নয়াদিল্লি: প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ভয়ঙ্কর পরিণতির একাধিক উদাহরণ রয়েছে। সেই সব স্মরণে থাকা সত্ত্বেও নতুন করে প্রতিবাদের সাহস দেখাতে পেরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া তরুণী, আহু দরিয়াই। পোশাক নিয়ে নীতি পুলিশের চোখ রাঙানির সামনে দাঁড়িয়ে জামা-কাপড় খুলে ফেলেছেন। চারপাশের সকলের চোখেমুখে যখন আতঙ্ক, অন্তর্বাস পরে হেঁটেছেন। টেনে-হিঁচড়ে, মারতে মারতে যখন গাড়িতে তোলে পুলিশ, একটিবারও সাহায্যের আর্জি জানাননি। কিন্তু চারপাশের মানুষজন, সমাজ মাধ্যম তাঁর সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানালেও ঘুরেফিরে উঠে আসছে একটাই প্রশ্ন, শেষরক্ষা হবে তো? কিন্তু যাঁকে ঘিরে এত প্রশ্ন, ইরানের সেই প্রতিবাদিনী আহু আসলে কে? অতীত জেনেও কোথা থেকে সাহস জুগিয়ে উঠলেন তিনি? উঠছে এই প্রশ্নও। 

Continues below advertisement

ইরানের রাজধানী তেহরানের ঐতিহ্যশালী ইসলামিক আজাদ ইউনিভার্সিটিতে শনিবার ওই ঘটনা ঘটে। হিজাব না পরা নিয়ে নীতি পুলিশের ভূমিকা পালনকারী, দেশের আধা সামরিক বাহিনীর চোখরাঙানির সামনে পোশাক খুলে ফেলে প্রতিবাদ জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া আহু। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে যে ভিডিও সামনে আসে, তাতে অন্তর্বাস পরে ক্যাম্পাসের বাইরে কখনও বসে থাকতে দেখা যায় আহুকে, কখনও আবার পায়চারি করতে দেখা যায়। টেনে-হিঁচড়ে, মারতে মারতে তাঁকে পুলিশ ভ্যানে তুলছে, এমন ভিডিও-ও সামনে আসে। কিন্তু তার পর থেকে আর খোঁজ পাওয়া যায়নি আহুর। সরকারের দাবি, আহু মানসিক ভাবে অসুস্থ। চিকিৎসা চলছে তাঁর। যদিও এই দাবি মানতে নারাজ আহুর পরিচিতরা। 

জানা যাচ্ছে, আহু বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছলে পোশাক নিয়ে তাঁকে হেনস্থা করে আধা সামরিক বাহিনী Basij Paramilitary Force. টেনে ছিঁড়ে দেওয়া হয় তাঁর স্কার্ফ এবং পরনের পোশাক। এরই প্রতিবাদে সব জামা-কাপড় খুলে ফেলেন তিনি। শুধুমাত্র অন্তর্বাস পরে সকলের সামনে পায়চারি করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে আহুর। দুই সন্তান রয়েছে তাঁর। অত্যন্ত চাপের মধ্যে ছিলেন তিনি। মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, সাধারণ কথা কাটাকাটি থেকে প্রথমে জামাকাপড় খুলে ফেলেন আহু। এর পরই পদক্ষেপ করে আধা সামরিক বাহিনী ও পুলিশ। যদিও এর সপক্ষে উপযুক্ত কার্যকারণ দেখাতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং দেশের সরকার। প্রথমে থানায় নিয়ে যাওয়া হলেও, আপাতত মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে আহুর চিকিৎসা চলছে। পরবর্তী পদক্ষেপের আগে তাঁর চিকিৎসার উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশের সরকার। যদিও সেই দাবি ধোপে টিকছে না।

Continues below advertisement

আরও পড়ুন: Ahoo Daryaei: নীতি পুলিশের খবরদারির বিরুদ্ধে অভিনব প্রতিবাদ, 'নিখোঁজ' ইরানের সেই তরুণী? মুখ খুলল দেশের সরকার

পোশাক নিয়ে সাধারণ নাগরিককে হেনস্থার ঘটনা ইরানে নতুন নয়। প্রতিবাদ জানাতে গেলে মানসিক রোগীর তকমা দিয়ে প্রতিবাদীর উপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগও রয়েছে ভূরি ভূরি। জনসমক্ষে ঢিলেঢালা পোশাকে শরীর ঢেকে, মাথা সম্পূর্ণ ঢেকে বেরনোর নির্দেশ রয়েছে সেদেশে। সামান্য এদিক ওদিক হলে, হিজাব 'ঠিকঠাক বাঁধা হয়নি' দোহাই দিয়েও মহিলাদের হেফাজতে নেওয়ার অভিযোগ আগেও উঠেছে। সেই তালিকাতেই নয়া সংযোজন আহু। ২০২২ সালে একই ভাবে মাঝরাস্তায় গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মাহসা আমিনি নামের এক তরুণী। হিজাব ঢিলে, পোশাক-শিক্ষা প্রয়োজন বলে সেই যে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় মাহসাকে, তার পর তাঁর নিথর দেহ দেখতে পান পরিবারের লোকজন। 

তাই আহু-র কী পরিণতি হবে, তা ভেবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সকলে। অবিলম্বে আহুর নিঃশর্ত মুক্তি চাই বলে সরব হয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। হেফাজতে যাতে কোনও রকম অত্যাচার না হয় আহুর উপর, পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যাতে দেখা করতে পারেন তিনি, আইনজীবী যাতে তাঁর হয়ে সওয়াল করতে পারেন, দাবি তুলেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।  রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছে তারা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আহুর কোনও খবর নেই। তাঁর চিকিৎসা চলছে বলে সরকার যদিও জানিয়েছে, তাঁকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কী চিকিৎসা হচ্ছে, মেলেনি সদুত্তর। তাই উদ্বেগ বাড়ছে।