সুনীত হালদার, হাওড়া: ব্যাঙ্ক থেকে ৪৫০ টাকা পেতে গিয়ে উধাও ৯ লক্ষ টাকা ! সৌজন্যে ব্যাঙ্ক প্রতারণা চক্র। হাওড়া সিটি পুলিশের সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চ গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও এখনো টাকা ফেরত বিশবাঁও জলে। ঘটনাটি ঘটেছে শিবপুরের এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে।


শিবপুরের রজনীকান্ত রায়চৌধুরী লেনের বাসিন্দা অপূর্ব ভঞ্জ ৷ তিনি সম্প্রতি একটি রং প্রস্তুতকারি সংস্থার কারখানার কেমিস্টের পদ থেকে অবসর নিয়েছেন। অবসরের পর অপূর্ববাবু তাঁর প্রাপ্ত অর্থ ব্যাঙ্কে জমা রাখেন। পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের শিবপুর শাখার পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা উজ্জীবন স্মল ফাইন্যান্স ব্যাঙ্কে তাঁর সেভিংস অ্যাকাউন্ট এবং ফিক্সড ডিপোজিট আছে।


গত ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের সেভিংস অ্যাকাউন্টে পাওনা ৪৫০ টাকা পাওয়ার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করেন। এর জন্য ইন্টারনেট থেকে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের কাস্টমার কেয়ারের নম্বর জোগাড় করে ফোন করেন। ওই নম্বরে একজন যুবক রাহুল সরস্বতী, নিজেকে কাস্টমার কেয়ার এক্সিকিউটিভ হিসেবে পরিচয় দিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলে ৷ ওই যুবক জানান, চিন্তার কোনও কারণ নেই, খুব তাড়াতাড়ি ৪৫০ টাকা ফেরত দেওয়া হবে। কিছুক্ষণ বাদে ওই যুবক ফের তাকে ফোন করে জানান টেকনিক্যাল কারণে ওই টাকা নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে দেওয়া যাচ্ছে না। তাঁর কাছ থেকে অন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর চায়। তিনি তখনই তার উজ্জীবন স্মল ফাইন্যান্স ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট নম্বর দেন।


ভরসা করে যে নম্বর অপূর্ববাবু ওই যুবককে দিয়েছিলেন, সেটিতে তাঁর ফিক্সড ডিপোজিটের টাকা ছিল। কথার ফাঁকে তাঁর কার্ডের বিস্তারিত তথ্য ও ওটিপি নম্বর তিনি দিয়ে ফেলেন ওই যুবককে। এরপরই তিনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁর ফিক্সড ডিপোজিট থেকে টাকা সেভিংস অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়। নতুন এমপিন তৈরি করে সেখান থেকে সাড়ে সাত লাখ টাকা বিভিন্ন ওয়ালেট এর মাধ্যমে তুলে নেওয়া হয়। এর পাশাপাশি আলাদাভাবে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের এটিএম কার্ডের ওটিপি শেয়ার করার জন্য ওই ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকেও  ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা তুলে নেয়। অরুপবাবুর অভিযোগ যখন দফায় দফায় তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ওই একই দিনে টাকা তোলা হচ্ছিল সেই সময় তাঁর মোবাইলে কোনও এসএমএস ঢোকেনি। এসএমএস-এর বদলে তাকে ইমেলে জানানো হয়। কিন্তু সেইসময়ে অপূর্ববাবুর মেল চেক করার কোনও সুযোগ ছিল না। পরে মেল থেকেই তিনি জানতে পারেন যে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে বেশিরভাগ টাকা উধাও হয়ে গেছে।


অপূর্ববাবুর মেয়ে অদিতি বলেন, যখন বিভিন্ন ওয়ালেটের মাধ্যমে টাকা উঠেছে, তখন এত দেরি করে কেন মেল পাঠানো হল ? এর পাশাপাশি অভিযোগ জানানোর পর যাতে ওই ওয়ালেট কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায় তার জন্য তিনি সরকারি হস্তক্ষেপ চান। এই ঘটনার পর ওই ব্যক্তি শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন থানাতে অভিযোগ দায়ের করার পাশাপাশি হাওড়া সিটি পুলিশের সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চেও অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ জানিয়েছে, গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।