2022 Citroen C3 Turbo petrol review: ভারতে চলে এল ফরাসি সংস্থা সিট্রনের Citroen C3। দেশের বাজারে সিট্রনকে মূলধারার মঞ্চের নামানোর উদ্দেশ্যে লঞ্চ করা হয়েছে এই গাড়ি। জুলাইয়ের 20 তারিখে লঞ্চ হবে এই গাড়ি। 1 জুলাই থেকে গাড়ির প্রি-বুকিং শুরু হয়ে গিয়েছে। বৃষ্টিতে ভেজা গোয়াতে এই গাড়ির টার্বো পেট্রল মডেলের রিভিউ করার সুয়োগ পেয়েছিলাম আমরা।
Citroen C3: এসইউভি না হ্যাচব্যাক ?
আপনি হয়তো ভাবছেন যে এটি একটি SUV না হ্যাচব্যাক? সিট্রন এই গাড়িকে একটি প্রিমিয়াম হ্যাচব্যাক বলছে। কিন্তু 180 এমএম গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স হওয়ায় এটি আমাদের ক্রসওভারের মতো মনে হয়েছে। সি 3 অবশ্যই সামগ্রিক অনুপাতের দিক থেকে তার শ্রেণির অন্যতম সেরা গাড়ি। এই গাড়িকে সরাসরি আপনি দৈর্ঘ্য-প্রস্থের ভিত্তিতে এসইউভি বা হ্যাচব্যাকের বিভাগে ফেলতে পারবেন না। এই গাড়ি দুইয়ের মধ্যে সমতা বজায় রেখেছে।
Citroen C3 review: কেমন দেখতে গাড়ি ?
গাড়ির সামনের দিকটি সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। এখানেই সবচেয়ে বেশি মনোযোগ পায় গাড়ি। বড় সিট্রন লোগোটি স্বতন্ত্র ও ক্রোম ফিনিসে রেখেছে কোম্পানি। খুবই দক্ষতার সঙ্গে ডিআরএলগুলি গ্রিলের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। আপনি এর নিচে হ্যালোজেন ল্যাম্প ও একটি স্কিড প্লেট পাবেন। C3-এর সাহায্যে আপনি ডুয়াল-টোন সহ অসংখ্য রঙের স্কিম দেখতে পাবেন। চাইলে গাড়িতে নিজের মতো করে চেহারা দিতে পারেন গ্রাহক। গাড়িতে সামনের অংশে চোখে পড়বে এর বাম্পারের উপর কমলা রঙের ছোঁয়া। তবে সাইডের দরজা আপনার নাও পছন্দ হতে পারে। আমরা যে গাড়িটি চালিয়েছি, তাতে 15 ইঞ্চির চাকা ছিল, কিন্তু অ্যালোয় ছিল না।
Citroen C3: ভিতর থেকে কেমন গাড়ি ?
ভাল গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স হওয়া সত্ত্বেও সিট্রন প্রথম থেকেই দাবি করছে এটি কোনও এসইউভি নয়। তবে এর দরজাটি বড় ও প্রশস্ত হওয়ায় ঢুকতে বা বেরোতে কোনও ধরনের সমস্যা হয় না। অনেকটা বাইরের মতই কুল লুক পাবেন ভিতরে। আপনি ড্যাশবোর্ডের রংও এখানে পরিবর্তন করতে পারেন। এমনিতে ধূসর রঙে ড্যাসবোর্ড দেখতে পারবেন গাড়িতে। কমলা রঙের ড্যাসবোর্ড কভার গাড়ির রংকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। গুণমানের দিক থেকে প্রতিদ্ব্ন্দ্বীদের পিছনে ফেলে দেবে এই গাড়ি। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, এর এয়ারকন ভেন্টগুলি খুব ভাল ফিনিস দিয়েছে। তবে কিছু জায়গায় ড্যাশবোর্ড শক্ত মনে হয়েছে। তবে কেবিনে কোনও সস্তা জিনিস ব্যবহার করা হয়নি। 10 ইঞ্চির বড় স্ক্রিন থাকলেও ওয়্যারলেস স্মার্টফোন কানেক্টিভিটি পাবেন না এই কেবিনে। টাচস্ক্রিনটি ভালভাবে ডিজাইন করায় সহজেই ব্যবহার করা যায়।
Citroen C3 review: কী কী ফিচার রয়েছে গাড়িতে
সম্পূর্ণ ডিজিটাল ক্লাস্টার রয়েছে গাড়িতে। স্টিয়ারিং কন্ট্রোলের মধ্যেই পাবেন ফিচারের অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণের সুবিধা।কেবিনের গুণমান আমাদের অবাক করেছে। তবে টপ-এন্ড ট্রিমে অটোমেটিক ক্লাইমেট কন্ট্রোলের অভাব চোখ পড়বে। গাড়িতে একটি ম্যানুয়াল এসি ছাড়াও পিছনে কোনও ক্যামেরা পাবেন না। তবে পিছনে পার্কিং সেন্সর দিয়েছে কোম্পানি।
Citroen C3: এই বৈশিষ্ট্যগুলি পাবেন না গাড়িতে
ডুয়েল এয়ারব্যাগ, ওয়্যারলেস চার্জিং, রেয়ার ওয়াইপার বা কানেক্টেড কার প্রযুক্তির না দিয়ে খরচ কমানো হয়েছে গাড়ির। তবে সামনে ও পিছনে দ্রুত চার্জিংয়ের পোর্ট সহ একটি ভাল শব্দযুক্ত 4-স্পিকার অডিও সিস্টেম পাবেন গাড়িতে। পিছনে এসি ভেন্ট না থাকা সত্ত্বেও কেবিনটি বেশ ভালভাবে ঠান্ডা করে।
Citroen C3 review: বসার জায়গা কেমন ?
C3 তার প্রত্যাশিত প্রতিদ্বন্দ্বীদের বসার জায়গার ক্ষেত্রে পরাজিত করে। পিছনের আসনগুলি বেশ চওড়া। বড় জানালা থাকার কারণে কেবিন বেশি খোলামেলা মনে হয়। লম্বা ব্যক্তিদের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে পিছনের সিটে। তবে পিছনের আসনে নির্দিষ্ট হেডরেস্ট থাকলেও মাঝের যাত্রীর জন্য তা নেই। গাড়িতে 315 লিটারের বুটস্পেস পাবেন ক্রেতা। এ ছাড়াও গাড়িতে বেশ কয়েকটি স্টোরেজ স্পেস রয়েছে।
Citroen C3: কত শক্তিশালী ইঞ্জিন গাড়িতে ?
আপনি এই গাড়িতে 1.2 লিটারের অ্যাসপিরেটেড পেট্রল বা আরও শক্তিশালী 1.2 লিটারের টার্বো পেট্রল পাবেন। আমরা আমাদের ড্রাইভের জন্য শক্তিশালী টার্বো সংস্করণটি বেছে নিয়েছিলাম। পরিসংখ্যান বলছ, সহজেই অন্যান্য এসইউভি বা হ্যাচব্যাককে নিছক শক্তিশালী ইঞ্জিনের জায়গায় হারাবে Citroen C3। এই হ্যাচব্যাকের ইঞ্জিন মাত্র 10 সেকেন্ডে 0-100 কিমি/ঘণ্টার গতিবেগ তুলতে পারে। গাড়ি 110hp ও 190 Nm টর্ক তৈরি করে। খুব দ্রুত চললেও সমস্যা হয় না এই গাড়িতে।
Citroen C3 review: চালাতে কেমন গাড়ি ?
ইঞ্জিনটি ভালভাবে টিউন করা হয়েছে। শহরে বিপুল পরিমাণ টর্ক থাকায় আপনি এটিকে অটোমেটিকে চালাতে পারবেন। কারণ তৃতীয় গিয়ারে যথেষ্ট বেশি টর্ক পাবেন চালক। চালকের বসার জায়গার কথা বললে এটি এসইউভি-র মতো দেখতে লাগে। অনায়াসে এই গাড়ি ওভারটেক করতে পারে। গাড়ির 6-স্পিড ম্যানুয়াল উচ্চ গতির যাত্রাপথকে খুব সহজ করে তোলে। C3 দ্রুত চলার ক্ষমাতা রাখে ও এই গাড়ি আপনাকে মজাদার অভিজ্ঞতা দেবে। টার্নিংয়ের ক্ষেত্রে বা চালানোর অভিজ্ঞতায় অন্যান্য মাইক্রো এসইউভিগুলির থেকে এগিয়ে থাকবে এই হ্যাচব্যাক। গাড়ির স্টিয়ারিং হালকা হলেও প্রাণহীন নয়, তাই সহজেই ঘোরানো যায় এই হ্যাচ।
Citroen C3 review: কত মাইলেজ দাবি করে গাড়ি ?
শহরে প্রায় 12 kmpl মাইলেজ দিতে পারবে এই গাড়ি। কোম্পানির দাবি, এই গাড়ি 20 kmpl এর কাছাকাছি মাইলেজ দেবে।সাসপেনশনের দিকেও নজর রেখেছে Citroen C3। খারাপ রাস্তাতেও মসৃণ অনুভূতি দেয় এই গাড়ি। 180 মিমি গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্সের পাশাপাশি হ্যাচব্যাক হলেও এতে এসইউভির স্থিরতা পাবেন। আমদের গাড়ির চেহারা, কর্মক্ষমতা, কেবিন স্পেস পছন্দ হয়েছে। গাড়িতে কোনও স্বয়ংক্রিয় গিয়ারবক্স না থাকার বিষয়টি ভেবে দেখা উচিত কোম্পানির। কিছু ক্ষেত্রে ফিচারের অভাব রয়েছে গাড়িতে।
আরও পড়ুন : Royal Enfield Hunter: সবথেকে কম দামের বুলেট আনছে রয়্যাল এনফিল্ড, দাম কত হবে জানেন ?