নয়াদিল্লি: আরও দুর্বল হয়ে পড়ল ভারতের টাকা। ডলার প্রতি মূল্য হল ৯০ টাকা। টাকার দামের এহেন পতন নতুন রেকর্ড গড়েছে। কারণ এর আগে ভারতের টাকা কখনও এত নীচে নামেনি। (Dollar-Rupee Rate)

Continues below advertisement

বুধবার আমেরিকার প্রতি ডলার প্রতি টাকার দাম এসে ঠেকেছে ৯০.২১-এ। এতদিন পর্যন্ত ৮৯.৯৪৭৫-ই ছিল সর্বনিম্ন। যে সময়ে টাকার মূল্য এত কমল, তা অত্য়ন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা কাটেনি। শেয়ারবাজারেও রক্তক্ষরণ অব্যাহত। (Rupee Value against Dollar)

বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারে দোলাচল চলছে। আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি নিয়েও স্পষ্ট ভাবে কিছু জানা যাচ্ছে না। ফলে ব্যবসায়ী মহলেও অনিশ্চয়তা বাড়ছে। আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষর হয়ে গেলে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে বলে মত তাঁদের। তবে কী মর্মে চুক্তি হচ্ছে, বাণিজ্যশুল্ক কোথায় গিয়ে ঠেকছে, তার উপরও অনেক কিছু নির্ভর করছে। 

Continues below advertisement

টাকার দামে এই পতনের প্রভাব শুধুমাত্র দালাল স্ট্রিট বা বিদেশি মুদ্রা বিনিময়কেই প্রভাবিত করবে না, বরং প্রত্যেক গৃহস্থের জীবনে এর প্রভাব পড়বে বলেও মত অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। তাঁরা জানিয়েছেন, জ্বালানির দাম হোক বা ঋণের EMI, ছেলেমেয়ের টিউশন ফি থেকে বেড়াতে যাওয়ার খরচ, সবেতেই প্রভাব পড়তে চলেছে। 

এই মুহূর্তে মোট তেলের ৯০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করে ভারত। বৈদ্যুতিন সামগ্রী, সার, ভোজ্য তেলও বিদেশ থেকেই আমদানি করা হয়। শুধু তেলই নয়, বিদেশ থেকে ল্যাপটপ, ফ্রিজ, স্মার্টফোনও আমদানি করে ভারত। টাকার দামে যত পতন ঘটবে, আমদানির খরচও বাড়বে ততই। ফলে গৃহস্থের পকেটেও টান ধরবে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।বিদেশে ছেলেমেয়েকে পড়তে পাঠিয়েছেন যাঁরা, ডলারেই সমস্ত খরচ মেটাতে হয় তাঁদের।

ফলে তাঁদের পকেটেও টান ধরতে পারে। কারণ ডলার প্রতি টাকার দাম ৮০ থাকার সময়, ছেলেমেয়েকে বিদেশে পড়াতে এতদিন বছরে ৫০০০০ ডলার খরচ হতো হয়ত। অর্থাৎ বছরে ৪০ লক্ষ টাকা খরচ করতে হতো মা-বাবাকে। ডলার প্রতি টাকার দাম ৯০ হয়ে যাওয়ায়, সেই খরচ বেড়ে একধাক্কায় ৪৫ লক্ষ হতে চলেছে, যা বহন করা মধ্যবিত্তের জন্য অন্তত দুষ্কর। অন্য দিকে, যে সমস্ত পড়ুয়ারা শিক্ষা ঋণ নিয়েছিলেন, তাঁদেরও বেশি টাকা মেটাতে হবে ব্যাঙ্ককে। মাসে কোনও পরিবারের আয় যদি হয় ১.৫ লক্ষ টাকা, EMI এবং অন্য খরচ সামলে সেভিংসেও হাত দিতে হতে পারে তাঁদের।

লাগাতার টাকার দামে এহেন পতনের জন্য কিছু কার্যকারণের দিকে ইঙ্গিত করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা, যেমন- ১) আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি না হওয়া এবং ভারতীয় পণ্যের উপর আমেরিকার চাপানো ৫০ শতাংশ শুল্ক। 

২) কেন্দ্রীয় সরকার GDP বৃদ্ধির কথা বললেও, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ক্রমশ পাততাড়ি গোটাচ্ছেন। ২০২৫ সালেই ভারত থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ তুলে নিয়েছেন তাঁরা। 

৩) আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার ভারতের বিনিময় হার ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনা করে, তাকে ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘হামাগুড়ি দেওয়ার অবস্থা’ বলে উল্লেখ করেছে। ফলে বোঝা যাচ্ছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এই মুহূর্তে টাকাকে রক্ষা করার পরিবর্তে, পথনির্দেশ করছে। 

টাকার দামে লাগাতার পতনে বর্তমানে যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে, তা আগে কখনও ঘটেনি বলেও মত অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের মতে, ২০২২ সালে ডলারের জন্যই পৃথিবীর সর্বত্র মুদ্রার দরে পতন দেখা দেয়। কিন্তু এবার ডলার একেবারেই স্থিতিশীল জায়গায় রয়েছে। বরং টাকার দামেই পতন ঘটে চলেছে লাগাতার। আন্তর্জাতিক সংস্থা Bloomberg ভারতের মুদ্রাকে এই মুহূর্তে এশিয়ার ‘দুর্বলতম মুদ্রা’ বলে উল্লেখ করেছে। ৬৯০ বিলিয়ন ডলার সঞ্চিত বিদেশি মুদ্রা থাকায় RBI টাকার দামে এই পতন নিয়ে তেমন চিন্তিত নয় বলেও মনে করছেন অনেকে।