নয়া দিল্লি : এখনও চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যার প্রভাব পড়েছে। অর্থনীতিতে তো অবশ্যই। এই আবহে কেন্দ্রের মালিকানাধীন এলআইসি-র অংশীদারিত্ব বিক্রির পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। আগামী অর্থবছর পর্যন্ত যা স্থগিত রাখা হচ্ছে। এই ইস্যুতে ওয়াকিবহাল মহল সূত্রের এমনই খবর এবিপি নিউজের কাছে।


কিন্তু, সরকারের কেন এই সিদ্ধান্ত ? রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেই দেশের সর্ববৃহৎ আইপিও নিয়ে তাড়াহুড়ো না করতে সরকারকে অনুরোধ করেছেন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কাররা। তারপরই পরের অর্থবর্ষ পর্যন্ত এলআইসি-র আইপিও নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এদিকে এই সিদ্ধান্ত জনসাধারণের ইস্যু নিয়ে কাজ করা একাংশকে নিরুৎসাহিত করেছে।


সূত্রের খবর, পূর্ব ইউক্রেনে আগ্রাসনের জেরে রাশিয়ার উপর জারি হওয়া নিষেধাজ্ঞাগুলি বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের (এফআইআই) এলআইসির আসন্ন আইপিওতে অংশ নিতে বাধা হিসাবে দেখা হচ্ছে।


রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান ঘোষণার পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের কাছ থেকে একাধিক বিষয়ে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হয়েছে রাশিয়াকে। যার মধ্যে রয়েছে- ফিনান্সিয়াল মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম SWIFT থেকে অসংখ্য ব্যাঙ্ককে বহিষ্কার করে দেওয়া। যার জেরে বিনিয়োগকারীদের আর্থিক অবস্থান কঠোর হয়েছে। এইসব নিষেধাজ্ঞা বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূত্র বলছে, রাশিয়ার বাজারে অংশীদারিত্ব থাকা মার্কিন বিনিয়োগকারীরা "কোনও সিকিউরিটি তুলে নেওয়া বা এলআইসিতে বিনিয়োগ করার মতো অবস্থায় নেই।"


বর্তমানে এই সঙ্কটের ফলে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়ছে। যার ফলে ভারতের বাজারে মুদ্রাস্ফীতি এবং অস্থিতিশীলতা দেখা দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ডিপার্টমেন্ট অফ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট-এর সচবি তুহিন কান্ত পাণ্ডে এলআইসি-র মেগা আইপিও নিয়ে "ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ" নীতির পক্ষে। 


সরকার এই মাসে এলআইসির ৫% সুদ বিক্রি করার পরিকল্পনা করছিল, যা সরকারের কোষাগারে ৬০,০০০ কোটি টাকারও বেশি আনতে পারত। আইপিও চলতি অর্থবছরের ৭৮,০০০ কোটি টাকার বিলগ্নিকরণের লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করতে পারত।


গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ভারতের সবচেয়ে বড় বীমা সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়ার (সেবি) কাছে খসড়া রেড হেরিং প্রসপেক্টাসের জন্য আবেদন করে। এটি এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রক-অনুমোদন পেয়েছে, যা ভারতীয় কর্পোরেট ইতিহাসে অন্যতম দ্রুততম। 


প্রসঙ্গত, ভারত সরকার ৩১ মার্চ আর্থিক বছরের শেষের দিকে শেয়ার বিক্রির প্রক্রিয়া শেষ করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ইউক্রেন সঙ্কটের সূত্রপাতের জেরে অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 


এদিকে ইউক্রেন সঙ্কট শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা ইতিমধ্যে শেয়ার বাজার থেকে এক ট্রিলিয়ন টাকারও বেশি তুলে নিয়েছেন।


এই সামগ্রিক বিষয় নিয়ে এলআইসি-র এক মুখপাত্র কোনও মন্তব্য করতে চাননি।