কলকাতা: 'ব্যাঙ্ক অব মমতা, এখানে চোরাই মাল রাখা হয়'। বেলঘরিয়ায় টাকা উদ্ধারের পর এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করেন অধীর চৌধুরী। এ দিন এবিপি আনন্দকে ফোনে তিনি বলেন, 'যেদিন প্রথম টাকা উদ্ধার হয়, আমরা বলেছিলাম এটা টিপস অব দ্য আইসবার্গ। আমাদের আশঙ্কা যে সত্য ছিল তার প্রমাণ বেলরিয়ায় পাওয়া গেল। এরকম কত জায়গায় যে টাকা ছড়ানো আছে, তা চোররাই জানে'।


পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা নিয়ে অধীরের মন্তব্য, 'এ দৃশ্য বাংলা আগে কোনওদিন দেখেনি। বুঝিয়ে দিল বাংলা পিছিয়ে থাকে না, বাংলা টাকা লুটে নিজের জায়গা করেছে। এখন প্রশ্ন এর পরেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কীভাবে বলে বিচার হলে দেখা যাবে, কোর্ট বললে দেখা যাবে। নৈতিকভাবে পরাজিত'।


শেষ নয় এখানেই, এদিন সরাসরি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে অধীরের মন্তব্য, 'আপনি পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে না রক্ষা করতে পারছেন না ছাড়তে পারছেন। পার্থ আপনার ডান হাত। ওঁকে অবজ্ঞা করলে আরও বড় বিপদ হবে আপনি জানেন, তাই কোনও দিকেই যেতে পারছেন না। পার্থ নিজেকে বাঁচাতে আরও বেশি করে সব ফাঁস করে দেবে'।


পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের আরেকটি ফ্ল্যাট থেকেও মিলল টাকার পাহাড়। টালিগঞ্জের পর এবার বেলঘরিয়ায়, অর্পিতার ফ্ল্যাটে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে, কোটি কোটি টাকা, গয়না এবং সম্পত্তির নথি উদ্ধার করলেন গোয়েন্দারা। শেষে ট্রাকবোঝাই ট্রাঙ্কে করে নিয়ে যাওয়া হল সেই টাকা। 


আবার যকের ধন। দক্ষিণের পর এবার উত্তরেও টাকার পাহাড়। আর এখন যে প্রশ্নটা জোরাল হয়ে উঠছে, তা হল। এটা কি স্রেফ হিমশৈলের চূড়া? আরও কত টাকা লুকোনো আছে? আরও কত উদ্ধার হবে? টালিগঞ্জের মতো বেলঘরিয়াতেও দেখা গেল, ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে রাশি রাশি ২ হাজার এবং পাঁচশোর নোটের বান্ডিল।


এতদিন এরকম দৃশ্য সাধারণত দেখা যেত বলিউডের ছবিতে কিন্তু, এবার চিত্রনাট্যকে হার মানাচ্ছে বাস্তব! রিলকে ছাপিয়ে যাচ্ছে রিয়েল! শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির তদন্তে, ইডি একেকটা ফ্ল্যাটে হানা দিচ্ছে, আর উদ্ধার হচ্ছে কোটি কোটি টাকা!কিন্তু, এই টাকা কি অর্পিতার একার হওয়া সম্ভব? কে টাকা রাখতে দিয়েছিলেন অর্পিতাকে? অর্পিতার ফ্ল্যাট কি টাকা লুকনোর জায়গা হিসাবে ব্যবহৃত হত?


যকের ধনের আসল মালিক কে? মূল চাঁই কে? কিংপিন কে? কানে টান পড়ার পর কি মাথা আসবে? শুধুই কি চাকরি বিক্রির টাকা? না কি আরও দুর্নীতির টাকা? এবিপি আনন্দই প্রথম বেলঘরিয়ায় অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট খুঁজে বার করে। বুধবার সেই ফ্ল্যাট থেকেই উদ্ধার হল কোটি কোটি টাকা ও কেজি কেজি সোনার বাট এবং রাশি রাশি দলিল। 


ইডি সূত্রে দাবি, টালিগঞ্জের ফ্ল্যাটের মতো এই ফ্ল্যাটেও একটি ঘরে অনেক ওয়ার্ড্রোব রয়েছে। সেই ওয়ার্ড্রোবগুলি খুলতেই দেখা যায়, তার ভিতরে থরে থরে সাজানো দু’হাজার এবং পাঁচশো টাকার নোটের বান্ডিল। ইডি সূত্রে দাবি, একটি-দু’টি ওয়ার্ড্রোব নয়, সবক’টি ওয়ার্ড্রোবেই ঠাসা ছিল নগদ টাকা! টাকা গুনতে নিয়ে আসা হয় অত্যাধুনিক মেশিন। যাতে মিনিটে হাজারটি করে নোট গোনা যায়। টাকা গুনতে ব্যাঙ্ক থেকে নিয়ে আসা হয় দক্ষ অফিসারদের! কিন্তু, এ কি দু-পাঁচ লক্ষ টাকার মামলা! উদ্ধার হওয়া টাকা গুনতে কার্যত রাত কাবার হয়ে যায়! এর পর আনা হয় ট্রাক। সব মিলিয়ে ফের একবার ইডির অভিযান ঘিরে রোমহর্ষক ছবি!