মুম্বই: বয়স মাত্র ২১। আর সেই বয়সেই সকলকে ভুল প্রমাণ করে ছেড়েছেন সিমরন শেখ (Simran Shaikh)। মহিলাদের আইপিএলে নজরকাড়া পারফরম্যান্স। ইউপি ওয়ারিয়র্স দলের অন্যতম বড় ভরসা হয়ে উঠেছেন।
ফ্ল্যাশব্যাকে হেঁটে সিমরনের কেরিয়ারের শুরুর দিকে ফিরে তাকালে চমকে উঠতে হবে। যেখানে শুধু লড়াই আর প্রতিকূলতা। মুম্বইয়ের ধারাভি বস্তি। গোটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় বস্তিগুলির অন্যতম। সেখানেই মাথা গোঁজার ঠাঁই সিমরনের। কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি শৈশব থেকে অমোঘ টান। ছোটবেলা ক্রিকেট খেলার জন্য বড়দের ধমকও খেতে হয়েছে। স্থানীয় পার্কে খেলতে গিয়ে বকুনি খেতে হয়েছে একাধিকবার, জানিয়েছেন সিমরন নিজেই।
সেই মানুষগুলোই আজ টিভিতে সিমরনের খেলা দেখে উচ্ছ্বসিত। ধারাভি বস্তিজুড়ে ঘরের মেয়ের জন্য জয়োধ্বনি।
সিমরনের বাবা জাহিদ আলি বলেছেন, 'ছোটবেলা থেকেই আমার মেয়ের ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক। পার্কে ক্রিকেট খেললেই অনেকে ওকে বকাবকি করত। তবে সেসবকে পাত্তা দেয়নি আমার মেয়ে। সব কিছু উপেক্ষা করে ক্রিকেটে মনোনিবেশ করেছে। এগিয়ে গিয়েছে ক্রমশ।'
ক্রিকেটকে কেরিয়ার হিসাবে ভাবা একসময় অবশ্য দুঃস্বপ্ন ছিল সিমরনের কাছে। সেই মেয়েই এখন ডব্লিউপিএলে অন্যতম তারকা। যা তাঁর বাবার যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না। জাহিদ বলেছেন, 'আমি ভাবিনি ও একানে পৌঁছবে। আমরা গরিব মানুষ। সেই সময় মেয়েকে সাহায্য় করার জায়গাতেই ছিলাম না। তবে ঈশ্বরের কৃপায় ও এগিয়ে গিয়েছে। আজ আমরা যে সম্মান পাচ্ছি, সবটাই আমার মেয়ের জন্য। ওর পরিশ্রম আর ঈশ্বরের দয়ার জন্য। প্রচুর মানুষ আমাদের সমর্থনও করেছেন।'
সিমরনের মা আখতারি বানোও ভাবতে পারেননি যে, তাঁর কন্যা এই পর্যায়ে খেলছেন। আখতারি বলেছেন, 'ও যে এই পর্যায়ে খেলতে পারবে ভাবতেই পারিনি। ঈশ্বর ও ওর কোচকে ধন্যবাদ জানাব। কঠিন সময়ে আমাদের পাশে থাকার জন্য।'
দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পেরেছেন সিমরন। তারপর থেকে ক্রিকেটই ধ্যানজ্ঞান। এখন অবশ্য বাইশ গজে নিজস্ব পরিচিতি তৈরি করেছেন। সিমরনের মা বলছেন, 'আগে লোকে আমাদের নামে ওকে চিনত। এখন ওর জন্য আমাদের চেনে। লোকে এসে বলে এই হচ্ছে সিমরনের মা। আমাদের ভীষণ গর্ব হয়।' যোগ করেছেন, 'ডব্লিউপিএলের নিলামের দিন দুপুর দুটোয় টিভি চালিয়েছিলাম। ওর নাম ওঠার অপেক্ষা করছিলাম। ও নিজেও বেশ উদ্বিগ্ন ছিল। তারপর ওর নাম উঠতেই গোটা পরিবার এবং ও নিজেও উত্তেজনায় ফেটে পড়েছিল।'