন।''


সুভাষের সঙ্গে খেলার দিনে স্মৃতি উসকে শ্যাম থাপা বলেন, ''আমার মনে হয় ওঁ একজন কমপ্লিট ফুটবলার ছিল। অনেকেই বলত যে আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলার জন্য সঠিক ফুটবলার নয় সুভাষ। কিন্তু আমার কোনওদিনই তেমন মনে হয়নি। যেমন ফুটবলার, তেমন চেহারা। ফরোয়ার্ড লাইনে অন্যতম সেরা ছিল সুভাষ। আমরা বাংলায় খেলেছি দীর্ঘদিন। দেশের হয়েও খেলেছি। ১৯৭০-এ এশিয়ান গেমসে একসঙ্গে খেলেছি। বিদেশে প্রচুর ম্যাচ একসঙ্গে খেলেছি। হোটেল আমার রুম পার্টনার ছিল। প্রচুর ঠাট্টা মজা করত। কত স্মৃতি মনে পড়ছে। কিন্তু সব কেমন যেন ওলোটপালট হয়ে গেল।''


কষ্টে গলা বুজে আসছিল। ফোন রাখার আগে বললেন, ''খেলার পরও আমরা বিভিন্ন জায়গায় একসঙ্গে আড্ডা মেরেছি। কোনােদিন টেনশনে ছিল না। সবাইকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করত। এরকম মানুষকে হারাতে হল, কিছু বলার নেই। ওঁর কোভিড হয়েছিল। কোভিডের জন্য গত কয়েক বছরে আমাদের সেভাবে দেখাও হয়নি। আমি ক্লাবেও খোঁজ নিচ্ছিলাম যে যদি শেষ একটু ফুল দিতে পারি ওঁকে একটু। কিন্তু সেটাও সম্ভব হল না। ভীষণ একা লাগছে।''