গণতান্ত্রিক দেশে থাকার প্রকৃত তাৎপর্য নিয়ে সদগুরু   


সদগুরু: ভারতীয় জনসংখ্যার ষাট শতাংশ ৩০ বছর বয়সের নিচে। ৫০ কোটি তরুণ এক বিশাল সম্ভাবনা কেবল তখনই যখন তারা স্বাস্থ্যবান, প্রশিক্ষিত এবং একাগ্র। এটি চমৎকার হতে পারে। যা বিশ্বের অন্য কোনও দেশ করতে পারে না, এই দেশ তা পারে, কারণ এখন তা এত বিশাল এক সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।


সাধারণত, প্রবীণ প্রজন্ম সর্বদা যুবসমাজকে এমনভাবে দেখেন যে যেন তারা একটা রোগ যাকে ঠিক করা দরকার বা যার চিকিৎসা প্রয়োজন। তারুণ্যের কোনও চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। প্রবীণ প্রজন্মের যারা জীবনের থেকে দূরে সরে গিয়েছেন, চিকিৎসা তাদের প্রয়োজন। তাই সর্বদা তারুণ্যকে কোনও রোগ হিসাবে বিবেচনা করার পরিবর্তে, আপনাকে অবশ্যই বুঝতে হবে তরুণরা অন্য সমস্ত মানুষদের থেকে অনেক বেশি জীবন্ত। বিষয়টা শুধু এটাই যে, তারা ইচ্ছাহীন শক্তির কোনও এক অবস্থায় আছে। যদি কোনও অনুপ্রেরণা না থাকে, যদি সঠিক নির্দেশনা না থাকে, তবে এটি খুব সহজেই নেতিবাচক হয়ে যায়।


এখনও পর্যন্ত যে সমস্যাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হল তরুণদের মধ্যে অনুপ্রেরণার সম্পূর্ণ অভাব। এটা ঘটার কারণ হল শিক্ষাব্যবস্থা থেকে অনুপ্রেরণামূলক দিকটির সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া। অনুপ্রেরণা ব্যতীত, কোনও মানুষই, যে সীমাবদ্ধতার মধ্যে সে বাস করে সেই সীমাবদ্ধতার বাইরে উঠতে পারে না – তা শারীরিক, মানসিক বা সামাজিক যে সীমানাই হোক না কেন। তিনি যখন অনুপ্রাণিত হন তখনই মানুষ যে সীমানার মধ্যে বর্তমানে আছেন, সেই সীমাবদ্ধতার বাইরে যেতে আকাঙ্ক্ষা করেন। তাই আমরা যেমন আমাদের সময়, সম্পদ এবং শক্তি আমাদের তরুণদের কাছে তথ্য-জ্ঞান প্রেরণে বিনিয়োগ করছি, তেমনই তাদেরকে অনুপ্রাণিত করতেও আমাদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সময়, শক্তি এবং সম্পদ বিনিয়োগ করতে হবে।


এদেশে শত শত প্রজন্ম ধরে মানুষ একই অবস্থার মধ্যে বসবাস করে আসছেন। হ্যাঁ, মহারাজার সোনার চপ্পল এবং হীরার মুকুট এবং এরকম অনেক কিছু ছিল ঠিকই, কিন্তু সাধারণ মানুষ সবসময় এই দেশে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ভয়ঙ্করভাবে বঞ্চিত অবস্থায় বাস করে এসেছিলেন এবং এখনও আসছেন। আমি এই বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন কারণ আমি যেখানেই যাই, আমি দেখতে পাই যে লোকেরা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী, "ওহ, ভারত সুপার পাওয়ার হতে চলেছে।"


আমরা ভুলে গেছি যে আমাদের মূর্খামির এক দীর্ঘ ইতিহাস আছে। আমরা এতে পারদর্শী! আমরা প্রায় সবকিছুতেই বোকার মতো ভুল করে বসি, তাই না? আমরা একটা ক্রিকেট ম্যাচ থেকে শুরু করে যে কোনও কিছুতেই বোকামি করতে পারি – এমনকি যা ঠিক আমাদের হাতেই আছে তাতেও। সুতরাং, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা এক্ষেত্রে যেন কোনও বোকামি না করে বসি, কারণ আমরা যদি এই পরিস্থিতিটাকে সঠিকভাবে পরিচালনা করি তাহলে ৫০ কোটি মানুষের জীবন অভাবনীয়ভাবে পরিবর্তিত হতে পারে।


আমরা যদি এই বারের এই সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগটাকে হাত ছাড়া করতে না চাই, তাহলে আমাদের কয়েকটি বিষয়ে সংবেদনশীলভাবে কাজ করতে হবে এবং তার মধ্যে একটি হল আমাদের এই বিশাল যুব সমাজকে সংগঠিত করা, লালন করা, গাইড করা, অনুপ্রাণিত করা, প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং একাগ্র করা। এবং সেটা নিজে থেকে ঘটবে না।


সদগুরু একজন যোগী, অতীন্দ্রিয়বাদী এবং নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্ট সেলিং লেখক। ভারতবর্ষের প্রথম ৫০ জন প্রভাবশালী মানুষদের মধ্যে একজন। ২০১৭ সালে ভারত সরকার সদগুরুকে ব্যতিক্রমী এবং বিশিষ্ট সেবার জন্য ভারতের সর্বোচ্চ বার্ষিক বেসামরিক পুরস্কার পদ্মবিভূষণে ভূষিত করে। তিনি বিশ্বের বৃহত্তম গণ-অভিযান, কনশাস প্ল্যানেট – সেভ সয়েল (Conscious Planet - SaveSoil)-এর প্রতিষ্ঠাতা, যা পৃথিবী জুড়ে ৩৯০ কোটিরও বেশি মানুষকে স্পর্শ করেছে।


 


বিঃদ্রঃ - প্রতিবেদনটি এবিপি লাইভ কর্তৃক সম্পাদিত নয়