নয়াদিল্লি: একজন ব্যাটার। অন্যজন আম্পায়ার। এবং ক্রিকেট গ্রহের সাধারণ ছবি হল, আম্পায়ারের সব সিদ্ধান্ত ব্যাটারের মনঃপূত হবে না। কেউ ঘাড় নেড়ে অসন্তোষ প্রকাশ করবেন। কেউ তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়বেন। আম্পায়ারের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে নির্বাসিত হতে হয়েছে ক্রিকেটারকে, বা দিতে হয়েছে মোটা জরিমানা, এরকম ঘটনাও বেনজির নয়।


তবে ব্যাটার খারাপ শট খেলায় আম্পায়ারের বকুনি খেতে হয়েছে! এরকম ঘটনা নজিরবিহীন।


মঙ্গলবার রুডি কোয়ের্ৎজেনের মৃত্যুর পর এমনই ঘটনার কথা জানালেন বীরেন্দ্র সহবাগ। বীরু ট্যুইট করলেন, 'ওম শান্তি! ওঁর পরিবারের জন্য় সমবেদনা। আমার সঙ্গে ওঁর দারুণ সম্পর্ক ছিল। যখনই আমি খারাপ শট খেলতাম, উনি আমায় বকে দিয়ে বলতেন, বুঝেশুনে খেলো, আমি তোমার ব্যাটিং দেখতে চাই'।


সহবাগ আরও লিখেছেন, 'একবার উনি নিজের ছেলের জন্য় নির্দিষ্ট একটি ব্র্যান্ডের প্যাড কিনতে চেয়ে আমায় জিজ্ঞেস করেছিলেন। আমি সেটা ওঁকে উপহার দেওয়ায় উনি ধন্যবাদও জানান। একজন ভদ্রলোক ও ভাল মানুষ ছিলেন উনি। আপনাকে মিস করব রুডি'।


ক্রিকেটের আম্পায়ারিং জগতের পরিচিত মুখ ছিলেন রুডি কোয়ের্ৎজেন (Rudi Koertzen)। বহু বছর ধরে শীর্ষস্তরে আম্পায়ারিং করেছেন তিনি। সেই বিখ্যাত আম্পায়ারই গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেলেন মঙ্গলবার।


কার্টসন জুনিয়রের মন্তব্য


সোমবারই (৯ অগাস্ট) গাইবেরখায় নেলসন ম্যান্ডেলা বে থেকে বন্ধুদের সঙ্গে গল্ফ খেলে ফিরছেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই প্রাক্তন আম্পায়ার। সেই সময়ই রিভারডেলের কাছে গাড়ি দুর্ঘটনায় মুখোমুখি সংঘর্ষে তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানান তাঁর পুত্র রুডি কোয়ের্ৎজেন জুনিয়র। তিনি বলেন, 'উনি কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে এক গল্ফ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে গিয়েছিলেন। সোমবারই ওঁদের ফিরে আসার কথা ছিল।' মৃত্যুকালে কোয়ের্ৎজেনের বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তাঁর পাশাপাশি দুর্ঘটনায় আরও তিন ব্যক্তিরও মৃত্যু হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।


১৯৮১ সালে কোয়ের্ৎজেন আম্পায়ারিং করা শুরু করেন। তিনি ১৯৯২ সালে পোর্ট এলিজাবেথে (বর্তমানে গাইবেরখা) ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যেকার ম্যাচে প্রথমবার আন্তর্জাতিক স্তরে আম্পায়ারিং করেন। ২০১০ সালে আম্পায়ারিং থেকে অবসর নেওয়ার পূর্বে প্রোটিয়া আম্পায়ার ৩৩১টি  আন্তর্জাতিক ম্যাচের দায়িত্ব সামলেছেন। সেই সময় এই সংখ্যাটি একটি রেকর্ড ছিল। আইসিসির আম্পায়ারদের এলিট প্যানেলের একেবারে প্রথমদিকের সদস্যদের একজন, রুডি নিজের মন্থর গতিতে আঙুল তুলে আউট দেওয়ার জন্য বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে ভারতীয় ক্রিকেট তারকা বীরেন্দ্র সহবাগ (Virender Sehwag), যুবরাজ সিংহরা (Yuvraj Singh) শোকজ্ঞাপন করেছেন।


যুবরাজের শোকজ্ঞাপন


যুবরাজও প্রায় একই সুরে শোকজ্ঞাপন করে জানান, 'রুডি কোয়ের্ৎজেনের হঠাৎ করে মৃত্যুর খবরে মর্মাহত। উনি ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা আম্পায়ার ছিলেন, যাঁর সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতার বিষয়ে সকলেই জানতেন। ওঁর পরিবারের জন্য সমবেদনা।' মাত্র দ্বিতীয় আম্পায়ার হিসাবে ১৫০ ওয়ান ডে এবং ২০০টির অধিক টেস্টে আম্পায়িরং করা রুডি সত্যি সর্বকালের অন্য়তম সেরা আম্পায়র হিসাবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।