নয়াদিল্লি: বিয়ের পরও প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন সোনম রঘুবংশী। মধুচন্দ্রিমার নামে রাজা রঘুবংশীকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং প্রাণে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন দু’জনে মিলেই। মোট চার বার রাজাকে খুনের চেষ্টা হয়। প্রথম তিন বার অসফল হলেও, শেষ বার সোনমের সামনেই রাজাকে হত্যা করে দুষ্কৃতীরা। রাজা রঘুবংশী হত্যাকাণ্ডে শনিবার এই মর্মেই চার্জশিট জমা দিল মেঘালয় পুলিশ। (Sonam Raghuvanshi)
মোট ৭৯০ পাতার চার্জশিট জমা দিয়েছে মেঘালয় পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল, SIT. চার্জশিটে সোনম, তাঁর প্রেমিক রাজ কুশওয়াহা, তিন ভাড়াটে খুনি- বিশাল সিংহ চৌহান, আকাশ রাজপুত, আনন্দ কুড়মির নাম রয়েছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৩ (১), ২৩৮ (এ) এবং ৬১ (২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে সকলের বিরুদ্ধে। ইস্ট খাসি হিলস পুলিশের সুপার বিবেক সিয়েম বলেন, “তদন্তে জানা গিয়েছে, সোনমের সঙ্গে রাজের সম্পর্ক ছিল। রাজের সঙ্গে মিলে রাজাকে খুনের ষড়যন্ত্র কষেন সোনম। সেই মতো তিন খুনিকে ভাড়া করা হয়।” (Raja Raghuvanshi)
ঘটনাক্রম ঠিক কিভাবে এগোয়, তারিখ ধরে ধরে তা ব্যাখ্যা করেছে পুলিশ। বলা হয়েছে-
গত ১১ মে ইন্দৌরে সোনম এবং রাজার বিবাহ হয়।
২০ মে শিলং পৌঁছন তাঁরা, সেখান থেকে সোহরার উদ্দেশে রওনা দেন।
২৩ মে নংরিহাট হোমস্টেতে ওঠেন সোনম এবং রাজা। সেখানেই শেষবার জীবিত অবস্থায় দেখা যায় রাজাকে। ওই দিনই ওয়েই সাদোং জলপ্রপাতের কাছে রাজা খুন হন।
২৬ মে দম্পতি নিখোঁজ বলে অভিযোগ জমা পড়ে। শুরু হয় তল্লাশি অভিযান।
৩১ মে সোহরার গোল্ডেন পাইনস ধাবার কাছ থেকে পরিত্যক্ত স্কুটারটি মেলে।
২ জুন সোহরার আর্লিয়াং রিয়াত কুনংরিমের খাল থেকে রাজার ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়।
৮ থেকে ১১ জুনের মধ্যে সোনম, রাজ, তিন খুনিকে উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশ থেকে গ্রেফতার করা হয়।
২২ থেকে ২৫ জুনের মধ্যে প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে মধ্যপ্রদেশ থেকে গ্রেফতার করা হয় সিলোম জেমস, লোকেন্দ্র তোমর এবং বলবীর আহিরওয়ারকে। এই তিনজন জামিনে রয়েছে।
চার্জশিটে ১ নম্বর অভিযুক্ত হিসেবে সোনমকেই চিহ্নিত করেছেন তদন্তকারীরা। বলা হয়েছে, রাজার সঙ্গে বিয়ের পরও রাজের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সোনমের। মধুচন্দ্রিমায় নিয়ে গিয়ে রাজাকে সরিয়ে দেবেন বলে তখন থেকেই রাজের সঙ্গে ষড়যন্ত্র কষতে শুরু করেন সোনম। আগেও তিন-তিনবার রাজাকে খুনের চেষ্টা করেন সোনম এবং রাজ। সাফল্য মেলে চতুর্থবারে। বিয়ের ১২ দিন পর, ২৩ মে ভাড়াটে খুনিরা চাপাতি নিয়ে রাজার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সোনমের চোখের সামনেই তারা খুন করে রাজাকে। দেহটি খাদের মধ্যে ফেলে দেয়, যেটি ২ জুন উদ্ধার করে পুলিশ।
রাজার পরিবার সোনমের ফাঁসি চাইছেন। রাজার ভাই বিপিন রঘুবংশী সংবাদমাধ্যমে বলেন, “এখনও চার্জশিট হাতে পাইনি আমরা। সোমবার মেঘালয় যাব, সেখানেি চার্জশিট পড়ব। সোনম এবং বাকিদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। সোনম, রাজ এবং বাকিদের যেন ফাঁসি হয়।” গোটা ঘটনা সামনে আসার পর থেকে রাজার পরিবারের পাশে ছিলেন সোনমের বাড়ির লোকজন। কিন্তু সেই পরিস্থিতি আর নেই বলে দাবি বিপিনের। তাঁর দাবি, জেলবন্দি সোনমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তাঁর ভাই গোবিন্দ। বিপিনের কথায়, “গোবিন এর আগে বলেছিল, রাজা যাতে ন্যায় বিচার পায়, তা দেখবে ও। কিন্তু এখন আর আমার ফোন ধরছে না। দিদির মতো গোবিন্দও আমাদের ঠকিয়েছে। মিথ্যে বলেছেও। এখন নিজের পরিবারকেই সমর্থন করছে। সোনমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে ও।”