কলকাতা: শুরুর আগেই চাঁদনি চকে 'অভয়া পরিক্রমা'র ম্যাটাডোর আটকাল পুলিশ। চৌকির পর এবার ম্যাটাডোর নিয়েও টানাপোড়েন। চাঁদনি চকে আজ 'অভয়া পরিক্রমা'র ৩টি ম্যাটাডোর আটকে দেয় পুলিশ। খুলে নেওয়া হয় ম্যাটাডোরের চাবি। সেই নিয়ে ধুন্ধুমার বাধে। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় প্রতিবাদীদের। ঠেলে ম্যাটাডোর বের করার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা। এর ফলে, ষষ্ঠীর দুপুরে শহরের বুকে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। (Abhaya Parikrama)
জুনিয়র চিকিৎসকরা আমরণ অনশনে বসার পর তিন দিন পার হয়ে গিয়েছে। সেই আবহেই ষষ্ঠীতে দক্ষিণ কলকাতায় 'অভয়া পরিক্রমা' বের করা হয়, আগেই যার ঘোষণা হয়েছিল। সেই মতো আর জি কর মেডিক্যালের নিহত চিকিৎসক ও জয়নগরে নিহত ৯ বছরের বালিকার প্রতীকী মূর্তি নিয়ে ম্যাটাডোরে চড়ে বেরোন জুনিয়র চিকিৎসকরা। অনুমতি চেয়ে কলকাতা পুলিশকে আগেই ইমেল করেছিলেন তাঁরা। জানিয়েছিলেন, দুপুর ২টো থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে 'অভয়া পরিক্রমা'। (RG Kar Protests)
কিন্তু 'অভয়া পরিক্রমা' শুরু হতেই এদিন চাঁদনিতে পুলিশ মিছিল আটকায়। তিনটি ম্যাটাডোরের সঙ্গে রাস্তায় পা মেলান প্রতিবাদীরা। কার্যত বন্ধ হয়ে যায় রাস্তা। সেই সময় পুলিশ মিছিল আটকায়। সেই খবর কানে যেতেই অনশন মঞ্চ থেকে জুনিয়র চিকিৎসকরা ছুটে আসেন। তাঁরা ঠেলে ম্যাটাডোর বের করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশ ম্যাটাডোরের চাবি নিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। সেই নিয়ে পুলিশ এবং জুনিয়র চিকিৎসকদের মধ্যে বচসা বাধে, শুরু হয় ধস্তাধস্তিও।
এদিন পুলিশ জানায়, কোনও রকম মাইক, ব্যানার রাখা যাবে না। সেই মাইক, ব্যানার খুলে নেওয়ার পরও সমস্যা কাটেনি। এর পর মানববন্ধন করে ম্যাটাডোরগুলি ঠেলে বের করে নিয়ে যেতে শুরু করেন প্রতিবাদীরা। ঢাকের আওয়াজের সঙ্গে রাস্তায় প্রতিবাদীদের সঙ্গে পা মেলান সাধারণ মানুষের অনেকেও। জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি, ম্যাটাডোরে যাবেন বলে আগেই জানিয়েছিলেন তাঁরা। তখন কিছু বলা হয়নি, কিন্তু এদিন রাস্তায় নামতেই বলা হয়, মালবাড়ি গাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে না। যদিও পুলিশের দাবি, ম্যাটাডোর নিয়ে যাওয়া যাবে না আগেই জানানো হয়েছিল।
দু'পক্ষের মধ্যে বচসা শুরু হলে পুলিশকে বলতে শোনা যায়, "কোনও কথা বলতে দেবেন না, শুনবেন না। কিছু হলেই সবাই গালাগালি দেবেন। এভাবে চলতে পারে না। দিন গালাগালি দিন।" এর পাল্টা জুনিয়র চিকিৎসকরা বলেন, "কী করব বলুন! ম্যাটাডোর বলেননি আপনারা।" জবাবে পুলিশকে বলতে শোনা যায়, "বলা হয়েছিল। অর্ধের লোক গালাগালি করবেন, এভাবে কথা বলা যাবে না।" আন্দোলনকারীরা জবাবে বলেন, "মানুষ পুলিশের উপর বিরক্ত। আপনারা এই ধরনের কাজ করছেন বলেই।" পুলিশ আধিকারিককে বলতে শোনা যায়, "লালবাজার থেকে জানানো হয়েছিল।" কিন্তু প্রতিবাদীরা জানান, কিছু জানানো হয়নি। পুলিশ আইনের প্রসঙ্গ টানলে, আন্দোলনকারীরা পাল্টা প্রশ্ন তোলেন যে, "ধর্ষণ, তথ্যলোপাট কোন আইনে আছে?"
এর পর কার্যত পুলিশকে ধাক্কা দিয়ে ম্যাটাডোর বের করে নিয়ে যায় ভিড়। ধস্তাধস্তিতে এক মহিলা পুলিশ আহত হন বলে জানা যায়। কাঁদতে দেখা যায় তাঁকে। শেষ পর্যন্ত পুলিশি বাধা সরিয়েই অনশন মঞ্চ অভিমুখে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় তিনটি ম্যাটাডোর। 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' স্লোগান মুখে এগিয়ে চলে মিছিল।
আজ ধর্মতলার ধর্নামঞ্চ থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের যাত্রাপথে থাকছে কালীঘাট, মুদিয়ালি, সুরুচি সঙ্ঘ, চেতলা অগ্রণী, বাদামতলা আষাঢ় সঙ্ঘ, দেশপ্রিয় পার্ক, ত্রিধারা, বালিগঞ্জ কালচারাল, ট্রায়াঙ্গুলার পার্ক, গড়িয়াহাট মোড়, ঢাকুরিয়া, যাদবপুর হয়ে বাইপাস ধরে ধর্মতলায় এসে শেষ হবে এই পরিক্রমা। কলকাতা পুলিশকে লেখা জুনিয়র ডাক্তারদের চিঠিতে উল্লেখ, তিনটি ম্যাটাডোরে হ্যান্ড মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম-সহ এই পরিক্রমায় ৬০-৭০ জন চিকিৎসক রয়েছেন।