সন্দীপ সরকার, কলকাতা: ইডেন গার্ডেন্সের (Eden Gardens) ক্লাব হাউসের সামনেই মাঠ লাগোয়া মঞ্চ। সবুজ গালিচায় ঢাকা লনের ওপর বসার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। একেবারে সামনের সারিতে বসেছিলেন তিনি। সঙ্গে স্ত্রী সুস্মিতা, মা ও ভাই। সিএবি-র এক কর্মীকে ডেকে টিস্যু পেপার আনিয়ে রাখলেন। যদি কোনওভাবে কেঁদে ফেলেন, তাই সামলানোর ব্যবস্থা।


তিনি, মনোজ তিওয়ারি (Manoj Tiwary Retirement)। বাইশ গজের দুনিয়া থেকে অবসর নিলেন। রবিবার ইডেনে বাংলা বনাম বিহার ম্যাচ শেষ হতেই ইতি পড়ল বর্ণময় কেরিয়ারে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পঙ্কজ রায় ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পর বাংলার তৃতীয় ক্রিকেটার হিসাবে দশ হাজার রান। অবসর। সব মিলিয়ে রবিবার মনোজ বরণের আয়োজন করেছিল সিএবি। যে অনুষ্ঠানের একেবারে শেষ লগ্নে মঞ্চে উঠে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন মনোজ। প্রয়াত বাবার কথা বললেন। বললেন অসুস্থ কোচ মানবেন্দ্র ঘোষের কথা। ধন্যবাদ দিলেন সামনের সোফায় বসা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে (Sourav Ganguly)। সঙ্গে স্ত্রী ও সতীর্থদের অবদানের কথাও বললেন।


জাতীয় দলের জার্সিতে ১২ ওয়ান ডে ম্যাচ। তিনটি টি-টোয়েন্টি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সেঞ্চুরি করেও ১৪ ম্যাচ বাইরে বসতে হয়েছিল। প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন গ্রেগ চ্যাপেলও। সেই মনোজই রবিবার সাফ জানিয়ে দিলেন, অন্যায় করেছিলেন গুরু গ্রেগ। সৌরভকে জাতীয় দল থেকে ছেঁটে ফেলে।


ক্রিকেটার মনোজকে নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা শোনালেন বাংলার কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্ল, ক্রিকেটার অনুষ্টুপ মজুমদার, নির্বাচক প্রধান শুভময় দাস। মনোজের জন্য তৈরি বিশেষ ভিডিওতে শুভেচ্ছাবার্তা দিলেন হরভজন সিংহ, রোহন গাওস্কর, দীপ দাশগুপ্ত, সাইরাজ বাহুতুলে, ডব্লিউ ভি রামন, মহম্মদ শামি ও বাংলা দলের বাকি সতীর্থরা। তবে ময়দানে মনোজের হরিহর আত্মা বলা হতো যাঁকে, এমনকী, আলাদা রাজনৈতিক পরিচয়েও যে বন্ধুত্ব অটুট, সেই অশোক ডিন্ডা কোথাও নেই। ঠিক যেমন ঋদ্ধিমান সাহা, অশোক মলহোত্র, অরুণ লালদের শুভেচ্ছাবার্তা অনুষ্ঠানকে আরও পরিপূর্ণ করতে পারত।


মনোজের হাতে সিএবি-র পক্ষ থেকে সোনার ব্য়াট তুলে দিলেন সৌরভ। সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়, সচিব নরেশ ওঝা, কোষাধ্যক্ষ প্রবীর চক্রবর্তী সহ অন্যান্য কর্তারা দিলেন সই সম্বলিত বাংলার জার্সি, ছবি। ছিলেন সিএবি-র প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়াও।



অনুষ্ঠানে সেরা বক্তব্য রেখে গেলেন সৌরভ। বললেন, 'মনোজ ২০ বছর ধরে খেলে ১০ হাজার রান করেছে বাংলার হয়ে। ভারতীয় দলে প্রাপ্য সুযোগ পায়নি। তবে তাতে ক্রিকেটারের কোনও খামতি থাকে না। সুযোগ পেলেই তবে সকলে আরও উন্নতি করে। মনোজের থেকে ১০ হাজার রান কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। মনোজের সঙ্গে ২০০৬ সালে রঞ্জি ট্রফি ফাইনালে একসঙ্গে ব্যাট করেছিলাম। দুজনই নব্বইয়ের ওপর রান করেছিলাম। ওর প্রতিভা নিয়ে কোনও সংশয়ই নেই।' যোগ করলেন, 'বাংলার ক্রিকেটে তুমি উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবে। যতদিন বাংলার ক্রিকেট থাকবে, ইডেন গার্ডেন্স থাকবে, তোমার ছবি থাকবে সামনের সারিতে। অনেক বাচ্চা ছেলে মাঠে ঢোকার সময় বলবে, মনোজ তিওয়ারির মতো হতে চাই। এটাই তোমার প্রাপ্তি।'


পাশাপাশি মনোজকে ক্রিকেট মাঠে অন্য কোনও ভূমিকায় দেখার আশাও প্রকাশ করেন সৌরভ।


আরও পড়ুন: Mukesh Kumar: কলকাতায় ট্যাক্সি চালাতেন বাবা, রোহিতদের সংসারে ঢুকেও পা মাটিতে রেখে চলার শপথ মুকেশের


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।