কলকাতা: বিধানসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গে SIR প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেই নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যেই বিজেপি-র অস্বস্তি বাড়ালেন, কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি তথা বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, বিজেপি তৃণমূলকে আদৌ হারাতে চায় কি না, তা-ই গভীর প্রশ্ন। এবিপি আনন্দ-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে যে মন্তব্য করলেন তিনি, তাতে অস্বস্তি বাড়ল রাজ্য গেরুয়া শিবিরের। (Abhijit Gangopadhyay)

Continues below advertisement

এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হলে অভিজিতের কাছে জানতে চাওয়া হয়, "আপনি কি বলতে চাইছেন, এই যে বিজেপি, এখনকার সময়ের বিজেপি, সেই বিজেপি-র পক্ষে তৃণমূলকে সরানো সম্ভব নয়, বা এই বিজেপি তৃণমূলকে আদৌ সরাতে চায় না?" অভিজিৎ জবাবে বলেন, "বিজেপি সরাতে চায় কি, চায় না, এটা অনেক গভীর প্রশ্ন। সেই প্রশ্নে আজই যাব না আমি। কিছু দিন বাদে হয়ত আমি যাব।"  (West Bengal BJP)

সেখানেই থামেননি অভিজিৎ। বরং তিনি আরও বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকারের অ্যাকশন দেখে আমার মনে হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের এই যে পরিস্থিতি, তাকে বদল করতে চায় না। কেন্দ্রীয় সরকার যদি পরিস্থিতি বদল করতে না চায়, তাহলে সেই বদল হবে না। কেন যে পশ্চিমবঙ্গের মতো একটা শাসনহীন, প্রশাসনহীন রাজ্যে অন্তত ৩৫৫ ধারা জারি করা হবে না, সেটা তো আমার কাছে একটা বিরাট প্রশ্ন।"

Continues below advertisement

অভিজিৎ আরও বলেন, "আমার বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার এবং তাদের হয়ে ভোটে দাঁড়ানো...আমার উদ্দেশ্য ছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার সব রকমের ব্যবস্থা করা হবে। সেই উদ্দেশ্যের ধারেকাছে আজ পর্যন্ত আমি গিয়ে উঠতে পারিনি। তার দায় মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের। কেন্দ্রীয় সরকার এর জন্য কিছু করেনি।"

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর, প্রচারে হিন্দিভাষী নেতাদের উপর জোর দেওয়া নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপি-র একাংশ। এবার ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে হিন্দি বলয়ের নেতাদের নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন অভিজিৎ। তাঁর বক্তব্য, "এই হিন্দি বলয় থেকে এখানে নেতা এনে ভোট করানো যাবে না। কারণ পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মন, মেজাজ, তাদের অভিমান, এসব দিল্লিওয়ালা নেতারা বোঝেন না। পশ্চিমবঙ্গ একটি সম্পূর্ণ আলাদা জায়গা। পশ্চিমবঙ্গের মৃত্তিকা, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ, তাদের চিন্তাভাবনা, তা বাকি ভারত, অন্তত উত্তর ভারতের সঙ্গে অন্তত মিলবে না। দক্ষিণ ভারতের কথা আমি বলতে পারব না। তাই সেখান থেকে নেতা পাঠিয়ে, ভোট করিয়ে, জিতিয়ে বেরিয়ে যাব, এটা অবাস্তব চিন্তাভাবনা। এসব করে কিছু হবে না। বরং পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যেটা দেখতে চায়...যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দাও। পুলিশকে কেন্দ্রীয় সরকারের আওতায় নিয়ে এসো। তার পর ভোট করো গণতান্ত্রিক ভাবে। মানুষ ভোট দিতে যাক। যেখানে তৃণমূলের বাঁদর-বাচ্চার লাফালাফি করে তাদের আটকাবে না, সন্ত্রাস সৃষ্টি করবে না। সেই অবস্থায় ভোট হোক। তার পর যদি তৃণমূল আসে আসবে।"

কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি থাকাকালীন শিক্ষা দুর্নীতির বিভিন্ন মামলায় অভিজিতের একাধিক রায় গোটা রাজ্যে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। একাধিক মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন বিজেপি-র সাংসদ অভিজিৎ সেই কেন্দ্রীয় সংস্থার ভূমিকায় সন্দেহ প্রকাশ করে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, "গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ তাদের বড় বড় নেতাদের বিরুদ্ধে। একটাও তদন্ত হচ্ছে! একজনকেও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে? কিসসু করা হচ্ছে না। সিবিআই এবং ইডি আজ তো আমার মনে হয়, এত দিন লক্ষ্য করে মনে হয়, সিবিআই এবং ইডি-র বেশ কিছু বড় এবং মেজো কর্তা তারা বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলের মদতপুষ্ট হয়ে, কংগ্রেস বা অন্য কোনও দল দ্বারা প্রভাবিত তারা যে, 'এগুলো কোরো না! করার দরকার নেই'? কেন করছেন না। আমি প্রবীণ সুদ, সিবিআই ডিরেক্টরকে বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে ব্যাখ্যা দিন। কেন করা হল না? অভয়া মামলা থেকে, রাজীব কুমার মামলা, শিক্ষা দুর্নীতি, আমি বহু উদাহরণ এখনই দিয়ে দিতে পারি।"

SIR নিয়ে তৃণমূল এবং নির্বাচন কমিশনের সংঘাত  যখন চরমে, বিজেপি কমিশনের পাশেই দাঁড়াচ্ছে। অভিজিৎ কিন্তু কমিশনের দিকে আঙুল তুলছেন। তাঁর কথায়, "নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা নিয়ে কোনও সন্দেহ না থাকলেও, নির্বাচন কমিশনের কাজকর্ম নিয়ে আমার কিছু সন্দেহ তৈরি হয়েছে। স্পষ্ট ভাষাতেই বলতে হয়। কমিশন এর আগে, ভোটার তালিকায় গন্ডগোল করার জন্য চার-পাঁচ অফিসারের বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছিল। সাসপেন্ড করার কথা বলা হয়েছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে সাসপেন্ড করা হলেও, কারও বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর হয়নি। এফআইআর করার কথা ছিল রাজ্য সরকারের। বহু হুঙ্কার ছাড়লেও, এফআইআর করা হল না বলে আজ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে কিছু করেনি। কেন করেনি?"

যদিও অভিজিতের মন্তব্যে বিজেপি-কেই কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল নেতা অরূপ চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, "একটা সময় উনি আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, 'আমি যাঁর পায়ের তলায় বসে আইন শিখেছি', বিকাশবাবুর দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন। আমার মনে হয়, বিকাশবাবুর প্রভাব ওঁর মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে কি না, তা নিয়ে মুরলিধর সেন লেন একটা তদন্ত কমিশন বসাক। কারণ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য তো সুদূরপ্রসারী! অর্থ অত্যন্ত গভীর। বিজেপি-র সাংসদ বলছেন, কেন্দ্রীয় সরকার চায় না। বিজেপি-র সাংসদ এই মন্তব্য করলে স্বাভাবিক ভাবেই বিতর্কের অবকাশ থাকছে।"

অভিজিতের এমন প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিজেপি-র বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, "উনি ওঁর মতগুলি যথাযোগ্য জায়গায় বলতে পারেন, সেই নিয়ে আলোচনাও হবে। এই মুহূর্তে আমাদের মূল লক্ষ্য বচ্ছে, তৃণমূলকে এই রাজ্য থেকে সরানো। ফলে সেই সরানোর লক্ষ্যে কোনও ধরনের দুর্বলতা, আত্মসন্তুষ্টি, বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া কাঙ্খিত নয়।"