রাজীব চৌধুরী ও সমীরণ পাল, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর ২৪ পরগনা: কিছুদিন আগেই নানা জেলায় একশো দিনের প্রকল্প নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছিল। নানা সময় তাতে অভিযোগের কাঠগড়ায় ছিলেন শাসক দলের নেতা কর্মীরা। এবার নানা জেলা থেকে মিলছে আবাস যোজনা প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ। মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদে আবাস যোজনায় বাড়ি প্রাপকদের তালিকায় নাম রয়েছে, তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান, তাঁর বাবা ও মায়ের। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ উঠতেই তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন বহরমপুরের বিডিও। একই অভিযোগ উঠেছে উত্তর ২৪ পরগনার কদম্বগাছিতেও। আবাস যোজনায় স্বজনপোষণের অভিযোগ নিয়ে তৃণমূলকে নিশানা করেছে বিজেপি।
চারিদিক পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। বিশাল এলাকাজুড়ে একতলা বাড়ি। বাড়িতে বসানো এসি। এটাই তৃণমূল প্রধানের বাড়িতে এসি। তারপরও, মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদের তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান রুবেল বিশ্বাসের নাম রয়েছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি প্রাপকদের তালিকায়। পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গে এই বাড়িতে থাকেন তাঁর বাবা তোজ্জামেল বিশ্বাস ও তাঁর মা রোশনা বিবি বিশ্বাস। বাড়ি প্রাপকের তালিকায় নাম রয়েছে তাঁদেরও। এখানেই শেষ নয়, তালিকায় নাকি নাম রয়েছে প্রধানের আরও ১০ আত্মীয়ের। বিষয়টি সামনে আসতেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে। যা নিয়ে সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করছেন তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান।
মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদ পঞ্চায়েতের তৃণমূল নেতা ও প্রধান রুবেল বিশ্বাস বলেন, 'কিছুই জানা ছিল না। নাম কেটে দেওয়ার জন্য বলেছি পঞ্চায়েতের কর্মীদের।' একই সাফাই দিয়েছেন প্রধানের বাবা ও মা তোজ্জামেল বিশ্বাস এবং রোশনা বিবি বিশ্বাস। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন বহরমপুরের বিডিও। বহরমপুরের বিডিও অভিনন্দন ঘোষ বলেছেন, 'এরকম তথ্য পেয়েছি। তদন্ত করতে যাবে ব্লক অফিসের তরফে।'
মুর্শিদাবাদ দক্ষিণের বিজেপি সভাপতি শাখারভ সরকার বলেন, 'এটা প্রমাণিত সরকারের টাকা আত্মসাৎ করেছে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। প্রতারিত করে গরিব মানুষকে লুঠ করছে।'
উত্তর ২৪ পরগনাতেও একই অভিযোগ:
মুর্শিদাবাদে যখন কাঠগড়ায় পঞ্চায়েতের প্রধান, তখন উত্তর ২৪ পরগনার কদম্বগাছিতে পঞ্চায়েত সদস্যের স্ত্রী সোমা ঘোষ, শ্যালক সৌরভ ঘোষ, শাশুড়ি অঞ্জলি ঘোষের নাম রয়েছে আবাস যোজনার তালিকায়। যদিও প্রত্যেকেই ঝাঁ চকচকে বাড়িতে থাকেন। এনিয়ে জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন কদম্বগাছি পঞ্চায়েতের বেলঘরিয়ার বাসিন্দা জয়দেব ঘোষ।
তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের স্ত্রী সোমা ঘোষের দাবি, এর আগে যখন সার্ভে হয়েছিল সেই সময় তালিকায় তাঁদের নাম উঠেছিল বর্তমানে তাঁদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে এবং যাঁরা সার্ভে করতে এসেছিল তাঁরাই এই নাম দিয়েছিল।
কোঠরা-কদম্বগাছির বিজেপির মণ্ডল সভাপতি কালীপদ ঘোষ বলেন, 'পঞ্চায়েত সদস্য কার্তিক ঘোষের স্ত্রী শালা শাশুড়ি ঘর পাওয়ার যোগ্য না এটা তৃণমূলের কালচার। ভাবেই তারা দুর্নীতি করছে।'
বারাসাত ১-এর তৃণমূল নেতা ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মহম্মদ আরশাদ উদ জামান বলেন, 'পুরনো লিস্টে অনেকের নাম ছিল, প্রশাসনিকভাবে তদন্ত চলছে। যাঁরা ঘর পাওয়ার যোগ্য নয় তাঁদের নাম কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে। যাঁরা প্রকৃত ঘরের দাবিদার তাঁদেরকে ঘর দেওয়া হবে।'
আরও পড়ুন: আশাকর্মীর বাড়িতে আগুন! নেপথ্যে কি আবাস যোজনার সমীক্ষার যোগ?