নয়াদিল্লি: দিন দিন জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে। কিন্তু সেই তুলনায় নেই রোজগার। তার উপর আবার রয়েছে করের বোঝা। রোজগারের উপর কর দেওয়ার পাশাপাশি, কিছুন কিনতে গেলে, কোথাও খেতে গেলেও দিতে হয় পণ্য ও পরিষেবা কর। বছর বছর বাজেট হলেও, মধ্যবিত্তদের অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয় না। অথচ তাবড় কর্পোরেট সংস্থার থেকে এই মধ্যবিত্তরাই বেশি কর দেন। (Union Budget 2024)


ভারতের মতো দেশে মধ্যবিত্তরাই মূলত জাঁতাকলে আটকে। আয়ের উপর যেমন কর দিতে হয় মধ্যবিত্ত মানুষদের, তেমনই আলাদা করে দিতে হয় GST-ও। তাঁদের প্রদত্ত করের উপর ভিত্তি করেই দেশের যাবতীয় পরিকাঠামো এবং জনমোহিনী প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত হয়। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, আয়কর এবং কর্পোরেট কর মিলিয়ে দেশের মাত্র ২ কোটি ২৪ লক্ষ মানুষই কর দেন, যা মোট জনসংখ্যার ১.৬ শতাংশ। (Budget 2024)


বিগত কয়েক বছরে প্রত্যক্ষ করে বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গিয়েছে। এই প্রত্যক্ষ কর দুই রকমের, আয়কর এবং কর্পোরেট কর। কিন্তু কর্পোরেট করের চেয়ে বেশি পরিমাণ আয়কর জমা হয় রাজকোষে। ২০২২-'২৩ সাল থেকেই কর্পোরেট করের চেয়ে বেশি আয়কর জমা হচ্ছে, যার সিংহভাগই মধ্যবিত্তদের রোজগার থেকে আদায় করা করা। আমেরিকার মতো দেশে এই রীতি স্বাভাবিক হলেও, ভারতের মতো দেশে এই রীতি কাম্য নয়। কারণ আমেরিকার জনসংখ্যার ৪৩ শতাংশ কর দেন, ভারতে সেই হার ৩ শতাংশও নয়। 



আরও পড়ুন: Union Budget 2024: প্রথমবার চাকরিতে ঢুকলে একমাসের মজুরি, EPFO-ও জমা দেবে কেন্দ্র, জানালেন নির্মলা


সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯-'২০ সালে কর্পোরেট বাবদ সরকারের আয় হয় ৫ লক্ষ ৫৬ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা। সেই নিরিখে আয়কর বাবদ রাজকোষে ঢোকে ৪ লক্ষ ৯২ হাজার ৬৫৪ কোটি। ২০২১-'২২ সালে কর্পোরেট কর আদায় হয় ৭ লক্ষ ২ হাজার ৩৭ কোটি। সেই নিরিখে আয়কর ৬ লক্ষ ৯৬ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা ছিল। ২০২২-'২৩ সাল থেকে ছবিটা পাল্টাতে শুরু করে। সে বছর কর্পোরেট কর থেকে আয় হয় ৮ লক্ষ ২৫ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। আয়কর থেকে ৮ লক্ষ ৩৩ হাজার ২৬০ কোটি আয় হয়। ২০২৩-'২৪ সালে কর্পোরেট কর থেকে ৯ লক্ষ ২২ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা আয় হলেও, আয়কর থেকে সরকার ১০ লক্ষ ২২ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা আয় করে।  কর্পোরেট সংস্থাগুলি যেখানে ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট পায়, সাধারণ মধ্যবিত্ত GST রিটার্ন পান না।


কর্পোরেট জগতের সকলেই কর মেটায় না। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ২০২২ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত দেশে ১৫ লক্ষ বেসরকারি সংস্থা রয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩-'২৪ সালে মাত্র ৫.৬ লক্ষ কর্পোরেট সংস্থাই কর দেয় এবং ৫.১ লক্ষ জিরো ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করে বলে জানিয়েছেন  রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা প্রাক্তন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার অমিতাভ তিওয়ারি। তাঁর দাবি, মাত্র ৫ শতাংশ কর্পোরেট সংস্থাই ৯৭ শতাংশ কর মেটায়। প্রথম সারির ১৫০ সংস্থা শুধুমাত্র ৪০ শতাংশ কর দেয়। মধ্যবিত্তের পরিবর্তে কর্পোরেটদের থেকে বেশি কর নেওয়া উচিত বলে মত অমিতাভের। লোকসভা নির্বাচনের আগে একই কথা শোনা গিয়েছিল কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর মুখেও।


কর ছাড় দিতে এবছর বাজেটে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন বাড়িয়ে ৭৫ হাজার করেছে সরকার। লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কা খাওয়ার পর সরকার ভারসাম্য রাখাতে উদ্যোগী হয়েছে বলে মত অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু কর্মসংস্থান বাড়াতে কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে যে ভর্তুকি দেওয়ার ঘোষণা করেছে সরকার, তাতে কর্মসংস্থান আদৌ বাড়বে কি না,  কর্পোরেট সংস্থাগুলি আরও লাভবান হবে কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে। এবার ভারতে বিনিয়োগকারী বিদেশি কর্পোরেট সংস্থাগুলির করও ৪০ থেকে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ কমিয়েছে। তাই এই বাজেট আদানি-আম্বানিদের, সাধারণ মানুষের জন্য কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন রাহুল।