কলকাতা: গণেশের জন্ম বৃত্তান্ত নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে। নানা পুরাণেও এর কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে এক এক রকমভাবে। তবে সর্বজনবিদিত যে মত রয়েছে তা থেকে জানা যায় শিব পার্বতীর যে গজানন পুত্র, যিনি গণেশ নামে পরিচিত জন্মের পর তাঁর এই নাম কিন্তু ছিল না। বলা যায় গণেশ তাঁর উপাধি পাওয়া মর্যাদার নাম। তবে বৈদিক দেবতাদের মধ্যে গণেশের নামের উল্লেখ নেই।
নরমুণ্ড থেকে কীভাবে গজমুণ্ডরূপী হলেন শিব-পার্বতী পুত্র তা নিয়েও নানা পুরাণে রয়েছে নানা কাহিনী। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ থেকে প্রাপ্ত কাহিনীতে যেমন বলা হয়েছে গণেশের জন্মোৎসবে নবজাতককে অভিনন্দন জানাতে এসেছিলেন সব দেবতা। সূর্যপুত্র গ্রহরাজ শনিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। যদিও 'অশুভ' দৃষ্টিতে দেখতে রাজি ছিলেন না শনিদেব। পার্বতীর অনুমতি নিয়ে ডান চোখ দিয়ে একটিবার গণেশের দিকে তাকাতেই ভস্মীভূত হয়ে যায় শিশুর মুণ্ড। এরপর বিষ্ণু উত্তরদিক থেকে এক হাতির মাথা কেটে এনে নবজাতকের পুনর্জীবন দান করেছিলেন বলে শোনা যায়।
আবার এই ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণেই বলা হয়েছে এই মুণ্ডচ্ছেদের ঘটনা নাকি একেবারে আকস্মিক ঘটনা নয়। শিবের দুই পরম ভক্ত অসুর মালী এবং সুমালী দেবাসুর যুদ্ধে সূর্যের হাতে প্রাণ দেন। যা দেখে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে শিব সূর্যের দিকেই ত্রিশূল নিক্ষেপ করেন। ত্রিশূলের আঘাতে রথ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন সূর্যদেব। সমস্ত জগতে নেমে আসে আঁধার। যদিও গোটা ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন সূর্যের পিতা কশ্যপ। শিবকে শাপ দিয়ে বলেছিলেন- "আমার পুত্রকে তুমি যেমন অন্যায় ভাবে আঘাত করেছ ঠিক তেমনই তোমার পুত্রের মুণ্ড ধড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।" পুরাণ বলে সেই অভিশাপের ফলই ভোগ করতে হয়েছিল গণেশকে।
আবার শিবপুরাণ জানায় শিবের ত্রিশূলের আঘাতেই গণেশের মস্তক দেহ থেকে ভূলুন্ঠিত হয়েছিল। পুত্রশোকে কাতর পার্বতীকে শান্ত করতে শিবের অনুচরেরাই হাতির মাথা কেটে এনে গণেশের ধড়ে যুক্ত করে। সেই থেকেই তিনি অগ্রপুজার অধিকারি গজানন গণেশ।
তাই ভারতবর্ষে অন্যান্য দেবদেবীদের পুজোর আগে বিধিমতে পূজিত হন বিনায়ক। শিব পুরাণের প্রাপ্ত কাহিনী অনুসারে কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থ তিথিতে গণেশের জন্ম। গণেশের কৃপাদৃষ্টি লাভের জন্য শিবপুরাণেই প্রতি বছর এই চতুর্থীতে ব্রত পালন করতে বলা হয়েছে। ভাদ্রমাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থ তিথিতে দেশব্যাপী (মূলত মহারাষ্ট্রে) পালন হয় বিনায়ক চতুর্থী।
তথ্যসূত্র - পুরাণকোষ, দ্বিতীয় খণ্ড