সন্দীপ সরকার, কলকাতা: পুজোয় আর পাঁচজন বাঙালির মতোই ঠাকুর দেখতে, খাওয়াদাওয়া করতে ভালবাসেন তিনি। আর ভালবাসেন ঢাকের বোল, ধুনুচি নাচ। পড়াশোনার জন্য সানা ইংল্যান্ডে। মেয়ে না থাকায় মন খারাপ তাঁর। তিনি, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। সদ্য পঞ্চাশ পূর্ণ করেছেন। এবার দাদার পাড়ার পুজোরও সুবর্ণ জয়ন্তী। যদিও পাড়ার নয়, বড়িশা প্লেয়ার্স কর্নারের পুজোকে দাদা বাড়ির পুজোই মনে করেন।


একদিকে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের তুমুল ব্যস্ততা। দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে পরপর সিরিজ। আয়োজনের সব দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে। সঙ্গে পুজোর উদ্বোধনের জন্য বিভিন্ন কর্মকর্তাদের ঝুলোঝুলি। তার মাঝেই মাকে চেক আপের জন্য চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া। ঠাসা সূচির মধ্যেই জাতীয় দলের কিংবদন্তি অধিনায়ক সময় দিলেন এবিপি আনন্দের ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্ম এবিপি লাইভকে। পুজোর শপিং থেকে শুরু করে সিনেমা, সব নিয়েই আড্ডার মেজাজে পাওয়া গেল মহারাজকে।


প্রশ্ন: দুর্গাপুজো আপনার কাছে কতটা স্পেশ্যাল?


সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়: শুধু আমি কেন, সব বাঙালির কাছেই স্পেশ্যাল। আমাদের বাড়ির পাশের পুজোর এবার পঞ্চাশ বছর। আমার জন্ম থেকে এই পুজো। পুজো সমস্ত বাঙালির মতোই আমার কাছেই খুব আনন্দের।


প্রশ্ন: এবছরই পঞ্চাশ পূর্ণ করেছেন আপনি। বড়িশা প্লেয়ার্স কর্নারের পুজোরও সুবর্ণ জয়ন্তী। আপনাকে নিয়ে বিশেষ গ্যালারি হচ্ছে...


সৌরভ: হ্যাঁ (হাসি)। আমি বারণ করেছিলাম এসব করতে। কিন্তু যেহেতু আমার জন্মের বছরই ওই পুজোটা শুরু হয়েছিল, সেই জন্যই ওরা করতে চায়। আসলে এটা আমার বাড়িরই পুজো। বাড়ির সব ভাইবোনেরা মিলে করে। আমি কনট্রিবিউট করি, তবে সেভাবে থাকতে পারি না। আমি শুধু পুজোর দিনগুলোয় যাই। ওরা ভালই পুজো করে। প্রতি বছর দারুণ পুজো হয়। বিশেষ করে মা দুর্গার মূর্তি দারুণ হয়। আমি অবশ্য এবারের প্রতিমা এখনও দেখিনি। দেখব।


প্রশ্ন: সানা ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করছেন। আপনি ও ডোনাদি মাঝেমধ্যেই যান ইংল্যান্ডে। এবার পুজোয় কি সানা কলকাতায় ফিরছেন?


সৌরভ: না, সানা গতবারের পুজোয় আসতে পারেনি। এবারও আসছে না। ওর কলেজ থাকে। সেই সময় কলেজ ছেড়ে আসতে পারে না। গত পুজোয় আমরাও যেতে পারিনি। এবারও পারব না। পুজোর পরে যাব।


প্রশ্ন: বাঙালির কাছে পুজো মানে শুধু প্যান্ডেল হপিং নয়, পুজো মানে খাওয়াদাওয়ায়। পুজোর পাঁচদিন মেন্যুতে কী থাকছে?


সৌরভ: বাড়িতে পুজো হয়। প্রচুর রান্নাবান্না হয়। ভোগ হয়। আমাদের বিরাট পরিবার। পিসিরা আসেন। ভাইবোনেরা সবাই থাকে। পুজো হয় দেখার মতো। সবাই পুজোয় এখানে আসে। খাওয়া-দাওয়া রান্না-বান্না চলতেই থাকে। ঘরে কতক্ষণ আর থাকি! কখনও ঠাকুরঘরে, কখনও প্যান্ডেলেই কেটে যায়।


প্রশ্ন: বন্ধুরা, আত্মীয়রা বলেন, পুজোর সময় দল বেঁধে সিনেমা দেখতে যাওয়া হয়, আপনিও যোগ দেন...


সৌরভ: হ্যাঁ আমি সময় পেলেই সিনেমা দেখতে যাই। নির্ভর করে ভাল সিনেমা রিলিজ হয়েছে কি না তার ওপর। এবার অনেক ভাল ছবি মুক্তি পেয়েছে। যদি সময় পাই, যাব।


প্রশ্ন: সেলিব্রিটি হওয়ার একটা সমস্যা রয়েছে। ইচ্ছে হলেই পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাওয়া হয় না বা ঠাকুর দেখতে যাওয়া যায় না। ভক্তরা ঘিরে ধরেন...


সৌরভ: আমি যাই ঠাকুর দেখতে। হয়তো জানিয়ে যাই। কিছু ভাল ঠাকুর দেখি। সব দেখা হয় না। চার-পাঁচটা ভাল ঠাকুর দেখি। তবে সন্ধেবেলা বেরনো কঠিন। ভিড় হয়। আমি বিকেল বিকেল যাই। বিকেল বিকেল ফিরে আসি। আমার ভাল লাগে। আমি রাত জাগার লোক নই। দিনের বেলায় ঘোরাঘুরি করি।


প্রশ্ন: পুজো মানে তো শপিংও। পুজোর কেনাকাটা করেন?


সৌরভ: ছেলেবেলা করতাম। এখন আর করি না। আমি দোকানেই যাই না। ডোনা কেনে। উপহার দেয়ে লোকেরা, বন্ধুরা। আমি দোকানে গিয়ে কিছু কিনি না।


প্রশ্ন: ক্রিকেট খেলার সময় দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে কখনও হয়তো থাকতেন বিদেশে, কখনও খেলার জন্য ভিন রাজ্যে। মন খারাপ হতো?


সৌরভ: ভীষণ মন খারাপ হতো। বাঙালি তো! মা দুর্গাকে না দেখলে সারাবছর মনে হয় খালি। আমরা সব বাঙালি এই সময়টার জন্য তাকিয়ে থাকি। কালীপুজো হোক বা বড়দিন, অনেক বড় বড় উৎসব আছে। কিন্তু দুর্গাপুজোর মতো কিছু নেই। বাঙালিদের কাছে এই পাঁচটা দিনের গুরুত্ব ভাষায় বলে বোঝানো যাবে না। আমি অনেক সময় বাইরে থেকেছি। মা দুর্গাকে যখন দেখতাম মন খারাপ হতো।


প্রশ্ন: এখন তো অনেক পুজোর উদ্বোধনও করতে যেতে হয়...


সৌরভ: আমি পুজোর উদ্বোধনে যাই না। একজনকে হ্যাঁ বললে অন্যকে না বললে তাঁদেরও মন খারাপ হবে। তবে ভীষণ কাছের দু'একজনের পুজোয় যাই। তাঁরা একেবারে আমার কাছের মানুষ। তাঁদের এড়িয়ে যাওয়া যায় না। সিএবি সূত্রে অনেকের পুজোয় যেতে হয়। শরাদা (কুমোরটুলি ক্লাবের কর্তা, প্রয়াত শরদিন্দু পাল) বেঁচে থাকাকালীন ওঁর পুজোয় যেতাম।


প্রশ্ন: পুজোয় পুষ্পাঞ্জলি থেকে শুরু করে ধুনুচি নাচ, ভীষণ মেতে থাকতে দেখা যায় আপনাকে...


সৌরভ: হ্যাঁ আমি খুব মেতে থাকি। আমার ভাল লাগে। পুজোয় যখন ঢাকে কাঠি পড়ে, ওর চেয়ে ভাল জিনিস আর নেই। আলো, প্রতিমা, প্যান্ডেল, সব ঠিক আছে। কিন্তু ঢাক যখন বাজে, তখনই মনে হয় পুজো।


সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকারটি দেখুন নীচের লিঙ্কে ক্লিক করে:



প্রশ্ন: বছর কয়েক আগে বড়িশা প্লেয়ার্স কর্নারের বিসর্জনে তাসা এসেছিল। আপনি ঢাক বাজাতে বলেছিলেন...


সৌরভ: হ্যাঁ, আমার ঢাক খুব পছন্দের। বছর পাঁচেক আগে বিসর্জনে ১০৮টা ঢাক নিয়ে শোভাযাত্রা হয়েছিল। ঢাকের আওয়াজ দারুণ।


প্রশ্ন: বড়িশা প্লেয়ার্স কর্নারে যাঁরা ঠাকুর দেখতে আসেন, তাঁরা সকলেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে এক ঝলক দেখতে চান। কেমন লাগে এই অনুভূতি?


সৌরভ: বহুদিন ধরে, ১৯৯৬ সাল থেকে এই জিনিস দেখছি। ২৬ বছর হয়ে গেল। আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি যে মানুষ এত ভালবাসেন। দেখতে চান। সকলের কাছে কৃতজ্ঞও। আমি মাঝে মধ্যে যখন প্যান্ডেলে যাই, ভিড় দিয়েই যাই। মানুষ আসেন, ছবি তোলেন, কথা বলেন, আমি কথা বলি।


প্রশ্ন: পুজোয় আপনার অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীদের উদ্দেশে কোনও বার্তা?


সৌরভ: দুর্গাপুজো বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। সকলকে আমার শারদ শুভেচ্ছা। আপনাদের দুর্গাপুজো পুজো ভাল কাটুক। আনন্দে কাটুক।