নয়াদিল্লি: আগামীকাল সাধারণ বাজেট পেশ করবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বাজেটে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা তো আকাশছোঁয়া। কিন্তু সাধ থাকলেই তা পূরণ হওয়া সম্ভব! কিন্তু কতটা পূরণ হবে, তা জানতে আপাতত আগামীকালের বাজেটের দিকে তাকিয়ে আমজনতা। এমনিতেই করোনা অতিমারীর ধাক্কায় বিপর্যস্ত জনজীবন। সাধারণ মানুষের পকেটে টান পড়েছে। ফলে বাজেটে এমন কিছু ঘোষণার দিকে তাকিয়ে সাধারণ মানুষ, যেখানে জিনিসপত্রের দাম কমবে বা সঞ্চয়ে সহায়ক হবে বা আয় বাড়াবে।
বাজেট পেশ মানেই বড়সড় সংখ্যা, প্রচুর অর্থ, কয়েক কোটি টাকার প্রকল্প, কর্মসূচি ও নীতি ঘোষণা। এরমধ্যে সাধারণ মানুষের নজর থাকে তাঁদের জন্য গৃহীত স্বস্তিকর পদক্ষেপগুলির দিকে। তার মধ্যে থাকে খাদ্য, পোশাক, শিক্ষা, ওষুধ, আবাসন ও স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় হ্রাস- সর্বোপরি কর ও জ্বালানির দামে ছাড়। আর এগুলিই দেশের যে কোনও পরিবারের মৌলিক চাহিদার মধ্যে পড়ে।
যে কোনও সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি নিয়েই উদ্বেগ বেশি থাকে। এগুলির মধ্যে রয়েছে, মৌলিক খাদ্য সামগ্রী-সব্জি, ফল, শষ্য, ডাল, মশলা, ভোজ্য তেল, দুধ এবং মনোহারি ও পোশাক সহ যাতায়াত ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়।
করোনার আবহে মাথাপিছু স্বাস্থ্যখাতে খরচ বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। প্রায় প্রত্যেক পরিবারেরই স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বেড়েছে। তা ছোটখাটো অসুখে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শই হোক বা হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা।
করোনা অতিমারী বিশেষ করে মধ্যবিত্তদের পারিবারিক আর্থিক চিত্র আমূল বদলে দিয়েছে। অনেককেই তাঁদের প্রিয়জনদের চিকিৎসায় জীবনের সঞ্চয় ব্যয় করে দিতে হয়য়েছে। গত বছরের এপ্রিল-মে মাসে করোনার দ্বিতীয় ঢেউইয়ের সময় অনেক পরিবারকেই চিকিৎসার ব্যয় সামলাতে বাইরের সাহায্য নিতে হয়েছে বা ধার করতে হয়েছে। চিকিৎসার জন্য আর্তি, হাসপাতালে বেড, ওষুধ বা চিকিৎসার জন্য পরামর্শ গ্রহণের সমস্যা এর আগে কখনও এত বড়সড় আকারে দেখা যায়নি।
কোভিড দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বড়সড় ফাঁক সামনে এনে দিয়েছে এবং কোনও কোনও সময় অসহায়তার পরিস্থিতির তৈরি করেছে। সাধারণ মানুষের অনেককেই চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে এবং তাঁরা বাজেট থেকে কিছু স্বস্তিদায়ক ঘোষণার আশা করছেন। কর ছাড় থেকে শুরু করে কোভিড অন্যান্য বড়সড় অসুস্থতার চিকিৎসার ব্য়য় কমানোর পদক্ষেপ আশা করছেন তাঁরা।
কেন্দ্র ইতিমধ্যেই মূল আয়কর ছাড়ের সীমা ও ৮০ সি-তে ছাড়ের সীমা বাড়িয়েছে। চালু করেছে স্টান্ডার্ড ডিডাকশন ও বিকল্প কর স্ল্যাব হারের সূচনা করেছে। এগুলি সহায়ক, কিন্তু কোভিডের ফলে বিপর্যয়ের আবহে আরও কিছু স্বস্তিদায়ক ব্যবস্থার প্রয়োজন। তাই প্রত্যেক পরিবারই আরও কিছু উপশমের আশায় বুক বাঁধছেন।
স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াও করোনা আবহে ধাক্কা খেয়েছে নয়া কর্মসংস্থান গড়ে ওঠার বিষয়টি। কর্মসংস্থানের সঙ্কোচন তো হয়েইছে, সেইসঙ্গে বহু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশকে ছাঁটাই করা হয়েছে। অনেকের মাইনে কমেছে। আবার অনেকের মাইনে পাওয়ার বিষয়টিই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বা পেলেও তা অনেক ক্ষেত্রেই কম।
যে কোনও সরকারের কাছেই কর্মসংস্থান তৈরির কাজ একটা বড় চ্যালেঞ্জ। মধ্যবিত্তরা চান কর্মসংস্থান, করে লাগাম এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ছাড়। জ্বালানির মূল্য কম থাকবে, এমন আশাও থাকে। বিনিয়ন্ত্রণের পর থেকে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলেছে। এ নিয়ে অসন্তোষের জেরে কিছুজিন আগে কেন্দ্র ও কয়েকটি রাজ্য সরকার জ্বালানির দাম কিছুটা কমাতে পদক্ষেপ নিয়েছিল। কিন্তু করোনার উপদ্রব অব্যাহত এবং সেই সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন সম্পর্কে উত্তেজনার কারণে বিশ্বে অশোধিত তেলের দাম উর্ধ্বমুখী। ফলে এ ক্ষেত্রে বড়সড় কিছু প্রত্যাশা পূরণ হবে বলে মনে হচ্ছে না।
তাই চলতি পরিস্থিতি ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার মধ্যে আগামীকাল অর্থমন্ত্রী সংসদে বাজেট পেশ করবেন। এতে কী ঘোষণা হয়, আপাপত সেদিকেই তাকিয়ে আমজনতা।