কলকাতা: সাঁইথিয়ার পর মল্লারপুর। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ফের রক্তাক্ত বীরভূম। বোমার আঘাতে প্রাণ গেল তৃণমূল নেতা তথা ময়ূরেশ্বর ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ বায়তুল্লা শেখের। চায়ের দোকান থেকে ফেরার সময় তাঁকে লক্ষ্য় করে বোমা ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। পরিবারের দাবি, এক বছর আগে থেকেই তাঁকে খুনের ষড়যন্ত্র চলছিল। আগে সেই চক্রান্তের কথা জেনে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। তবে এবার আর শেষরক্ষা হল না। (West Bengal Politics)
শনিবার তিন তৃণমূল কর্মীর সঙ্গে মল্লারপুরের বিশিয়া গ্রাম থেকে ফিরছিলেন বায়তুল্লা। সেই সময় তাঁদের লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়। বায়তুল্লা-সহ সকলেই বোমার আঘাতে আহত হন। রামপুরহাট হাসপাতালে নিয়ে গেলে বায়তুল্লাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। বাকি তিন জন এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন। (TMC News)
এই ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। কারণ গত ১০ দিনে তিন জেলায় এই নিয়ে তাদের চার নেতা-কর্মী খুন হলেন। গত ১০ জুলাই দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে খুন হন তৃণমূলের রাজ্জাক খান। সেই ঘটনায় যে সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়, তাঁদের মধ্যে দু'জন তৃণমূল কর্মী। আবার ওই রাতেই মালদার ইংরেজবাজারে জন্মদিনের পার্টিতে খুন হন তৃণমূল নেতা আবুল কালাম আজাদ। তৃণমূলের এক নেতাই তাঁকে কুপিয়ে খুন করেন বলে অভিযোগ।
এর পর, গত ১২ জুলাই খুন হন বীরভূমের সাঁইথিয়ার শ্রীনিধিপুরের তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি পীযূস ঘোষ। মাঝ রাতে গুলি করে খুন করা হয় তাঁকে। ভোরে রস্তা থেকে উদ্ধার হয় গুলিবিদ্ধ দেহ। আর তাতেই নয়া সংযোজন মল্লারপুরে বায়তুল্লাকে খুনের ঘটনা। পর পর তৃণমূল নেতা-কর্মীদের এভাবে খুন হওয়ার নেপথ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে বলে অভিযোগ করছে বিরোধী দলগুলি। জোড়াফুল নেতৃত্ব সেই অভিযোগ মানতে নারাজ।
বীরভূম সাংগঠনিক জেলা বিজেপি সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, “এ তো সবে সকাল। এখনও সারা দিন বাকি আছে। তৃণমূল মারছে, মরছে তৃণমূল। পশ্চিমবঙ্গ এগিয়ে। উন্নয়ন চলছে।” বীরভূমে সিপিএম-এর জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, “ওদের লড়াই মানে হচ্ছে বখরার লড়াই। একদম উপর থেকে নীচ পর্যন্ত। উপরে বোঝাপড়া করে শান্ত থাকে। নীচের তলায় তো তা করা যায় না। ফলে নীচের তলায় পর পর খুন হচ্ছে।”
যদিও পর পর দলের নেতা-কর্মীদের খুনের ঘটনা বিরোধীদেরই নিশানা করছে তৃণমূল। ময়ূরেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক অভিজিৎ রায় বলেন, “সিপিএম-এর কিছু হার্মাদ, দুষ্কৃতী, তারা বায়তুল্লার উপর হামলা করেছে, বোমা মেরেছে। রাজনৈতিক ভাবে পরাস্ত ওরা। বায়তুল্লাকে সরাতে না পারলে ওদের কাজ হচ্ছিল না।”
রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। তার আগে পর পর তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের খুনের ঘটনায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, ততই হানাহানি বাড়বে কিনা, বাড়ছে আশঙ্কাও।