নয়াদিল্লি: দরজায় ঝোলানো তালা থেকে স্নানঘরে রাখা সাবান, Godrej-এর সামগ্রী নেই, এমন বাড়ি মেলা ভার। ভারতীয় বহুজাতিক সংস্থা, সেই Godrej-এর অন্দরেই এবার ভাঙন। পরাধীন ভারতে, ১৮৯৭ সালে গোদরেজ পরিবারের হাত ধরে ভারতে যাত্রা শুরু হয় Godrej Group-এর। সেই থেকে দীর্ঘ ১২৭ বছর ধরে ভারতের বাজারে নিজস্ব পরিচিতি তৈরি হয়েছিল সংস্থার। এবার সেই সংস্থাকেই দু'টুকরো করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হল। (Godrej Group Split)
সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, আদি গোদরেজ এবং তাঁর ভাই নাদিরের হাতে থাকবে Godrej Industries, যার পাঁচটি সংস্থা শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত। তাঁদের তুতো ভাই এবং বোন জামশেদ এবং স্মিতা শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত না থাকা Godrej & Boyce এবং সহয়াক সংস্থাগুলি পাবেন, যার মধ্যে একটি ল্যান্ড ব্যাঙ্ক এবং মুম্বইয়ের বেশ কিছু বহুমূল্য সম্পত্তি রয়েছে। (Godrej Family)
এই বিভাজনের একদিকে, ৮২ বছর বয়সি আদি এবং ৭৩ বছর বয়সি নাদির, অন্য দিকে, ৭৫ বছর বয়সি জামশেদ এবং ৭৪ বছর বয়সি স্মিতা। Godrej & Boyce-সহ Godrej Group-এর ব্যবসা ছড়িয়ে রয়েছে এ্যারোস্পেস, বিমান পরিষেবা, প্রতিরক্ষা, আসবাব এবং তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রেও। সেগুলি পরিচালনা করবেন জামশেদ। তিনি হবেন চেয়ারপার্সন এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর। বোন স্মিতার মেয়ে নাউরিকা হোলকার এগজিকিউটিভ ডিরেক্টরের দায়িত্ব সামলাবেন। যে ল্যান্ড ব্যাঙ্ক হাতে পাচ্ছেন তাঁরা, তাতে মুম্বইয়ের বুকে ৩ হাজার ৪০০ একর জমিও রয়েছে।
আরও পড়ুন: LPG Price: ভোটের মাঝেই স্বস্তি, মে মাসের শুরুতেই ফের কমল গ্যাসের দাম
Godrej Industries Group-এর (GIG) আওতায় শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত সংস্থা Godrej Industries, Godrej Consumer Products, Godrej Properties, Godrej Agrovet, Astec Lifescience পরিচালনা করবেন আদি, নাদির এবং তাঁদের পরিবারের লোকজন। আদির ছেলে ফিরোজশা গোদরেজ GIG-এর এগজিকিউটিভ ভাইস চেয়ারপার্সন হবেন। ২০২৬ সালের অগাস্ট মাসে নাদিরের জায়গায় তিনি হবে চেয়ারপার্সন।
গোদরেজ পরিবারের তরফে এই ভাঙনকে যদিও 'মালিকানার পুনর্বিন্যাস' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, অত্যন্ত সম্মানজনক ভাবে, ভাবনা-চিন্তা করেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তাঁরা, যাকে নিজেদের মধ্যে কোনও মন কষাকষি না থাকে, মালিকানাও সুবিন্যস্ত থাকে, গোদরেজ পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের ভাবনাই গুরুত্ব পায়।
আইনজীবী থেকে ব্যবসায় পা রাখা আর্দেশির গোদরেজ এবং তাঁর ভাই ফিরোজশা গোদরেজ ১৮৯৭ সালে গোদরেজ সংস্থার প্রতিষ্ঠা করেন। গোড়ার দিকে চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরি করতেন তাঁরা। আদের্শির কোনও সন্তান ছিল না। ফলে ফিরোজশার হাতেই সংস্থার মালিকানা ওঠে। ফিরোজশার চার সন্তান ছিল, সোহরাব, দোসা, বুর্জর এবং নাভাল। পরবর্তীতে বুর্জরের সন্তান আদি ও নাদির, নাভালের সন্তান জামশেদ ও স্মিতার হাতে মালিকানা ওঠে। সোহরাবের কোনও সন্তান ছিল না। দোসার এক সন্তান, রিশাদ। কিন্তু তিনিও নিঃসন্তান।
এতদিন ধরে সেভাবেই চলছিল সংস্থা। কিন্তু এবার ভাগাভাগি ঘটল। এই ভাগাভাগির আগে, সংস্থার বোর্ড থেকে প্রত্যেকেই পদত্যাগ করেন। আদি এবং নাদির Godrej & Boyce বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেন, জামশেদ Godrej Consumer Products এবং Godrej Properties-এর বোর্ড থেকে ইস্তফা দেন। এই ভাগাভাগির পর Godrej & Boyce থেকে নিজেদের শেয়ার হস্তান্তর করবেন আদি এবং নাদির। একই ভাবে Godrej Consumer Products এবং Godrej Properties থেকে নিজেদের শেয়ার হস্তান্তর করবেন জামশেদ এবং স্মিতা।
এই ভাগাভাগি নিয়ে জামশেদ বলেন, "১৮৯৭ সালথেকে দেশ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে গিয়েছে Godrej & Boyce. ভবিষ্যৎমুখী এই চুক্তির ফলে আগামী দিনে জটিলতামুক্ত হয়ে নিজেদের লক্ষ্যে এগোতে পারব আমরা, নিজেদের শক্তিবৃদ্ধি করতে পারব।" নাদিরের কথায়, "১৮৯৭ সালে স্বাধীন ভারতের অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তুলতেই Godrej-এর প্রতিষ্ঠা। মূল্যবোধ এবং বিশ্বাসে ভর করে এতদূর এগিয়েছি আমরা। আরও মনোযোগ এবং তৎপরতা সহকারে সেই উত্তরাধিকারকে এগিয়ে নিয়ে যাব আমরা।"
Godrej & Boyce-এর যে জমি রয়েছে মুম্বইয়ে, তার জন্য একটি পৃথক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। ওই ৩ হাজার ৪০০ একর জমির মধ্যে ৩০০ একর রয়েছে বিক্রোলীতে, তার মধ্যে ১০০০ একর জমি নির্মাণকার্যের উপযুক্ত বলে জানা গিয়েছে। বাকি ১ হাজার ৭৫০ একর ম্যানগ্রোভ অরণ্য, সেখানে বহু বিরল প্রজাতির গাছ এবং পাখি রয়েছে। ৩০০ একর জমি আগেই দখল হয়ে গিয়েছে।
১৯৪১-'৪২ সালে বম্বে হাইকোর্টেরএ কটি নিলামে ওই জমিটি কেনেন ফিরোজশা। পার্সি নাবিক ফ্রামজি বানাজির জমি ছিল সেটি। ১৮৩০ সাল নাগাদ সেটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির থেকে কিনেছিলেন ফ্রামজি। ১২৭ বছর পর এই প্রথন সংস্থায় ভাঙন ধরলেও, বেশ কয়েক বছর আগেই মুম্বইয়ের ওই জমিটি ভাগ করতে উদ্যত হয়েছিলেন জামশেদ। আইনজীবী জিয়া মোদি এবংইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার নিমেশ কাম্পানি তাঁকে সাহায্য করছিলেন। অন্য দিকে, কোটাক মহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের উদয় কোটাক এবং সিরিল অমরচাঁদ মঙ্গলদাস ফার্মের সিরিল শ্রফ সাহায্য করছিলেন আদিকে।