রাজা চট্টোপাধ্যায়, অরিন্দম সেন ও আশাবুল হোসেন, আলিপুরদুয়ার : জন বার্লা কি তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন ? বিধানসভা উপনির্বাচনের মুখে, তাঁর বাড়িতে তৃণমূল নেতাদের বৈঠকের পরই শুরু হয়েছে জল্পনা। পাশাপাশি আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ মনোজ টিগ্গাকে নাম না করে 'ওয়ান ম্যান আর্মি' বলে কটাক্ষ করেছেন বার্লা। পাল্টা জবাব দিয়েছেন টিগ্গাও।


আর এক সপ্তাহ পরই আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন। অথচ বিজেপির প্রচারে একবারের জন্যও দেখা যায়নি মোদি সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী ও আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ জন বার্লাকে। এই আবহেই ভোটের ঠিক আগে জল্পনা বাড়িয়ে, বাড়িতে তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করলেন জন বার্লা ! আর তারপরেই ইঙ্গিতপূর্ণভাবে আলিপুরদুয়ারের বর্তমান বিজেপি সাংসদ মনোজ টিগ্গাকে তীব্র আক্রমণ করলেন, বিজেপিরই প্রাক্তন সাংসদ ! আর এর ফলেই প্রশ্ন জোরাল হয়েছে, তাহলে কি 'ফুল' বদল করতে চলেছেন জন বার্লা ? শক্ত ঘাঁটি উত্তরবঙ্গে কি ফাটল ধরতে চলেছে বিজেপিতে ? এ প্রসঙ্গে জন বার্লা বলেন, 'এই নেতৃত্বের সঙ্গে কীভাবে কাজ করব ?' তাহলে কি দল পরিবর্তন করছেন ? জবাবে বার্লা বলেন, 'না, এখনও পর্যন্ত দলবদলের কোনও চিন্তাভাবনা করিনি। কিন্তু, আমি একদম নিরপেক্ষ আছি।' 


সোমবার জন বার্লার বাড়িতে গিয়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক দীপেন প্রামাণিক ও জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র দুলাল দেবনাথ। দুলাল দেবনাথ বলেন, 'আমাদের কোনও সেটিংয়ের দরকার হয় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের সেনাপতির সাংগঠনিক দক্ষতা, এতে আকৃষ্ট হয়ে জন বার্লা যদি মনে করেন, আমাদের সঙ্গে আসবেন, তাহলে আসতে পারেন। এখন বিষয়টা আমাদের রাজ্য নেতৃত্ব, জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।' 


এই বৈঠকের পরই, নাম না করে আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ ও জেলা সভাপতি মনোজ টিগ্গাকে তীব্র আক্রমণ করলেন জন বার্লা। বলেন, 'এখন আমিই চেয়ারম্যান, আমিই জেলা সভাপতি, আমিই সাংসদ-বিধায়ক, সবকিছু তুমি। বাকি কী করবে? 'ওয়ান আর্মি' হিসেবে জেলা চালালে, তাহলে কী চলতে পারবে? কেউ ওইভাবে নেতা হিসেবে নামতে পারছেন না। কোনও নেতা, জেলা থেকে অনেক নেতা নামছেন না। 'ওয়ান ম্যান আর্মি' হিসেবে চলছে। ওইভাবে তো চলবে না।' 


এ প্রসঙ্গে বিজেপি সাংসদ ও আলিপুরদুয়ারের সভাপতি মনোজ টিগ্গা বলেন, 'বিজেপিতে ওয়ান ম্যান আর্মি বলে কিছু থাকে না, সবকিছু গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হয় । উনি হয়তো বলছেন প্রার্থীর ব্যাপারে, উনি কতদিন বিজেপি করেছেন জানি না, কিন্তু আমাদের দলে আমাদের কেন্দ্রীয় নির্বাচন সমিতি এবং পার্লামেন্টারি বোর্ড ঠিক করে, লোকসভা-বিধানসভায় কারা কোন জায়গায় প্রার্থী হবেন। ওঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। ওঁর ব্যাপার...কার সঙ্গে বসবেন, কার সঙ্গে বসবেন না... কোথায় থাকবেন, কোথায় থাকবেন না...সেটা ব্যক্তিগত ব্যাপার।'  


মনোজ টিগ্গার হয়ে পাল্টা জন বার্লাকে আক্রমণ করেছেন দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, 'এখানে ওঁকে যারা জিতিয়েছিলেন, ওঁরাই উপনির্বাচনে জেতাবেন। উনি সাংসদ, মন্ত্রী হয়েছিলেন। উত্তরবঙ্গ থেকে কে সম্মান দিয়েছিল? বিজেপি দিয়েছিল। পার্টি যাকে যে কাজ দিয়েছে, তাই করছি।'


অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, 'অনেকেই বিজেপির ভবিষ্যৎ বুঝে গিয়েছেন। বিজেপির ক্রিয়াকলাপে বিরক্ত। বিশেষভাবে যাঁরা মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করতে চান, তাঁরা বুঝতে পারছেন...বাংলা-বিরোধী রাজনীতিটায় মানুষ বিরক্ত হচ্ছেন। বিজেপির নেতৃত্ব এবং নীতিতে বিরক্ত হয়ে বিভিন্ন ধরনের ভাবনা-চিন্তা করছেন।' 


ভোটের আগেই কি দল বদলাতে পারেন জন বার্লা ? তাতে কি উপ নির্বাচনে বিজেপির ক্ষতি হবে ? না কি শক্তঘাঁটি মাদারিহাটে ফের ফুটবে পদ্ম ?জানা যাবে ২৩ নভেম্বর।