গোটা মরক্কো তো বটেই, বিশ্বের আরও বহু লোক মুখিয়ে রয়েছেন ফিফা বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল দেখার জন্য। মরক্কো ও ফ্রান্সের মধ্যে হতে চলেছে সেই ম্যাচ। এই ম্যাচ নিয়ে একের পর এক ধারাভাষ্যকার নানা মন্তব্য করেছেন। ফ্রান্স এর আগেও ফুটবল বিশ্বকাপ জিতেছে। ফুটবলের বিশ্বমঞ্চে ফ্রান্স শক্তিশালী দল হিসেবেই পরিচিত। অন্যদিকে ফুটবলের দুনিয়ায় মরক্কো তুলনামূলক ভাবে নতুন। তারা এখনও পর্যন্ত চমকপ্রদ খেলা খেলেছে। এর আগে ১৯৩০ সালে আমেরিকা এবং ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়া এমনই দুরন্ত খেলা খেলেছে। দক্ষিণ আমেরিকা এবং ইউরোপের বাইরে এই কটি দেশই ফুটবল বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলেছে। চলতি বিশ্বকাপে মরক্কো যেভাবে উঠে এসেছে তা চমকপ্রদ। যে পাঁচটি ম্যাচ তারা খেলেছে তাতে তারা একটিও গোল হজম করেনি। শুধুমাত্র একটি আত্মঘাতী গোল হয়েছিল। উল্টোদিকে এখনও পর্যন্ত তিন তাবড় ফুটবল দলকে হারিয়েছে তারা। স্পেন, পর্তুগাল এবং বেলজিয়াম। 


শুধুমাত্র যদি এই ম্যাচ এবং তাঁর সঙ্গে নানা আয়োজন-আতিশয্য থাকতো, আমরা হয়তো “football is never just about football”-এই প্রবাদটার মানেই বুঝতাম না। ফুটবল বিশ্বকাপ সারা বিশ্বকে এমনভাবে তুলে ধরতে পারে, যা খুব কম ঘটনাই পারে। ফুটবল ঘিরে বিশ্বজুড়ে যেভাবে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়, তাতে এটা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত যে ফুটবলই একমাত্র খেলা যার প্রতি বিশ্বজুড়ে জনসমর্থন রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, গোটা পৃথিবীকে একসঙ্গে বাঁধতে পারে ফুটবল। যদিও সেই ভাবনা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এই ভাবনা নিয়ে নানা আলোচনাও করা যায়। তবে এটাও বলা যায় যে এই ফুটবল বিশ্বকাপ অন্তত ক্ষণস্থায়ী সৌভ্রাতৃত্বের আবহ তৈরি করতে পেরেছে। কাতারকে ফুটবল বিশ্বকাপে আয়োজন করতে দিয়েছে ফিফা। এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন অনেকে। তাঁদের দাবি ছিল, মুসলিম প্রধান এই দেশটি ফুটবল বিশ্বকাপের মতো বিশাল বড় কোনও টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য ঠিক নয়। সৌদি আরবও এই সিদ্ধান্তে খুব একটা খুশি ছিল না। তার পিছনেও একটি কারণ রয়েছে। অন্তত দুই দশক ধরে আরব উপমহাদেশ এলাকায় প্রভাব বিস্তার করা নিয়ে কাতারের সঙ্গে টক্কর চলেছে সৌদি আরবের। ২০১৭ সাল থেকে আরব উপমহাদেশের কিছু দেশকে নিয়ে কাতারের বিরুদ্ধে একটি জোটও তৈরি করেছে তারা। দুটি দেশই গাল্ফ কোঅপারেশন কাউন্সিলের (Gulf Cooperation Council) সদস্য। যেখানে সৌদিকে রক্ষণশীলতার পক্ষে থাকা শক্তি হিসেবেই সবাই চেনে, সেখানে কাতার তুলনায় অনেক সহজে রাজনৈতিক ও সামাজিক বদলকে গ্রাহ্য করেছে। ইরানের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছে। এরই মধ্যে বিশ্বকাপে একটি চমক ঘটেছে। সৌদি আরবের ফুটবল দল প্রথম ম্যাচেই আর্জেন্তিনাকে ২-১ গোলে হারিয়েছে। খেলা দেখতে সৌদির প্রচুর বাসিন্দা কাতারে গিয়েছেন। আর এখন গোটা ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনকেই তাদের জয় হিসেবে দেখছে গোটা আরব দুনিয়া।



আফ্রিকার পরিস্থিতিও অনেকটা এমনই। এই বিশ্বকাপ আফ্রিকারও হতে পারে মনে করেছেন গোটা মহাদেশের বাসিন্দারা। তার কারণ মরক্কো। দ্বিতীয় সেমিফাইলেন ফ্রান্সের বিরুদ্ধে মরক্কো জয় পাবে বলেও বিশ্বাস করছেন অনেকে। এমনকী ফাইনালেও মরক্কো জয় ছিনিয়ে আনবে বলে আশা দেখছেন। সপ্তাহ তিনেক আগেও হয়তো এই ভাবনাটা ছিল না। এখন এমন ভাবনার অনুরণন বিশ্বজুড়ে হচ্ছে।


ফুটবল বিশ্বকাপে দক্ষিণ আমেরিকা এবং বিশেষ করে ইউরোপ মহাদেশ থেকে অনেক বেশি প্রতিনিধিত্ব থাকে। সেখানে এশিয়া, আফ্রিকা মহাদেশ এবং আরব দুনিয়া থেকেও প্রতিনিধিত্ব বাড়ুক, এমন দাবি ক্রমশ জোরালো হতো, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কীভাবে এই ফুটবল দুনিয়ায় নিজের জায়গা তৈরি করেছে মরক্কো? ঐতিহাসিকভাবে সাব-সাহারান আফ্রিকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে মরক্কোর। উত্তর আফ্রিকা বা পশ্চিম আফ্রিকার থেকে অনেক বেশি স্বতন্ত্র মরক্কো। পশ্চিম আফ্রিকার পরিস্থিতি অনেক বেশি জটিল। ভূরাজনৈতিক ভাবে মরক্কোর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী আলজিরিয়া ২০২১ সালে মরক্কোর সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। পশ্চিম সাহারা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে টানাপড়েন চলেছে। ১৯৭৫ সালে এই এলাকা নিজেদের দখলে নিয়েছিল মরক্কো। আর ঠিক এই এলাকাতেই মরক্কোর বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনকে সমর্থন জুগিয়ে আসছে আলজিরিয়া। এদিকে ইজরায়েলের সঙ্গে মরক্কোর সম্পর্ক অত্যন্ত ভাল হওয়ায়, সেটাও আলজিরিয়ার সঙ্গে মরক্কোর সম্পর্কে শৈত্যের অন্যতম কারণ। পরিস্থিতি এমনই যে মরক্কোর জয়ের খবর আলজিরিয়ার সরকারি চ্যানেলে দেখানো পর্যন্ত হয়নি। যদিও বাকি আফ্রিকা মরক্কোর জয়ে আনন্দ করেছে।


যখন মরক্কোর ফুটবল তারকা সোফেইন বুফল (Sofaine Boufal) স্পেনের বিরুদ্ধে তাঁদের জয় শুধুমাত্র মরক্কো এবং আরব দুনিয়াকে উৎসর্গ করেছিলেন, তা ভালভাবে নেয়নি আফ্রিকা। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই বক্তব্য নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল। পরে তিনি তাঁর বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন। তবে এটা ঠিকই যে আরব দুনিয়াতেও মরক্কো ঠিক খাপ খায় না। যেমন, ইজরায়েলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঠিক করেছে মরক্কো। তার বদলে পশ্চিম সাহারায় নিজেদের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার জন্য আমেরিকার সমর্থন পেয়েছে। ইজরায়েলে বিপুল সংখ্যায় মরোক্কান ইহুদিদের বসবাস। যা গোটা ইজরায়েলের জনসংখ্যা ৫ শতাংশ। ইজরায়েলও কাতারের বিশ্বকাপে মরক্কোর খেলায় যথেষ্ট উৎসাহী। তবে এই বিশ্বকাপে একটি বিশেষ জিনিসও চোখে পড়েছে। মরক্কোর ফুটবলাররা প্যালেস্তাইনের পতাকা দেখিয়েছেন অনেক জায়গায়। তা দেখে মনে হয়েছে, ইজরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখলেও প্যালেস্তাইনের প্রশ্নে আরব দুনিয়ার সঙ্গেই হাঁটতে চায় মরক্কো।


সাম্প্রতিক কালের সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক ইতিহাসে বিশ্বকাপের এই সেমিফাইনাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং টানটান হতে চলেছে। তার কারণ মরক্কোর সঙ্গে গোটা ইউরোপ এবং বিশেষ করে ফ্রান্সের সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি। মরক্কো ফ্রান্সের প্রাক্তন উপনিবেশ হিসেবেই মূলত পরিচিত। তবে ইউরোপের অন্যান্য ঔপনিবেশিক শক্তিগুলিও মরক্কোয় বহুদিন ধরে ছিল। ফুটবলের মাঠে মরক্কোর বেলজিয়ামকে হারানো আদতে এক ধরনের পোয়েটিক জাস্টিস। কঙ্গোয় এককালে তুমুল অত্যাচার চালিয়েছিল বেলজিয়াম। তার জন্য় বেলজিয়ামকে বিশেষ সমালোচনা শুনতে হয়নি। এরপর স্পেন এবং পর্তুগাল, কাতার বিশ্বকাপে তাদেরও হারিয়েছে মরক্কো। ডাচ, ফরাসি এবং ব্রিটিশদের আগে এরাই বিশ্বে শাসন করত। মরক্কোর উপকূলীয়  শহর, যেমন আগাদির, এল জাদিদা, আজেনমৌর ১৫০০ শতাব্দীতে পর্তুগালের দখলে ছিল। পরে তাদের হাত থেকে চলে যায়। একইরকম ভাবে মরক্কোর ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলীয় এলাকাজুড়ে বেশ কিছু এলাকায় স্পেনের উপনিবেশ ছিল। অত্যাচারী ঔপনিবেশিক ইতিহাসের কালিমালিপ্ত এই দেশগুলি এখন অন্তত ফুটবলের মাঠে আফ্রিকা ও আরব উপমহাদেশীয় দেশগুলির কাছে পর্যুদস্ত হচ্ছে। 


মরক্কোয় শেষ পর্যন্ত উপনিবেশ স্থাপন করেছিল ফ্রান্স। এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে এটাই আপাতত শেষ ইউরোপীয় ফুটবল শক্তি যার বিরুদ্ধে মরক্কোকে তাদের বুদ্ধি এবং লড়াইয়ের ক্ষমতা দেখাতে হবে। আলজিরিয়ার মতো মরক্কোর কাছে অ্যালবার্ট ক্যামাস বা ফ্রানজ ফ্যানন ছিলেন না যাঁদের মাধ্যমে ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক অত্যাচারের ঘটনা সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরা যায়। ১৯১২ সালে মরক্কো ফ্রান্সের পুরোপরি কব্জায় যায়। মরক্কোয় তুমুল শোষণ চালিয়েছে ফ্রান্স। তবে তা হয়তো আলজিরিয়ার মতোও হয়নি। সেখানে আরও অত্যাচার চালিয়েছিল এই ইউরোপীয় শক্তিটি। ১৯৪০-এক দশকের প্রথম থেকে মরক্কোয় স্বাধীনতা-যুদ্ধের মাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে। ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত মরক্কো ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল।


তখন থেকেই ফ্রান্স ও মরক্কোর সম্পর্ক সুখকর ছিল না। মাঝেমধ্যেই তা তিক্ততারও সৃষ্টি করেছিল। এখন মনে করা হয় বিপুল পরিমাণ মরোক্কান বংশোদ্ভূত ফ্রান্সে বসবাস করেন। তাদের অনেকেরই দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। ২০২২ সালেও প্রায় ৩৫ হাজার মরোক্কান ফ্রান্সে বসবাস করার জন্য শংসাপত্র পেয়েছে যা অন্য যে কোনও অভিবাসী জাতির থেকে বেশি। তবে ফ্রান্স মরক্কোর বাসিন্দাদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে ইদানিং নানা কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। ফ্রান্সের সংস্কৃতিকে আপন করে নিলেই তিনি ফরাসি, সেই দেশে এমন ভাবনার চল রয়েছে বলে জানে বিশ্বের অনেকে। তবুও ফ্রান্সে জাতিবিদ্বেষও মারাত্মক ভাবে রয়েছে। ফ্রান্সের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে বা উপকণ্ঠে জাতিবিদ্বেষের ঘটনা অচেনা নয়। ফ্রান্সে উত্তর আফ্রিকার বাসিন্দারা বেকারত্ব, দারিদ্র, বৈষম্য, পুলিশি অত্যাচারের শিকার হন বলে অভিযোগ। ফ্রান্সে অতি-দক্ষিণপন্থীরা এমন ব্যবহার করে থাকেন, তাতে মনে হয় ফ্রান্সের ঔপনিবেশিকতা এখনও বজায় রয়েছে। বিশ্বকাপে মরক্কোর জয় এবং তাদের সমর্থকদের উল্লাসকেও বাঁকা চোখে দেখেছেন অনেক। ফ্রান্সের অতি-দক্ষিণপন্থী নেতা গিলবার্ট কোলার্ড, যিনি সংসদের সদস্য, বলেন, 'অ্যানেক্স টাউন হলে মরক্কোর পতাকা লাগানো রয়েছে। এই চিহ্ন আমাদের দেশে দখল নিচ্ছে, এটা সহ্য করা যায় না।' ফ্রান্সে যে মরোক্কানরা রয়েছেন, তাঁরা আদতে ফ্রান্সকে ঘৃণা করেন, এমনটাই মনে করেন ওই দক্ষিণপন্থীরা। 


যদি কোনও ফরাসি এমনটাই ভেবে থাকেন, তাহলে এমন হতে পারে মরক্কো ফ্রান্সের ফুটবল দলকেও হারাতে পারল। আন্তজার্তিক ফুটবলে জাতীয়তাবাদের উপর নির্ভর করে চলে। পাশাপাশি এটাও দেখা যায় যে জাতীয়তাবাদ কোনও সহজ বিষয় না। ফুটবল নিজেই এই জাতীয়তাবাদের অ্যান্টিথিসিস। কেউ কেউ এটাও বলতে পারেন যে, জাতীয়তাবাদ সস্তা, ফাঁপা এবং যাঁরা গভীরে গিয়ে ভাবতে পারেন না বা যাঁদের নীতিগত ভিত্তি নেই তাঁদের মধ্যেই সহজে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এখনকার দিনে জাতীয়তাবাদী বলে যাঁরা নিজেদের পরিচয় দেয় তাঁদের মধ্যে এই বিষয়গুলি দেখা যায়। ফ্রান্সের ফুটবল দলের অন্তত অর্ধেক আফ্রিকান বংশোদ্ভুত। আফ্রিকার প্রায় কেউ তাঁদের ফ্রেঞ্চ-আফ্রিকান নয়, গোটা আফ্রিকার পরিচয় হিসেবেই দেখেন। এই কারণেই মরক্কোর দলের এই উঠে আসার আগে ফ্রান্সের দলটিকে শুধু ফ্রান্স নয়, গোটা আফ্রিকার স্বপ্নের ধারক-বাহক বলেও ভাবা হতো। যেখানে আফ্রিকার  আরও চারটি দেশ- তিউনিশিয়া, সেনেগাল, ঘানা এবং ক্যামেরুন বিশ্বকাপে খেলছে এবং জয়ের স্বাদও পেয়েছে। তার মধ্যেও আফ্রিকান স্বপ্নের অংশীদার হয়েছিল ফ্রান্সের এই দল। ফ্রান্সের অন্যতম তারকা কিলিয়ান এমবাপে আফ্রিকা বংশোদ্ভুত। মরক্কোর দলের তারকা আশরাফ হাকিমিকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু মনে করেন এমবাপে। তাঁরা দুজনে ফরাসি ফুটবল ক্লাব প্যারিস সাঁ জাঁ-তে খেলেন। কেউ যদি আফ্রিকাকে সমর্থন করেন, তাহলে তিনি কীভাবে এমবাপে এবং হাকিমির মধ্যে বেছে নেবেন। কীভাবে তিনি আফ্রিকান বংশোদ্ভুততে ভর্তি ফরাসি দল এবং মরক্কোর মতো একটি দল যেটি কখনও নিজেকে আরব, কখনও আফ্রিকান, কখনও আবার ইউরোপিয়ান হিসেবে দাবি করে- এই দুটির মধ্যে বেছে নেবে।


মরক্কোর দল নিজেও সমসত্ত্বতা দেখায় না। এই দলের তিনজন ফ্রান্সে জন্মেছে। দলের কোচেরও জন্ম ফ্রান্সে। মরক্কো দল গড়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা তাদের অভিবাসীদের উপর ভরসা করেছে। দলের গোলকিপার ইউনিস বউনউ কানাডায় জন্মেছেন। হাকিমি মাদ্রিদে জন্মেছেন। দলের ২৬ জনের মধ্যে ১৪ জনই মরক্কোর বাইরে কোথাও জন্মেছেন। কে কোথায় কাকে সমর্থন করবেন তা নিয়ে একটা দোনামনা থেকে যায় বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু এই বিষয়টি শুধুমাত্র বিশ্বকাপ বা ফুটবলে রয়েছে এমনটা ভাবা যাবে না। ব্রিটেনে যে পাকিস্তানি বা ভারতীয়রা থাকেন তাঁরাও এমন পরিস্থিতিতে পড়েন, যখন ভারত বা পাকিস্তানের ক্রিকেট দল ভারতের সঙ্গে খেলতে আসে। সাম্রাজ্যবাদ এবং উপনিবেশ, জাতীয়তাবাদ এবং কসমোপলিট্যানিজাম-এর ইতিহাস এমনই জড়িয়ে-পেঁচিয়ে থাকে।


লেখক ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস এঞ্জেলেস (ইউসিএলএ) এর ইতিহাস ও এশিয়ান আমেরিকান স্টাডিজের অধ্যাপক।