কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও অর্ণব মুখোপাধ্য়ায়, কলকাতা : চন্দ্রশেখর থেকে লালকৃষ্ণ আডবাণী। YS রাজশেখর রেড্ডি থেকে চন্দ্রবাবু নায়ডু। কিংবা হালে রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) থেকে প্রশান্ত কিশোর। ভারতীয় রাজনীতিতে পদযাত্রা নতুন নয়। এই কৌশলে ভর করে ভোটে সুফলও পেয়েছেন অনেকে। এবার পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayat Vote) আগে সেই পথে হেঁটে জনসংযোগ যাত্রায় নামছেন অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায় (Abhishek Banerjee)।


ভারতবাসী ইংরেজদের বিরুদ্ধে গান্ধীজির মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে ডান্ডি যাত্রা দেখেছে। সম্প্রতি রাহুল গান্ধীর হাজার হাজার কিলোমিটার পায়ে হেঁটে ভারত জোড়ো যাত্রা দেখেছে। তার অংশ হিসেবে এরাজ্য়ের মানুষ প্রদেশ কংগ্রেসের সাগর থেকে পাহাড় পদযাত্রাও দেখেছে। '৯-এর দশকে লালকৃষ্ণ আডবাণীর রথযাত্রা দেখেছে। মুরলীমনোহর যোশী যখন বিজেপির সভাপতি, তখন নরেন্দ্র মোদির তত্ত্বাবধানে একতা যাত্রা দেখেছে। এবার পঞ্চায়েত ভোটের আগে কার্যত সেই কায়দায় জনসংযোগ যাত্রায় নামছেন অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়।


২৫ এপ্রিল থেকে ৬০ দিনে সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। ২৫০-এর বেশি জনসভায় ৩০ লক্ষের বেশি মানুষের সঙ্গে জনসংযোগের লক্ষ্য়মাত্রা নেওয়া হয়েছে। অভিষেক বলেন, আমরা মিটিং শেষে ক্য়াম্পে আসব। সেখানে বৈঠক হবে। ডিনারের ব্য়বস্থা থাকবে।

অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের এই কর্মসূচির সঙ্গে অনেকেই তুলনা টানছেন কয়েক মাস আগে শেষ হওয়া রাহুল গাঁধীর ভারত জোড়ো যাত্রার। যেখানে ১৪৬ দিনে প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার পথ হেঁটে পেরোন রাহুল গাঁধী। তামিলনাড়ু থেকে শুরু হওয়া সেই যাত্রা ১৪টি রাজ্য় ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্য়ে দিয়ে গিয়ে, শেষ হয়েছিল কাশ্মীরে। যদিও, তৃণমূলের জনসংযোগ যাত্রায় অভিষেকের হাঁটার কোনও কর্মসূচি নেই। অভিষেক বলেন, ভারত জোড়ো যাত্রার মতো এটা পদযাত্রা নয়। বাংলায় পদযাত্রা করতে চাইলে ২ মাসে কভার করতে পারব না। পায়ে হেঁটে করলে দেড় থেকে ২ বছর সময় লাগবে। জনসংযোগ যাত্রা করছি, তার কারণ বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে কথা বলব মানুষের সঙ্গে। বাংলাকে যারা লাঞ্ছিত করে রেখেছে তাঁদের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার জোয়ার এই কর্মসূচি।

১৯৩০ সালে লবণের উপরে ব্রিটিশ সরকারের কর চাপানোর প্রতিবাদে গুজরাটের সবরমতী আশ্রম থেকে ৩৮৮ কিলোমিটার পদযাত্রা করে ডান্ডিতে পৌঁছেছিলেন গান্ধীজি। ১৯৮৩ সালে চন্দ্রশেখর ৪ হাজার কিলোমিটার পদযাত্রা করেছিলেন, প্রায় ছ’মাস ধরে। ২০০৩ সালের ৯ এপ্রিল পদযাত্রা শুরু করেছিলেন ওয়াই এস রাজশেখর রেড্ডি। অন্ধ্রপ্রদেশের ১১টি জেলায় দুই মাস ধরে ১৫০০ কিলোমিটার পদযাত্রা করার পরের বছরই কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।


সেইসময় YS রাজশেখর রেড্ডির পদযাত্রার কারণে ক্ষমতা হারান তেলগু দেশম পার্টির চন্দ্রবাবু নায়ডু। আবার সেই চন্দ্রবাবুই ২০১৩ সালে রাজ্যজুড়ে ১,৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পদযাত্রা করার পরের বছরই ২০১৪ সালে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালে মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিংয়ের ছ’মাসের পদযাত্রা কর্মসূচি যা নর্মদা যাত্রা নামেই পরিচিত ছিল। ক্ষমতায় এসেছিল কংগ্রেস। গতবছর থেকে বিহারে পদযাত্রায় নেমেছেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। পশ্চিম চম্পারন থেকে শুরু হওয়া এই জন সূরজ যাত্রাতেও সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পেরোবেন তিনি।

কর্নাটকে বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে, সম্প্রতি সেরাজ্য়ে বিজয় সঙ্কল্প যাত্রা নামে একটি বিরাট পদযাত্রা করেছে বিজেপি।
উত্তরপ্রদেশেও ভোটের আগে লম্বা রথযাত্রার সূচনা করেছিলেন যোগী আদিত্য়নাথ। বিভিন্ন রাজ্য়ে ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদির লম্বা রোড শো....কিংবা একের পর এক জনসভাও ঝড় তুলেছে। একই পথে হেঁটেছেন অমিত শাহ-জে পি নাড্ডাও।


এ রাজ্য়েও বামেদের দীর্ঘ জাঠার বহু উদাহরণ আছে। এবার জনসংযোগ যাত্রা কি পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলকে সেরকম কোনও সুফল দিতে পারবে ? সেটা বোঝা যাবে কয়েকমাস পরই।