কলকাতা: জেলা নেতৃত্বের সুপারিশ করা তালিকা ধরে নয়, আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে(Panchayat Elections 2023)  প্রার্থী বাছবেন মানুষই। 'জনসংযোগ যাত্রা'র অনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটিয়ে ঘোষণা তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee)। অভিষেক জানিয়েছেন, জেলা নেতৃত্ব, ব্লক সভাপতির তরফে সুপারিশপত্র অবশ্যই হাতে পৌঁছেছে তাঁদের (TMC)। কিন্তু প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে জনমতের ভিত্তিতে। মানুষ যাঁকে যোগ্য মনে করবেন, গোপন ব্যালটে তাঁর নাম লিখে জানাবেন। জেলা, ব্লক স্তরের নেতাদের থেকে তা গোপনে রাখা হবে। সেই ব্যালটে যিনি এগিয়ে থাকবেন, তাঁকেই প্রার্থী করবে তৃণমূল।


পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে, বুধবারই জনসংযোগ কর্মসূচির ঘোষণা করেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার 'তৃণমূলে নবজোয়ার' কর্মসূচির পূর্ণাঙ্গ রূপ প্রকাশ করলেন অভিষেক। এর আওতায়, ২৫ এপ্রিল থেকে দু'মাস ধরে জেলায় জেলায় ঘুরবেন অভিষেক। মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন, নেবেন সকলের মতামত। আর সেই কর্মসূতির আওতায় প্রার্থী বাছাই.য়ের ক্ষেত্রেও জনমতকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে তৃণমূল। 


নিয়োগ দুর্নীতি থেকে গরুপাচার, কয়লাপাচারের অভিযোগে যখন বিদ্ধ দল, সেই সময় পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলের এই কর্মসূচিকে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা হিসেবেই দেখছে রাজনৈতিক মহল। এ দিনও অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আশ্বাস দেন অভিষেক। সেখানেই জানান, মানুষ নিজের প্রার্থী নিজেই ঠিক করবেন। 


আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee: মানুষ চাইলে CPM প্রার্থীর সঙ্গেও কথা, ‘ভারত জোড়ো’ নয় জনসংযোগ যাত্রা, বললেন অভিষেক


এ দিন অভিষেক বলেন, "শান্তিপূর্ণ, অবাধ নির্বাচন তো হবেই! প্রার্থী ঠিক করতে মানুষের মতামত নেব। ৬০ হাজার গ্রামীণ বুথে কে প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে মানুষের মতামত নেব। এমন কেউ প্রার্থী হবেন, যিনি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করবেন। এতদিন বন্ধ ঘরে বসেই প্রার্থী ঠিক হতো। ভারতে এই প্রথম মানুষের পঞ্চায়েত গড়তে মানুষের মতামত নিতে চলেছি। গত নয় থেকে ১০ বছরের সাংসদ জীবনে যে টুকু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি, তা থেকে বুঝেছি, পঞ্চায়েতই সমাজের শিরদাঁড়া। সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজ, পরিষেবা পঞ্চায়েতের মাধ্যমেই মানুষের কাছে পৌঁছয়। তাই মানুষ যাঁকে যোগ্য মনে করবেন, ভরসা করবেন যাঁর উপর, তাঁকেই প্রার্থী করা হবে।"


কিন্তু মানুষ যদি সিপিএম, বিজেপি অথবা কংগ্রেসের কাউকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নেন? অভিষেকের সাফ জবাব, মানুষের পছন্দকেই অগ্রাধিকার দেবেন তিনি। প্রয়োজনে নিজে গিয়ে কথা বলবেন মানুষের পছন্দের প্রার্থীর সঙ্গে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে অভিষেকের এই মন্তব্যের নেপথ্যে জনসংযোগের কৌশলই কাজ করছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের। বিগত কয়েক মাস ধরে যে ভাবে দলের নেতা-মন্ত্রীদের নাম জড়িয়েছে একের পর এক মামলায়, যে ভাবে বিরোধীরা লাগাতার আক্রমণ করে চলেছেন, তাতে একেবারে তৃণমূল স্তর থেকেই অভিষেক মানুষের আস্থা অর্জন করতে চাইছেন বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের। 


পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ক্ষণ ঘোষণা হওয়ার আগেই তাই টানা দুই মাস ধরে জনসংযোগ যাত্রায় উদ্যোগী হয়েছে তৃণমূল। ২৪ এপ্রিল থেকে কোচবিহারে যাত্রা শুরু করছেন অভিষেক। দলীয় সূত্রে খবর, ওইদিন রাতে দিনহাটায় কর্মীদের সঙ্গে তাঁবুতে থাকবেন অভিষেক। পরের দিন সাহেবগঞ্জ, গোসানিমারি ও শীতলকুচি, এই তিনটি জায়গায় রোড শো করে পৌঁছে সভা করবেন তিনি। ২৫ এপ্রিল মাথাভাঙা কলেজ ময়দানে কর্মীদের সঙ্গে তাঁবুতেই রাত কাটাবেন অভিষেক। ২৬ এপ্রিল মাথাভাঙা থেকে রোড শো করে কোচবিহার ২ নম্বর ব্লকে জনসভা করবেন। এরপর চিলাখানায় সভা রয়েছে। ২৬ তারিখই তুফানগঞ্জ শহরের SSA ময়দানে তাঁবু খাটিয়ে রাত্রিবাস। পরের দিন সকালে রোড শো করে রওনা দেবেন আলিপুরদুয়ারের উদ্দেশে। অভিষেকের জনসংযোগ যাত্রা নিয়ে ইতিমধ্যেই তৃণমূলের তরফে চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু হয়েছে কোচবিহার জেলায়।