কলকাতা : যদিও প্রতি মাসে শিবরাত্রি (Shivaratri) পড়ে, তবে ফাল্গুন কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীতে আসা মহাশিবরাত্রি বিশেষ। কারণ, এই দিনে পরম পিতা মহাদেব (Mahadev) এবং বিশ্ব মাতা পার্বতীর বিয়ের রাত্রি। শাস্ত্র অনুসারে, ব্রহ্মার অনুরোধে বিয়ে করতে সম্মত হন শিব। তখনই পৃথিবীতে সৃষ্টি প্রক্রিয়া অর্থাৎ নারী গর্ভধারণ শুরু হয়।


ঋদ্ধি-সিদ্ধির দাতা গণেশ ও কার্তিকেয়র মতো শিব-পার্বতীর পুত্ররা পরিবারে শ্রদ্ধা, সম্মান, ঐক্যর বার্তা দেন। মহাশিবরাত্রিতে শিব-পার্বতীর বিয়ে হয়েছিল, সেই সাথে এই রাতে মহাদেবও প্রথমবারের মতো লিঙ্গ রূপে আবির্ভূত হন। সেই থেকে আজ অবধি অবিরাম পুজো হয়ে আসছে শিবলিঙ্গের। শিব শব্দটি উচ্চারণ করা খুবই সহজ, মধুর ও শান্তিময়। শিব শব্দের অর্থ হল 'শুভ আনন্দ'। যেখানে সুখ ও কল্যাণ আছে, সেখানে শান্তিও আছে।


মহাশিবরাত্রিতে ভগবান শিবকে পূর্ণ ভক্তি ও আচার-অনুষ্ঠানের সাথে পুজো করলে ভক্তদের সমস্যার সমাধান হয় এবং মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়।


মহাশিবরাত্রি ২০২৩-এর তিথি-


পণ্ডিত সুরেশ শ্রীমালি জানিয়েছেন, এই বছর, ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথি হবে শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ৮:০২ মিনিট থেকে পরের দিন ৪:১৮ মিনিট পর্যন্ত। অর্থাৎ, মহাশিবরাত্রি ১৮ ফেব্রুয়ারি উদযাপিত হবে।


মহাশিবরাত্রিতে বিরল যোগ-


এ বার মহাশিবরাত্রিতে বিরল ঘটনা ঘটছে। এ বছরও মহাশিবরাত্রির দিন শনি প্রদোষ ব্রত রয়েছে। পুত্র লাভের জন্য শনি প্রদোষ উপবাস পালন করা হয়। এর সাথে বিকেল ৫.৪১ মিনিটের পর বাসি যোগ, সুনফা যোগ, শঙ্খ যোগ এবং সর্বার্থ সিদ্ধি যোগের সংমিশ্রণ রয়েছে। এই শুভ যোগে করা পুজো-পাঠ ও কর্ম বেশি ফল দেয়।


পণ্ডিত সুরেশ শ্রীমালী মহাশিবরাত্রির গ্রহসংযোগ সম্পর্কে বলেছেন যে, এবার মহাশিবরাত্রিতে শনিদেব তাঁর আদি ত্রিভূজ রাশি কুম্ভ রাশিতে বসবেন। এর পাশাপাশি সূর্যদেব কুম্ভ রাশিতে চন্দ্রের সাথে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত থাকবেন। গ্রহের এই অবস্থান ত্রিগ্রহী যোগের সৃষ্টি করছে। গ্রহের এই বিরল অবস্থান বিশেষভাবে উপকারী হবে।


এবার মহাশিবরাত্রির শুভমুহূর্ত-


মহাশিবরাত্রির দিন চার প্রহরই ভগবান শিবের পুজো করতে পারেন। তবে যাদের মহাশিবরাত্রিতে নিশিতা কালের পুজো করতে হবে, তাদের সময় হবে সকাল ১২.০৯ মিনিট থেকে ১.০০ টা পর্যন্ত।


এবার মহাশিবরাত্রি কোন কোন রাশির জন্য শুভ?


এই বছর, মহাশিবরাত্রির দিন, বৃহস্পতি তাঁর প্রিয় মীন রাশিতে এবং শুক্র উচ্চ রাশিতে থাকার কারণে, মিথুন, কন্যা, ধনু এবং মীন রাশির জাতকদের হংস যোগ এবং মালব্য যোগ হবে। যা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। 


অন্যদিকে বৃষ, সিংহ, বৃশ্চিক ও কুম্ভ রাশির জাতকদের জন্য শষ যোগ থাকবে। চাকরি ও ব্যবসার দিক থেকে এই অবস্থাকে খুবই শুভ বলে মনে করা হয়। বাকি, মেষ, কর্কট, তুলা ও মকর রাশি স্বাভাবিক ফলদায়ক হবে।


মহাশিবরাত্রির পুজোবিধি-


পণ্ডিত সুরেশ শ্রীমালি ব্যাখ্যা করেছেন যে, মহাশিবরাত্রিতে ভগবান শিবের উপাসনা করার জন্য খুব দীর্ঘ পূজা-পাঠের প্রয়োজন নেই। শিবলিঙ্গে বিশুদ্ধ জল এবং বিল্ব পাতা নিবেদন করে ওম নমঃ শিবায় জপ করলেই প্রসন্ন হন। ভক্তের মধ্যে বিশ্বাস, ভক্তি ও আনুগত্য থাকলে মনোবাঞ্ছা শীঘ্রই পূরণ হয় এবং মহাশিবরাত্রি হল সিদ্ধির সময়। কারণ জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, ফাল্গুন কৃষ্ণ চতুর্দশীতে চন্দ্র ও সূর্য কাছাকাছি আসে। এই কারণে, এই সময়ে সূর্যের সাথে শিব রূপে চন্দ্রের জীবনের যোগ-মিলন হয়, যা সাফল্য দেয়।