পটনা: দোলের একদিন আগে থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এতদিন ধরে চলছিল খোঁজাখুঁজি। শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধের মুণ্ড এবং শরীরের হাড়গোড় উদ্ধার হল বিহারে। তিনি তন্ত্রসাধনার বলি হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিঃসন্তান দম্পতি যাতে সন্তানলাভে করেন, তার জন্যই ওই ব্যক্তিকে বলি দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে। এই ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু নরবলি দেওয়ায় অভিযুক্ত প্রধান তান্ত্রিক এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ। এই ঘটনার তদন্তে নেমে বড় অপরাধচক্রের সন্ধানও পেল পুলিশ। (Bihar Black Magic Horror)
বিহারের ঔরঙ্গাবাদ থেকে এই ঘটনা সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে, দোলের একদিন আগে, গত ১৩ মার্চ থেকে নিখোঁজ ছিলেন ৬৫ বছর বয়সি যুগল যাদব। সম্প্রতি তাঁর কাটা মুণ্ড এবং শরীরের হাড়গোড় উদ্ধার হয়। দেহ আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, দোলের আগের দিন যে ন্যাড়াপোড়ানো হয়, তার ছাই থেকে হাড়গোড় উদ্ধার হয়েছে। মাথাটি পোঁতা ছিল পাশের একটি মাঠের গর্তে। (Bihar News)
ঔরঙ্গাবাদের পুলিশ সুপার অম্বরীশ রাহুল জানিয়েছেন, গুলাব বিঘা গ্রামের বাসিন্দা যুগল। ১৩ তারিখ থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। তাঁকে খুঁজতে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠিত হয়। তদন্তে নেমে পাশের গ্রাম বাঙ্গরে ন্যাড়াপোড়ানোর ছাইয়ের মধ্যে মানুষের হাড়গোড় মেলে। হাড়গোড়ের সূত্র ধরেই একজোড়া হাওয়াই চটি এবং হাড়গোড়
পুলিশ কুকুর নামানো হলে সে-ই তদন্তকারীদের রামাশিস রিকিয়াসন নামের এক তান্ত্রিকের বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যায় তদন্তকারীদের। রামাশিস বাড়িতে ছিল না। তার আত্মীয় ধর্মেন্দ্রকে হেফাজতে নেওয়া হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। জানা গিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন অপরাধ স্বীকার করেন নেয় ধর্মেন্দ্র। সে জানিয়েছে, কয়েক জনের সঙ্গে মিলে যুগলকে অপহরণ করা হয়। প্রথমে মাথা কেটে নেওয়া হয় তাঁর। এর পর ন্যাড়াপোড়ানোর আগুনে পোড়ানো হয় তাঁর শরীর। কাটা মুণ্ডটি পুঁতে দেওয়া হয় মাঠে। এক নাবালক-সহ মোট চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রামাশিস এখনও অধরা।
এই ঘটনায় সুধীর পাসোয়ান নামের একজনের নাম সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে, সুধীর এবং তার স্ত্রী নিঃসন্তান। সন্তানের জন্য তান্ত্রিক রামাশিসের দ্বারস্থ হয় সে। রামাশিসই সুধীরকে নরবলি দেওয়ার কথা বলে। প্রথমে ইতস্তত করলেও সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় সুধীর। এর পর সুধীর, নানকু ওরফে সঞ্জিত, কর্ণ ভুঁইয়া ওরফে রোশন কুমার এবং ধর্মেন্দ্র মিলে যুগলকে অপহরণ করে বলি দেয়। প্রথমে গলার নলি কেটে খুন করা হয় যুগলকে। দেহ থেকে মাথা আলাদা করে, দেহটি ফেলা হয় ন্যাড়াপোড়ার আগুনে। গর্ত করে পুঁতে দেওয়া হয় মাথা। যে কুড়ুল দিয়ে যুগলের শিরচ্ছেদ করা হয়, সেটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ।
ধর্মেন্দ্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে পেয়েছে পুলিশ। সে জানিয়েছে, এর আগেও নরবলি দিয়েছে তারা। এক কিশোরকে সেবার অপহরণ করে তারা। ওই এলাকারই একটি কুয়োতে পরে কিশোরের দেহ ফেলে দেওয়া হয়। সেই কিশোরের পরিচয় জানা যায়নি এখনও পর্যন্ত। দৈনন্দিন জীবনে কুসংস্কারের শিকড় কত গভীরে প্রোথিত, তা এই ঘটনায় ফের প্রমাণিত হল। এর আগে, বিহারের ভাগলপুরে সম্প্রতি দু'জন গ্রেফতার হয়। কবর খুঁড়ে মাথার খুলি তুলে এনে বিক্রির অভিযোদ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। 'কালোজাদু' করতে এবং মেডিক্যাল ল্যাবে তারা ওই খুলি বিক্রি করত বলে জানা যায়।