নয়াদিল্লি: নির্মলা সীতারমনের বাজেট ফাঁপা, বাগাড়ম্বরে পরিপূর্ণ, একই কথার পুনরাবৃত্তি বলে দাবি করলেন রাহুল গাঁধী। এবারের বাজেটে ধসে পড়া অর্থনীতির প্রধান সমস্যাগুলি নিরসনের চেষ্টা হয়নি বলে অভিযোগ করে সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।
কৃষিক্ষেত্রে সরকার আরও বেশি অর্থ ঢালবে বলে বাজেটে ঘোষণা করেন নির্মলা। এক দশকে তলানিতে চলে যাওয়া আর্থিক বৃদ্ধি চাঙ্গা করতে কেন্দ্রের জল কর্মসূচিরও ঘোষণা করেন তিনি। পাশাপাশি সবচেয়ে বড় বিমা সংস্থা তথা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান এলআইসি বা জীবনবিমা নিগমের শেয়ারের একাংশ ইনিশিয়াল পাবলিক অফারের (আইপিও) মাধ্যমে বিক্রির সিদ্ধান্তও ঘোষণা করেন নির্মলা। এর প্রতিক্রিয়ায় রাহুল সাংবাদিকদের বলেন, দেশের সামনে প্রধান সমস্যা বেকারি। যুবকদের কাজ পেতে সাহায্য করবে, এমন কোনও কৌশলগত ভাবনা দেখলাম না। কৌশলগত কারিকুরি আছে, কিন্তু কোনও কেন্দ্রীয় ভাবনা নেই। এতে সরকারের প্রচার ভালই করা হয়েছে, কিন্তু প্রচুর পুনরাবৃত্তি, বাগাড়ম্বর। শুধুই কথা, বাস্তবে কিছুই হচ্ছে না।
রাহুল ট্যুইটও করেন, আমাদের যুবকরা কাজ চান, কিন্তু পেলেন সংসদীয় ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভাষণ যাতে সত্যিই তাত্পর্য্যপূর্ণ কিছুই নেই। প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী-উভয়কেই দেখে মনে হয়, এরপর কী করণীয়, তার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই ওঁদের।


কংগ্রেসের শীর্ষনেতা আহমেদ পটেল একগুচ্ছে ট্যুইটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বাজেট ভাষণে ‘সাধারণ নাগরিকদের সাহায্য করার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসার পিছনেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে’ বলেও অভিযোগ করেন। বলেন, দীর্ঘতম বাজেট ভাষণ। অচ্ছে দিন, নয়া ভারতের পরও সবচেয়ে নিষ্প্রভ ভাষণ। এখন মনে হয়, সরকার ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনীতির টার্গেটও বাতিল করেছে। এই বাজেট শুধু অর্থনীতির দেউলিয়াপনাই দেখাচ্ছে না, সরকারের ভাবনাচিন্তার দৈন্যই প্রকট করেছে।



নির্মলা এমন সময়ে বাজেট পেশ করলেন যখন ভারত গত এক দশকে সবচেয়ে বড় আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন। সরকারের হিসাব, চলতি বছরে আর্থিক বৃদ্ধি হার ২০১৯ অর্থবর্ষের ৬.১ শতাংশ থেকে কমে ২০২০ অর্থবর্ষে ৫ শতাংশে ঠেকতে পারে। এটা হবে ১১ বছরে সর্বনিম্ন হার।
শিল্প উত্পাদনের সূচক (আইআইপি) ইতিবাচক দিকে মোড় নিলেও ২০১৯ এর অক্টোবরে মাইনাস ৪ শতাংশ সংকোচনের ফলে নভেম্বরে দাঁড়ায় ১.৮ শতাংশে। অর্থনীতির নানা সেক্টরে ম্যানুফ্যাকচারিং সংক্রান্ত কার্যকলাপের হদিশ দেয় আইআইপি। শাকসব্জির দাম ক্রমাগত বৃদ্ধির জেরে ভোগ্যপণ্য সূচক মুদ্রাস্ফীতিও ৬৫ বছরে সবচেয়ে বেশি বেড়ে ২০১৯ এর ডিসেম্বরে হয় ৭.৪ শতাংশ। কংগ্রেস আর্থিক মন্দার প্রশ্নে এনডিএ সরকারকে নিশানা করে দাবি করে, আর্থিক ক্ষেত্র, ক্রমবর্ধমান বেকারি ও কৃষি সঙ্কটের জন্য তারাই দায়ী।
কংগ্রেস সরকারি ট্যুইটার হ্যান্ডলে বাজেটের নানা দিকের সমালোচনা করে বলেছে, গত বছর একই সময় থেকে উল্লেখযোগ্য পতন ঘটলেও কোর সেক্টরের বৃদ্ধির হার ২০১৯ এর ডিসেম্বর বহাল রয়েছে ১.৩ শতাংশে। বাজেট ২০২০ এই সিরিয়াস বিষয় মোকাবিলায় সরকার কী করতে চাইছে, সে ব্যাপারে কোনও রোডম্য়াপ বা প্ল্যান হাজির করতে পারেনি। দলের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা প্রশ্ন তোলেন, কেন ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার জুমলার কোনও উল্লেখ নেই, কর্মসংস্থান শব্দটাই নেই বাজেট ভাষণে। ৫টি স্মার্ট সিটি তৈরির ঘোষণার উল্লেখ করেও তিনি বলেন, প্রথম ১০০টা স্মার্ট সিটির কী হাল হয়েছে। গরিবি সীমারেখার নীচে থাকা মানুষের সংখ্যা কী করে বাড়ল, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।


সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ট্যুইটে বাজেটকে স্রেফ স্লোগান, মামুলি বলে কটাক্ষ করেন, বলেন, এতে মানুষের সঙ্কট, দুর্দশা, ক্রমবর্ধমান কর্মহীনতা, গ্রামীণ মানুষের বেতন হ্রাস, কৃষকের সঙ্কট, আত্মহত্যা, লাফিয়ে বেড়ে চলা মূল্যবৃদ্ধি মোকাবিলায় বলার মতো কিছুই নেই।