নয়াদিল্লি: কয়েক হাজার টাকার ঋণ শোধ করতে না পেরে আত্মঘাতী হন দেশের কৃষকরা। দিনে দিনে সাধারণ মধ্যবিত্তের ঘাড়ে ঋণের বোঝা বেড়ে চলেছে। দেশের সাধারণ মানুষ যেখানে রেহাই পাচ্ছেন না, সেখানে শিল্পপতিদের কোটি কোটি টাকার ঋণ মকুব করা হচ্ছে কেন, কেন ব্যাঙ্কের খাতা থেকে অনুৎপাদক সম্পদের হিসেব মোছা হচ্ছে, তা নিয়ে লাগাতার প্রশ্ন তুলে চলেছেন বিরোধীরা। এই আবহেই কেন্দ্র জানাল, গত পাঁচ বছরে দেশের রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কগুলি প্রায় ১০ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করেছে। (Banks Write Off Loans) অর্থাৎ হিসেবের খাতা থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে।


চলতি সপ্তাহে সংসদে এই তথ্য তুলে ধরে কেন্দ্রীয় সরকার। একটি প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়, গত পাঁচ অর্থ বর্ষে রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কগুলি ৯.৯০ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করেছে। দেশের অর্থমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধরি জানান, ২০২৩-'২৪ অর্থবর্ষে ১.৭০ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। গত বছর ২.০৮ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়। ২০১৯-'২০ সালে সর্বোচ্চ ২.৩৪ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করে কেন্দ্র। (Modi Government)'


ঋণ মকুব এবং ঋণ অবলোপনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ঋণ অবলোপনের অর্থ, গ্রাহককে দেওয়া ঋণের টাকাকে আর সম্পদ হিসেবে ধরে না ব্যাঙ্ক। ফলে ব্যালেন্স শিটে অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ কমে যায়। যে সম্পদ থেকে আয়ের কোনও সুযোগ থাকে না, তাকেই অনুৎপাদক সম্পদ বলা হয়। ঋণ যেহেতু মকুব করা হয়নি, এক্ষেত্রে গ্রাহকের থেকে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারে ব্যাঙ্ক। 


কেন্দ্র জানিয়েছে, ২০২০-'২১ অর্থবর্ষে ২.০২ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করে রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কগুলি। ২০২১-'২২ সালে ১.৭৪ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার নির্দেশিকা অনুযায়ী, অনুৎপাদক সম্পদের হিসেব ব্যালান্স শিট থেকে সরিয়ে দেওয়াই রীতি। কংগ্রেস সাংসদ রণদীপ সুরজেওয়ালার প্রশ্নের জবাবে এমনটা জানান কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। 


রাজ্য়সভায় কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জানান, এক্ষেত্রে অনুৎপাদক সম্পদের হিসেবে ব্যালেন্স শিট থেকে সরিয়ে দিলেই রেহাই পান না ঋণগ্রহীতারা। বরং টাকা তুলতে চেষ্টা চালিয়ে যায় ব্যাঙ্ক। বিভিন্ন উপায়ে ঋণের টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলে। তবে গত পাঁচ বছরে যে ৯.৯ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে, তার মধ্যে ১.৮৪ লক্ষ টাকাই ব্যাঙ্ক উদ্ধার করতে পেরেছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র।


রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান তুলে ধরে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০২০ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ ছিল ৮ লক্ষ ৯৬ হাজার ৮২ কোটি টাকা।, ২০২১ সালের ৩১ মার্চে তা ৮ লক্ষ ৩৫ হাজার ৫১ কোটি এবং ২০২২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত তা কমে ৭ লক্ষ ৪২ হাজার ৩৯৭ কোটি হয়েছে। ২০২৩ সালের ৩১ মার্চে তার আরও কমে ৫ লক্ষ ৭১ হাজার ৫৪৪ কোটি এবং ২০২৪ সালের ৩২ মার্চে আরও কমে ৪ লক্ষ ৮০ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা হয়।


দেশে জাল নোটও কমে ২ লক্ষ ২২ হাজার ৬৩৯ কোটিতে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। তিনি জানান, ২০১৬ সালে নোটবন্দির পর থেকে জাল নোট নিয়ে ৩৯টি মামলা দায়ের করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা NIA. এখনও পর্যন্ত ৮ কোটি ৫০ লক্ষ ৬২ হাজার ৫০০ টাকার জালনোট উদ্ধার হয়েছে।


এর আগে, গত বছর ডিসেম্বর মাসে লোকসভায় প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্র জানিয়েছিল, গত পাঁচ বছরে নথিভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি ১০.৬ লক্ষ কোটির ঋণ অবলোপন করেছে, যার ৫০ শতাংশই বড় শিল্প সংস্থাগুলির নেওয়া ঋণ। ২৩০০ ঋণগ্রহীতা প্রায় ৫ কোটি টাকা করে ঋণ নিয়েছিলেন। ইচ্ছাকৃত ভাবে ২ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ মেটানো হয়নি। ২০১৪-'১৫ থেকে ন'টি অর্থবর্ষে নথিভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের হিসেবের খাতা থেকে ১৪ লক্ষ ৫৬ হাজার ২২৬ কোটি টাকার অনুৎপাদক সম্পদ মুছে দেওয়া হয়েছে বলে গত বছর অগাস্টে লোকসভায় জানায় কেন্দ্র। এর মধ্যে বড় শিল্প সংস্থার ঋণ মোছা হয় ৭ লক্ষ ৪০ হাজার ৯৬৮ কোটির। 


আরও পড়ুন: Job Offer: ১০ লাখ কর্মী কাজ পাবেন এই ইন্ডাস্ট্রিতে, এই মাসেই হবে বড় নিয়োগ