আবির দত্ত, ঝিলম করঞ্জাই ও অনির্বাণ বিশ্বাস, কালীগঞ্জ : ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের পর আজ নিহত তামান্নার বাড়িতে গেলেন মহম্মদ সেলিম, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়রা। সিপিএম নেতাদের সামনে প্রাণনাশের আশঙ্কার কথা বলেন তামান্নার মা সাবিনা ইয়াসমিন। এদিন এলাকায় একটি সভাও করে সিপিএম। এ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
এখনও চোখেমুখে আতঙ্ক ! মেয়ে হারানোর যন্ত্রণা ! আর তার সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে প্রাণনাশের আশঙ্কা ! শনিবার কালীগঞ্জে নিহত তামান্নার বাড়িতে গেলেন মহম্মদ সেলিম, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়রা। সিপিএম নেতাদের কাছে একের পর এক আশঙ্কাপ্রকাশ করলেন নিহতের মা ! সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, "আমার আশঙ্কা হচ্ছে, আমি সারারাত এখানে বসে থাকি, ভয়ে বসে থাকি। মেরে দেবে কোথায় হয়তো এদিক দিয়ে যদি আসে। হুমকি দিচ্ছে। এমন হুমকি দিচ্ছে, গালাগালি দিচ্ছে।"
মহম্মদ সেলিম জানতে চান, 'এখনও হুমকি দিচ্ছে ?' উত্তরে সাবিনা ইয়াসমিন জানান, হ্যাঁ। তিনি বলেন, "ওদের এতটা পাওয়ার, যতগুলো মাথা আছে, মাথাগুলোকে মারবে, তারপরে ওরা ঢুকবে। এতটাই ওদের রাগ আছে।" নিহতের মা-কে আশ্বস্ত করলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়।
কালীগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনের ফল প্রকাশের আগেই সোমবার, সিপিএম সমর্থকদের লক্ষ্য করে বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ছোট্ট তামান্নার শরীর। সেই ঘটনার পর এদিন মোলান্ডিতে নিহতের বাড়িতে যান মহম্মদ সেলিম, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, তন্ময় ভট্টাচার্যরা।
তামান্নার পরিবার সিমিএম সমর্থক। অভিযোগ, তাদের ওপর অত্যাচার এই প্রথম নয়। কিন্তু এবার যে ভয়ঙ্কর ভোট সন্ত্রাস একটা শিশুকেও রেহাই দেবে না, তা বুঝে পারেননি কেউ-ই ! এ প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, "ইলেকশন কমিশনও দায়ী। রিটার্নিং অফিসারও দায়ী। পুলিশ প্রশাসনও দায়ী। সাধারণ প্রশাসনও দায়ী। তারা ইচ্ছে করে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। বোমা ছোরার জন্যই মিছিলটা করেছে। পুলিশকে ব্যবহার করে, অস্ত্রকে ব্যবহার করে এই গুন্ডাকে ব্যবহার করে এরা ভোটে জিতবার চেষ্টা করছে।"
তামান্না মা-বাবার সঙ্গে দেখা করে এই ঘটনার প্রতিবাদে এদিন একটি সভাও করে সিপিএম। সেখানে যাওয়ার কথা থাকলেও, অসুস্থতার কারণে যেতে পারেননি নিহতের মা।
সিপিএমকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, "মহম্মদ সেলিম যে সভা করবেন কালীগঞ্জে, সেখানে কি উনি অনিতা দেওয়ানের জন্য নীরবতা পালন করেছেন ? সেখানে কি উনি তাপসী মালিকের জন্য নীরবতা পালন করেছেন ? সেখানে কি তিনি ধানতলায় ধর্ষতদের জন্য নীরবতা পালন করেছেন ? মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। সেখানে কি তিনি বিজন সেতুতে দুই আনন্দ মার্গি সন্নাসিনীকে খুন করার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন ? সেখানে কি তিনি বাসন্তীতে আরএসপির মন্ত্রী সুভাষ নস্করের বাড়িতে বোমা মেরে তাঁর ভাইয়ের স্ত্রীকে খুন করার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন ? তালিকা অনেক লম্বা।"
শুক্রবার কালীগঞ্জে নিহত তামান্নার বাড়িতে গেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। শনিবার নিহতের বাড়িতে গেলেন মহম্মদ সেলিম, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়রা। মীনাক্ষী বলেন, "পুলিশ আর নির্বাচন কমিশন যদি নিজের কাজ ঠিক করে করত তাহলে পশ্চিমবঙ্গে কোনও ভোটেই এতগুলো প্রাণ যেত না।"
এদিনই তামান্না খুনে মূল অভিযুক্তকে কাটোয়া থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।