কোচি: কেরলের কোচির মেরিন ড্রাইভের রাস্তায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল এক ভবঘুরকে। পেশায় ছুতোর মিস্ত্রী ওই মানুষটি রাস্তাতেই দিন কাটাতেন। শুধুমাত্র ঈর্ষার জেরেই তাঁকে খুন করেছেন বলে স্বীকার করে নিয়েছেন অভিযুক্ত রাজেশ।
শিবদাসন। পেশায় কাঠের কাজ করলেও, মানুষটির জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। ওই এলাকায় তাঁকে চেনেন না, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া ভার। কয়েক বছর আগে কোল্লাম থেকে কোচিতে এসেছিলেন শিবদাসন। আসলে শিবদাসন ছিলেন এ পি জে আবদুল কালাম অন্ত প্রাণ! প্রয়াত রাষ্ট্রপতি তথা বিজ্ঞানীকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন শিবদাসন। নিজের বাড়িঘর ছিল না। আকাশই নীচে তাঁর আশ্রয়স্থল। পথের ধারে পড়ে থাকা এ পি জে আবদুল কালামের এক মূর্তিতে নিয়মিত ফুল দিতেন। কেরলেই দু বার প্রয়াত রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখাও করেছিলেন। কোচির ওই এলাকায় পথের ধারে থাকার সময় শিবদাসনের চোখে পড়ে পথের ধারে কালামের মূর্তিটি অবহেলায় পড়ে রয়েছে। তিনিই একদিন প্রথম ধুলো মুছে, কালামের মূর্তিতে ফুল দেন। সেই শুরু। তারপর থেকে কোনওদিনও ভুল হতো না। অন্তরের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা জানাতে কাজের মাঝে রোজ আসতেন মূর্তির সামনে। রাস্তার গাছ থেকে ফুল জড়ো করে এ পি জে আবদুল কালামের প্রতি নিয়মিত শ্রদ্ধা জানাতেন। তাঁর এই শ্রদ্ধা, ভালোবাসা তাঁকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। তাঁর এই কর্মকাণ্ডের কথা সম্প্রচারিত হয়েছিল স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় ভিডিও। এরপরেই ভবঘুরে এই মানুষটিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অনেকে। কেউ তাঁকে আশ্রয় দিতে রাজি ছিলেন তো কেউ অন্য ভাবে সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
কিন্তু শিবদাসনের এই জনপ্রিয়তা একেবারেই ভাল ভাবে নিতে পারেননি আরেক ফুটপাতবাসী রাজেশ। মাঝেমধ্যেই সে শিবদাসনের সঙ্গে লড়াই করত টাকার ভাগ চেয়ে।
শিবদাসনের মৃত্যুর পর প্রথমটায় কোনও সন্দেহ হয়নি পুলিশ প্রশাসনের। তাঁর মৃত্যুকেও স্বাভাবিক বলেই মনে করেছিল পুলিশ। কিন্তু পরে শিবদাসনের দেহে একাধিক আঘাতের দাগ পুলিশের চোখ খুলে দেয়।সন্দেহ গিয়ে পড়ে রাজেশের উপর। পুলিশি জেরায় সেও স্বীকার করে নেয় শিবদাসনকে সেই খুন করেছে। কিন্তু এমন একজন ভবঘুরে মানুষকে কেনই বা খুন করতে গেল রাজেশ? রাজেশ জানিয়েছে তাঁর এই জনপ্রিয়তা দেখে শিবদাসনকে হিংসে করত সে। ঈর্ষার বশেই সে নিজে হাতে খুন করেছে শিবদাসনকে।