সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা: পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে নথি যাচাইয়ের সময় পুলিশি হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে মতুয়াদের। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি তরজার আবহে এই অভিযোগ তুললেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, পাসপোর্টের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের নিয়মই মানতে হয় রাজ্য পুলিশকে।


মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগে বলেছিলেন, ‘‘মতুয়া ভাই বোনেরা কেউ স্বাধীনতার আগে, কেউ ৫০ সালে, কেউ ৬০ সালে এসেছে। তারা সবাই নাগরিক। আমি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বলছি, আপনারা সবাই নাগরিক ৷’’


বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর জানান, ‘‘ফরেনার্স অ্যাক্ট তো ফলো করছে রাজ্য সরকার, পাসপোর্ট যখন করতে যাচ্ছে, তখন ৭১ সালের দলিল চাইছে...হয়রান করছে ৷’’


মতুয়া ভোট, নাগরিকত্ব আইন আর রাজনীতি বিধানসভা ভোটের মুখে বঙ্গ রাজনীতির আবর্তে বারবার ঘুরে ফিরে আসছে এই কথাগুলো।


একদিকে রাজ্যের শাসকদলের দাবি, মতুয়াদের জন্য ভোটার কার্ড-সহ অন্য সচিত্র পরিচয়পত্রই যথেষ্ট। উল্টোদিকে, বিজেপির দাবি, সংশোধিত আইন মেনে মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এই টানাপড়েনের মধ্যেই বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে মতুয়াদের হয়রানির অভিযোগ তুললেন।


বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর জানান, পাসপোর্ট তৈরির সঙ্গে যুক্ত পুলিশ অফিসারদের একাংশ বলছেন, ‘‘১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে যাদের জন্ম, পাসপোর্টের নথি যাচাইয়ের সময় জন্মের শংসাপত্র পুলিশের কাছে জমা দিতে হয়। পুলিশ তা খতিয়ে দেখে যদি সন্তুষ্ট হয়, তাহলে ঠিক আছে। যদি সমস্যা হয়, তখন মা কিংবা বাবা, এদেশের নাগরিক কি না, সেই সংক্রান্ত নথি চাওয়া হয়।’’


১৯৮৭ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে যাদের জন্ম, তাদের ক্ষেত্রে নিয়ম, জন্মের শংসাপত্র ছাড়াও, বাবা অথবা মায়ের নাগরিকত্বের প্রামাণ্য নথি জমা দিতে হয়। আর ২০০২-এর পর যাদের জন্ম, তাঁদের ক্ষেত্রে নিয়ম আরও কড়া। সেক্ষেত্রে আবেদনকারীর মা-বাবা দু’জনেরই নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হয়।


তৃণমূলের পাল্টা যুক্তি, পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে কেন্দ্রের তৈরি করা আইন মেনেই তো চলতে হয় রাজ্য পুলিশকে। তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনার কোঅর্ডিনেটর গোপাল শেঠ জানান, ‘‘পুলিশের হাত-পা বাঁধা, সেন্ট্রাল যে আইন তৈরি করেছে, সেটা মেনেই চলতে হয় ৷’’


গত লোকসভা ভোটে নাগরিকত্ব আইনকে ইস্যু করেই মতুয়া মহলের মন পেয়েছিল বিজেপি। নাগরিকত্ব আইন এখনও লাগু হয়নি। এ নিয়ে মতুয়া মহলে অসন্তোষ আছে। তাই আগামী বিধানসভা ভোটের আগে মতুয়া শিবিরকে ঘিরে তৃণমূল আর বিজেপির দড়ি টানাটানি পৌঁছেছে চরমে।