কলকাতা: আইএসএল ফাইনালে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে (MBSG) ৩-১ গোলে হারাল মুম্বই সিটি এফসি। আইপিএলে (IPL) গুজরাত টাইটান্সকে ৪ উইকেটে হারাল আরসিবি (RCB vs GT)। রবিবার পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে পরীক্ষা সিএসকে-র। খেলার দুনিয়ার সারাদিন।


আইএসএল চ্যাম্পিয়ন মুম্বই


কিক অফের পর থেকে দাপট ছিল মুম্বই সিটি এফসি-র (Mumbai City FC)। মাত্র এক পয়েন্টের জন্য যাদের হাত থেকে লিগশিল্ড খেতাব ছিনিয়ে নিয়েছিল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan Super Giant)। সেই প্রতিশোধ নেওয়ার সংকল্পই যেন কাজ করছিল মুম্বই সিটি এফসি-র ফুটবলারদের মধ্যে। তবু, বিরতির আগে গোল করে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকেই এগিয়ে দিয়েছিলেন জেসন কামিংস। খেলার গতির বিরুদ্ধে।


দ্বিতীয়ার্ধে যদিও ঘুরে দাঁড়াল মুম্বই সিটি এফসি। প্রথমে সমতা ফেরায়। তারপর আরও ২ গোল জড়িয়ে দেয় মোহনবাগানের জালে। সব মিলিয়ে ৩-১ গোলে সবুজ-মেরুন জনতার স্বপ্নকে গুঁড়িয়ে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হল মুম্বই সিটি এফসি।


কোহলিদের নাটকীয় জয়


একদল চলতি আইপিএলে পাওয়ার প্লে-তে তুলল সর্বনিম্ন স্কোর। ৬ ওভারে মাত্র ২৩/৩। আর এক দল পাওয়ার প্লে-তে চলতি মরশুমে নিজেদের সেরা স্কোর তুলল। ৯২/১! লক্ষ্য যেখানে মাত্র ১৪৮ রানের। মাত্র ১৮ বলে হাফসেঞ্চুরি ফাফ ডুপ্লেসির। আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল, কত তাড়াতাড়ি গুজরাত টাইটান্সের স্কোর পেরিয়ে যাবে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর (RCB vs GT)।


সেখান থেকে ম্যাচে নাটকীয় পট পরিবর্তন। মাত্র ২৫ রানের মধ্যে ৬টি উইকেট হারিয়ে বসে আরসিবি। বিনা উইকেটে ৯২ থেকে ১১৭/৬ হয়ে যায় তারা। ড্রেসিংরুমে পরপর ফিরে যান ডুপ্লেসি (২৩ বলে ৬৪ রান), উইল জ্যাকস (১ রান), রজত পাতিদার (২ রান), গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (৪ রান), ক্যামেরন গ্রিন (১ রান) ও বিরাট কোহলি (৪২ রান)। ভি ভি আই পি বক্সে বসা অনুষ্কা শর্মার (Anushka Sharma) মুখও তখন যেন বিষণ্ণ। এখান থেকে ম্যাচ হেরে যাবেন কোহলিরা (Virat Kohli)?


আরসিবি শিবিরে হাসি ফোটালেন দীনেশ কার্তিক ও স্বপ্নিল সিংহ। ১২ বলে ২১ রানে অপরাজিত রইলেন ডিকে। স্বপ্নিল অপরাজিত রইলেন ৯ বলে ১৫ রান করে। ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৮ বল বাকি থাকতে ম্য়াচ জিতে নিল আরসিবি। ৪ উইকেটে হারাল গুজরাত টাইটান্সকে। টানা তিন ম্যাচ জিতে প্লে অফের দৌড়ে ভেসে রইল আরসিবি। ১১ ম্যাচের শেষে তাদের পয়েন্ট হল ৮। সাত নম্বরে উঠে এল তারা। বাকি তিন ম্যাচ জিতলে ১৪ পয়েন্টে শেষ করবে তারা। পয়েন্ট টেবিলে ওপরের দিকে থাকা দল হারলে দরজা খুলে যেতে পারে কোহলি-ডুপ্লেসিদের সামনে।


ধোনিদের পরীক্ষা


আইপিএলের (IPL 2024) ইতিহাসে দুটিমাত্র দল চেন্নাই সুপার কিংসকে টানা পাঁচ ম্যাচে হারিয়েছে। পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। এবং, পাঞ্জাব কিংস (PBKS vs CSK)। ২০২১ সাল থেকে যারা টানা পাঁচ ম্যাচে সিএসকে-কে হারিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বুধবার মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের (MS Dhoni) ডেরায় গিয়ে সিংহ শিকার করা। দেখে কে বলবে যে, এখনও পর্যন্ত আইপিএল জেতার সৌভাগ্য হয়নি প্রীতি জিন্টার দলের!


রবিবার টানা ছয় ম্য়াচ সিএসকে-কে হারানোর নজির গড়তে পারে পাঞ্জাব কিংস। ধর্মশালায় নিজেদের দ্বিতীয় হোমগ্রাউন্ডে নামছে পাঞ্জাব কিংস। যদিও এবারের আইপিএলে ঘরের মাঠে হতশ্রী রেকর্ড পাঞ্জাবের। মুল্লাপুরের নতুন মাঠে ৫টি ম্যাচ খেলে মাত্র একটিতে জিতেছেন স্যাম কারানরা। নতুন মাঠে ভাগ্য ফিরবে, আশায় পাঞ্জাব শিবির। চেন্নাইকে হারাতে পারলে প্লে অফের দৌড়েও ভালমতোই থাকা যাবে, জানেন কোচ সঞ্জয় বাঙ্গারও।


টুর্নামেন্টে সিএসকে-র শুরুটা দারুণ হয়েছিল। তবে টুর্নামেন্ট যত গড়িয়েছে, ছন্দ হারাতে শুরু করেছেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়রা। প্রথম দুই ম্যাচে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর ও গুজরাত টাইটান্সকে হারিয়েছিল সিএসকে। কিন্তু শেষ চার ম্যাচে মাত্র একটিতে জিতেছে। তিনটি পরাজয়। টস ভাগ্যও সঙ্গ দিচ্ছে না রুতুরাজের। এখনও পর্যন্ত ১০ ম্যাচের মধ্যে ৯টিতে টস হেরেছেন রুতুরাজ। যার মধ্যে টানা পাঁচ ম্যাচে টস হারার অভিজ্ঞতাও হয়েছে তাঁর।


ধর্মশালায় সিএসকে-র সুখস্মৃতি রয়েছে। ২০১০ সালে এই মাঠে শেষ ওভারে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের (তখনকান নাম) ইরফান পাঠানকে জোড়া ছক্কা মেরে চেন্নাইকে জিতিয়েছিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। এবং ম্যাচ জিতিয়ে হেলমেট আছাড় মেরেছিলেন। ধোনির কাছে এরকম আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো বিরলতম দৃশ্য হয়ে রয়েছে।


দাদার মন্ত্র


ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে শাহরুখ খানের (Shah Rukh Khan) দলের শাপমোচনের পিছনে দলেরই প্রাক্তন এক অধিনায়ক? যিনি আবার এখন প্রতিপক্ষ এক দলের সর্বেসর্বা?


আইপিএলের (IPL 2024) ১৭ বছরের ইতিহাসে শুক্রবারের আগে পর্যন্ত মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে একবারই জিতেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স (MI vs KKR)। ২০১২ সালের সেই ম্যাচে মুম্বইকে হারিয়েছিল কেকেআর। তারপর ১২ বছর কেটে গিয়েছিল। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে প্রত্যেকবার পরাস্ত হয়েছেন নাইটরা। ছবিটা বদলাল শুক্রবার। ১২ বছরের শাপমোচন ঘটিয়ে ২৪ রানে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে হারাল কেকেআর। মুম্বইয়ের ডেরায় গিয়ে। 


যে ম্যাচে সেরার স্বীকৃতি পেয়েছেন বেঙ্কটেশ আইয়ার (Venkatesh Iyer)। ৫২ বলে ৭০ রান করেছেন। তিনিই ম্যাচের সর্বোচ্চ স্কোরার। শুক্রবার ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাট করে নাইট ইনিংস দুবার বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। প্রথম ধাক্কা শুরুর ৩৭ বলে। যেখানে ৫৭ রান তুলতে গিয়ে ৫ উইকেট হারিয়ে বসেছিল কেকেআর (MI vs KKR)। সেই বিপর্যয় অবশ্য সামলে দিয়েছিলেন বেঙ্কটেশ আইয়ার। সঙ্গে পেয়েছিলেন মণীশ পাণ্ডেকে। অঙ্গকৃষ রঘুবংশী আউট হওয়ার পর তাঁর পরিবর্তে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে নামানো হয়েছিল অভিজ্ঞ মণীশকে। কেকেআরের ফেরার পর শুক্রবারই যিনি প্রথম ম্য়াচ খেললেন। ৩১ বলে ৪২ রান করেন। ষষ্ঠ উইকেটে ৬২ বলে ৮৩ রানের পার্টনারশিপ গড়ে কেকেআরকে ম্যাচে ফেরালেন বেঙ্কটেশ ও মণীশ। ৫২ বলে ৭০ রান বেঙ্কটেশের।


ম্যাচের পর তিনি ফাঁস করেছেন, কীভাবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পরামর্শে উপকৃত হয়েছেন তিনি। ইডেনে কেকেআর বনাম দিল্লি ক্যাপিটালস ম্যাচের পর দেখা গিয়েছিল, সৌরভের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলছেন বেঙ্কটেশ। সেই কথোপকথনের মধ্যেই সৌরভকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছিলেন শাহরুখ। যিনি তখন মাঠ প্রদক্ষিণ করছিলেন। সেদিন দিল্লির ডিরেক্টর অফ ক্রিকেট সৌরভের সঙ্গে কী কথা হয়েছিল?


ম্যাচের সেরার পুরস্কার পাওয়ার পর বেঙ্কটেশ বলেছেন, 'আমি বরাবর দাদার বিরাট ভক্ত। আমি সেদিন ম্য়াচের পর আমার ব্যাটিং স্টান্স ও টেকনিক্যাল কিছু খুঁটিনাটির জন্য দাদার কাছে গিয়ে পরামর্শ চেয়েছিলাম। খুব ফলপ্রসূ কথাবার্তা হয়েছিল। সেই পরামর্শ কাজে লাগিয়েছি। নেটে পরিশ্রম করেছি। তার সুফলও পাচ্ছি।'