সদগুরু: গ্রহদের যাত্রার গতিবিধিতে, উত্তর গোলার্ধে, দক্ষিণায়ণ এক নতুন শুরু, এক নতুন সম্ভাবনা, জীবনের এক পুনরুজ্জীবনকে সূচিত করে। বছরের এই সময়ে পৃথিবীকে দেখলে মনে হয় যেন সে নিজের খোলস ছাড়ছে। এই গ্রহের অনেক প্রাণীরাই এই সময়ে খোলস ত্যাগ করে; যখন তাদের মনে হয় উচিত সময় এসেছে, তখন তারা তাদের ত্বকের এক স্তরকে ত্যাগ করে দেয়। এ এক নতুন শুরু।

  


অনেক মানুষই ভাবেন যখন নতুন বছর আসে, তখন তাঁদের পক্ষে সবচেয়ে বোকাবোকা যে কাজগুলো করা সম্ভব সেগুলো করা উচিত, কারণ তাঁদের একটা ধাৰণা রয়েছে যে মজা করা মানেই হল আপনাকে উল্টোপাল্টা কিছু করতে হবে। কবে যে আমরা বুঝব গভীর-প্রগাঢ় কিছু করার মাধ্যমেও আমরা মজা করতে পারি, কে জানে? তো, এই আসন্ন নতুন বছরে, নিজের জীবনের গন্ডির বাইরে বেরিয়ে আরও বড় কিছু করার সাহস ও অঙ্গীকার কি আপনার মধ্যে আছে? কারণ মানুষ হওয়ার মানেতো সেটাই। অন্য সমস্ত জীব তাদের নিজ নিজ সহজাত প্রবৃত্তির ভিত্তিতে কাজ করে, তারা প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী বাঁচে-মরে। মানুষ হওয়ার মানে হল আমরা এই তথাকথিত প্রকৃতির নিয়মকে অতিক্রম করতে পারি এবং আমাদের নিজেদের চেয়েও বড় কিছুকে সম্ভব করে তুলতে পারি। 


কারণ আপনি এই জীবনকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন না; জীবনকে শুধুই আরও বড় করতে পারবেন। আপনি এখানে শুধু বসে থাকলেও, এটা মারা যাবে। আপনি যদি চলাফেরা করেন, এটা মারা যাবে।  যদি বোকাবোকা কিছু করেন, তাহলেও এটা মারা যাবে। যদি অসাধারণ কিছু তৈরি করেন, তাহলেও এটা ঠিকই মারা যাবেই। এই জীবনটাকে আপনি একটা ধাঁচে ফেলে সেটাকে কোথাও ধরে রাখতে পারবেন না। জীবনকে এগোতেই হবে। প্রশ্নটা শুধুই, কোন পথে সে এগোবে? এটাইতো মানুষ হওয়ার বিশেষ অধিকার। অন্য কোনও জীবের কাছেই নিজের জীবনকে আরও বড় করে তোলার কোনও বিকল্প থাকে না - তাদের জন্য সবকিছুই ধরা বাধা থাকে। কিন্তু আমরা নিজের জীবনকে কীভাবে আরও সুবিশাল করব - কতটা সুন্দর, কতটা গভীর, কতটা চমৎকার, কতটা বোকাবোকা, কতটা অপদার্থ, বা কতটা অলস করে তুলবো - তা আমাদেরই হাতে আছে। 


আপনি যদি জগতে চমৎকার কিছু তৈরি করতে পারেন তাহলে ভালই,... কিন্তু তা না পারলেও, অন্ততপক্ষে আপনার অন্তরে যেন চমৎকার কিছু অবশ্যই হয়, তাই না? আর অন্তরে যদি চমৎকার কিছু ঘটে চলে, তাহলে জগৎ আপনাকে বিশ্বে চমৎকার কিছু তৈরি করা থেকে কীভাবে আটকাতে পারে? আপনাকে থামাতে পারে এমন কোনও ক্ষমতা জগতের হাতে নেই। তাহলে আমাদের সংবিধানে কি এরকম কিছু সংযোজন করা উচিত যে “সবার আগে আমাদের প্রত্যেককে আনন্দে থাকতে হবেই”? এর জন্য কোনও আইন বা ঘোষণার দরকার হয় না। নিজের বোধকে জাগিয়ে তুলতে কোনও দৃঢ়-প্রতিজ্ঞা লাগে না। 


আপনারও খোলস ছাড়ানোর সময় এসে গেছে, পুরোনো চামড়াটা ছাড়িয়ে তরতাজা হয়ে প্রাণবন্ত হয়ে জেগে উঠুন। যখন কোনও সাপ, আরশোলা বা অন্য যে কোনও প্রাণী খোলস ছাড়ে, তখন তারা কিছু সময়ের জন্য সামান্য দুর্বল-অরক্ষিত হয়ে পড়ে। প্রকৃতির মাঝে কয়েক দিন বা কয়েক সুপ্তাহের জন্য চামড়া-ছাড়ানো অবস্থায় জীবন-যাপন করাটা একটা বড় ঝুঁকি। একদল পিঁপড়েও পর্যন্ত আপনাকে পেয়ে বসতে পার এবং আপনার জীবন নিয়ে নিতে পারে। এটা একটা বড় ঝুঁকি, কিন্তু তবুও এই ছোট ছোট প্রাণীদেরও এই ঝুঁকি নেওয়ার জন্য যথেষ্ট জ্ঞান থাকে। সময় এসেছে আপনিও নিজের জীবনে সেই ঝুঁকিটা নেন। আপনার নিজের ব্যাপারে কিছু একটা ছিঁড়ে বাদ দিন যা বহুদিন ধরে আপনার সঙ্গে ঝুলে রয়েছে কিন্তু কোনও কাজে আসে না। আগামী কয়েক দিনেই সেটাকে ছিঁড়ে বাদ দিন। নতুন কিছু হতে দিন। আসুন দেখা যাক জীবন আপনার জন্য কী করে।     


যোগী, অতীন্দ্রিয়বাদী, দিব্যদর্শী এবং নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ বেস্ট সেলিং (সর্বাধিক বিকৃত বইয়ের)লেখক সদগুরু ভারতের পঞ্চাশ জন সবচেয়ে প্রভাবশালী মানুষদের মধ্যে স্থান পেয়েছেন। অসাধারণ ও বিশিষ্ট পরিষেবার জন্য তিনি ২০১৭ সালে ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত পদ্ম বিভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন যা ভারতের সর্বোচ্চ বার্ষিক অসামরিক পুরস্কার। তিনি, Conscious Planet -মাটিকে বাঁচান (কনশাস প্ল্যানেট বা সচেতন পৃথিবী) নামক পৃথিবীর সর্ববৃহৎ জন-অভিযানের প্রবর্তক যা ৩৯০ কোটিরও বেশি মানুষকে স্পর্শ করেছে।