নয়াদিল্লি: বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে আলোচনা চলছে এখনও। তার মধ্যেই চিনের উপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপালেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১ নভেম্বর থেকে সমস্ত চিনা পণ্যের উপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক বসবে বলে ঘোষণা করেছেন তিনি। বিরল খনিজ রফতানিতে সম্প্রতি রাশ টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেজিং, তার জেরেই ট্রাম্প ‘শুল্কশাস্তি’ চাপালেন কি না, উঠছে প্রশ্ন।
অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চিনকে কড়া ভাষায় আক্রমণও করেছেন ট্রাম্প। তাঁর বক্তব্য, ‘বাণিজ্য ক্ষেত্রে বেনজির ভাবে আগ্রাসী অবস্থান নিচ্ছে চিন। ১ নভেম্বর থেকে রফতানি নিয়ন্ত্রণের কথা জানিয়েছে তারা, নিজেদের তৈরি পণ্য রফতানিও নিয়ন্ত্রণ করবে, যা নিজেরা তৈরি করে না, তাও। এর প্রভাব সব দেশের উপরই পড়বে। বোঝাই যাচ্ছে, অনেক আগে থেকেই এই পরিকল্পনা ছিল তাদের। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এমনটা আগে দেখা যায়নি, যা নীতিবিরুদ্ধও’।
চিনের এমন পদক্ষেপের জেরেই তাদের উপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর কথায়, ‘১ নভেম্বর থেকে চিনের উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে। আগের যা শুল্ক রয়েছে, তার উপর বাড়তি। ১ নভেম্বর থেকে আমরাও গুরুত্বপূর্ণ সফ্টওয়্যার রফতানি নিয়ন্ত্রণ করব। চিন এমন করতে পারে ভাবাতেই পারিনি। কিন্তু ওরা এই পদক্ষেপ করেছে। বাকিটা ইতিহাস’। ট্রাম্প জানিয়েছেন, শুল্ক কার্যকর করার সময়সীমা এগিয়েও আনা হতে পারে। চিন কী পদক্ষেপ করবে, তার উপরই নির্ভর করছে সবকিছু।
আগে থেকেই চিনের উপর ৩০ শতাংশ বাণিজ্য শুল্ক কার্যকর করে রেখেছে আমেরিকা। অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ চাপানোয়, চিনা পণ্যের উপর আমেরিকার চাপানো শুল্কের হার বেড়ে ১৩০ শতাংশ হল। যদিও আমেরিকার পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্কই কার্যকর রেখেছে চিন। ট্রাম্প অতিরিক্ত শুল্ক ঘোষণার পরই শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে। Nasdaq-এর শেয়ারে ৩.৬ শতাংশ, S&P 500-তে ২.৭ শতাংশ ধস নেমেছে এই মুহূর্তে। ৯০০ পয়েন্ট পড়েছে The Dow. পতন ঘটেছে একাধিক প্রযুক্তি সংস্থার শেয়ারে।
চিন থেকে গোটা পৃথিবীতে বিরল খনিজ পৌঁছয়, যার উপর আমেরিকাও অনেকাংশে নির্ভরশীল। সেমিকন্ডাক্টর, যুদ্ধবিমান, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ওই সব বিরল খনিজ কাজে লাগে। সম্প্রতি সেই বিরল খনিজ রফতানিতে রাশ টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চিন, যাতে আমেরিকার শিল্প এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কাঁচামালে টান পড়বে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় APEC সম্মেলনের আগে চিনের এই সিদ্ধান্তে আমেরিকা অসন্তুষ্ট বলে জানা যাচ্ছে। সেখানে ট্রাম্প এবং শি জিনপিংয়ের মধ্যে পূর্ব নির্ধারিত বৈঠকও ভেস্তে যেতে পারে বলে খবর। ট্রাম্পের দাবি, জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের আর কোনও কারণ দেখছেন না তিনি। তবে সরকারি ভাবে বৈঠক বাতিলের ঘোষণা হয়নি এখনও পর্যন্ত।
বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে বছরের গোড়া থেকেই আমেরিকা ও চিনের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। দুই মহাশক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্য়ে শুল্ক-সংঘাত ঘিরে প্রহর গুনছে আন্তর্জাতিক মহলও। শান্তিপূর্ণ ভাবে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে চলছে আলাপ-আলোচনাও। কিন্তু সেই আবহেই ফের সংঘাত তীব্র হয়ে উঠল, যাতে উদ্বেগ বাড়ছে গোটা বিশ্বের।