লাহোর: একটা সময় ছিল ভারতীয় ক্রিকেটের ফ্যাভ ফাইভ নিয়ে আলোচনা করলেই তাঁর নাম চলে আসত। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Sourav Ganguly) নেতৃত্বাধীন টিম ইন্ডিয়ার ব্য়াটিং বিভাগের অন্যতম মহীরুহ ছিলেন তিনি। কিন্তু কেরিয়ারে শুধুমাত্র টেস্ট স্পেশালিস্ট তকমা চলে আসার পরে ওয়ান ডে ফর্ম্য়াটে সেভাবে আর সুযোগ পাননি। তবে ২০০৪ সালে পাকিস্তান সফরে পঞ্চম ওয়ান ডে ম্যাচটি ভিভিএস লক্ষ্মণ (VVS Laxman) তাঁর কেরিয়ারের অন্যতম সেরা একটি ম্যাচ হিসেবেই দেখবেন। ৫ ম্য়াচের ওয়ান ডে সিরিজের শেষ ম্যাচে ১০৭ রানের ঝকঝকে ইনিংস বেরিয়ে এসেছিল লক্ষ্মণের ব্যাট থেকে। আমাদের আজকের ওস্তাদের মার সিরিজে সেই ইনিংস নিয়েই প্রতিবেদন --


সিরিজের ফল ছিল তখন ২-২। শেষ ম্যাচে যে জিতবে সেই চ্যাম্পিয়ন। এর আগে কখনও পাকিস্তানের মাটিতে ওয়ান ডে সিরিজে জিততে পারেনি ভারতীয় ক্রিকেট দল। লক্ষ্মণের জন্য সেই বছরটা দারুণ ছিল। এর আগে তিনটে শতরান হাঁকিয়েছিলেন তিনি সেই বছরেই। তবে পাকিস্তানে শোয়েব, সামিদের সামনে কতটা জ্বলে উঠতে পারবেন লক্ষ্মণ তা নিয়ে অনেকেই সংশয়ে ছিলেন। কিন্তু এই ডানহাতি হায়দরাবাদি হয়ত কিছুটা অন্যরকম ভেবেছিলেন। ওস্তাদের মার শেষ রাতে, এই প্রবাদবাক্যকে সত্যি করেই সেদিন ঝলসে উঠেছিলেন ২২ গজে। টেস্ট স্পেশালিস্ট তকমা ঘুচিয়ে মাঠের চারধার জুড়ে ১১টি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ১০৪ বলে ১০৭ রানের ইনিংস। তিন নম্বরে নেমে প্রথম সচিন ও তারপর সৌরভ ও যুবরাজের সঙ্গে জুটি বেঁধে ভারতের স্কোর তিনশোর দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। পুরনো ঘরানার ধ্রপদী শটই শুধু নয়, লক্ষ্মণের ব্যাট থেকে দুর্দান্ত কিছু হার্ড হিটিং শটও দেখতে পাওয়া গিয়েছিল সেদিন।


সেই ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ইনজামাম উল হক। বীরেন্দ্র সহবাগ ও সচিন তেন্ডুলকর ওপেনিংয়ে নেমেছিল। বীরু মাত্র ২২ রান করে ফিরে গেলেও সচিনের ব্য়াট থেকে আসে ৩৭ রান। লক্ষ্মণের সঙ্গে ছোট পার্টনারশিপ গড়েছিলেন। সচিন আউট হওয়ার পর সেই ছন্দই ধরে রেখেছিলেন লক্ষ্মণ। উল্টোদিকে দ্রাবিড় ৪ রানে ফিরে গেলেও সৌরভের ব্যাট থেকে এসেছিল ৬৪ বলে ৪৫ রান। 


জবাবে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তানও শুরুতেই ধাক্কা খায়। পাঠান-বালাজির বোলিংয়ের সামনে টপ অর্ডার ভেঙে পড়ে পাক দলের। মিডল অর্ডারে পাক অধিনায়ক ইনজামামের ব্য়াট থেকে আসে ৩৮ রান। মঈন খান ৭২ রানের ও শোয়েব মালিক ৬৫ রানের ইনিংস খেলেন। তবে তা কখনওই ম্যাচে জয়ের জন্য় যথেষ্ট ছিল না। ৪৭.৫ ওভারে ২৫৩ রানেই শেষ হয়ে যায় পাকিস্তানের ইনিংস। নতুন বলে দুর্দান্ত বোলিং ইরফান পাঠানের। তিনি ম্য়াচে ৩ উইকেট নেন। বালাজিও ৩ উইকেট নেন।


এই ম্যাচের আগে সিরিজের প্রথম চারটে ম্যাচে শতরান করা ব্যাটার সবসময়ই হেরে যাওয়া দলের প্রতিনিধি ছিলেন। কিন্তু লাহোরে লক্ষ্মণের হাঁকানো শতরান বুমেরাং হয়ে যায়নি। শুধু ম্যাচে জয়ই নয়, প্রথমবার ওয়াঘার পাড়ে ভারতকে ওয়ান ডে সিরিজ জিততেও সাহায্য করেছিল লক্ষ্মণের এই সেঞ্চুরি।