বর্ধমান: আদানি গোষ্ঠীর (Adani Group) বিরুদ্ধে কারচুপি এবং জালিয়াতির অভিযোগ। তা নিয়ে উত্তাল বাজার। উথাল পাতাল অবস্থা শেয়ার বাজারেরও। সেই অবস্থাতেই বুধবার কেন্দ্রীয় বাজেটে একাধিক জনমোহিনী ঘোষণা হয়েছে (union Budget 2023)। দরিদ্র, কৃষকের জন্য তেমন কোনও ঘোষণা না থাকলেও, আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে মধ্যবিত্তের মুখে হাসি ফুটিয়েছে কেন্দ্র। সেই নিয়ে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারকে কার্যত তুলোধনা করলেন বাংলার মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। যদিও আদানির নাম মুখে আনেননি তিনি। 


কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারকে কার্যত তুলোধনা করলেন মমতা


বৃহস্পতিবার বর্ধমানে প্রশাসনিক সভা করলেন মমতা। সেখান থেকেই কেন্দ্রকে একহাত নেন তিনি। এ দিন মমতা বলেন, "গতকাল কেন্দ্র একটি বাজেট করেছে। বেকারদের জন্য একটি কথাও বলেনি। খরচ করেনি একটি শব্দও। ভোট এলে বলে ২ কোটি চাকরি দেব, মিটে গেলে চাকরি খেয়ে নেয়। সব শিল্প বন্ধ। কাল প্রায় সরকার পড়ে যাচ্ছিল।"


নিজের মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে মমতা আরও বলেন, "শেয়ার বাজারে ধস নেমেছিল। টাকার জন্য অনুরোধ জানিয়ে ফোন করে ছ'-আট জনকে। কারও কাছে ২০ হাজার কোটি, কারও কাছে ৩০ হাজার কোটি, কারও কাছে ১০ হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়। বলা হয় শেয়ার কিনতে। যাদের শেয়ার পড়ে যাচ্ছিল, টাকা দিতে বলা হয় তাদের। কাদের ফোন করা হয়েছিল, নাম জানি আমরা। কিন্তু নাম বলে পরিস্থিতি দুর্বিসহ করে তুলতে পারি না। এই সরকার দিয়ে চলে!"


আরও পড়ুন: Justice Abhijit Ganguly: ‘চারপাশে এত দুর্বৃত্ত, একা সামলাতে পারছেন না দিদি’, ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য বিচারপতির


লগ্নি সংক্রান্ত বিষয়ে আমেরিকার গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের (Hindenburg Research) একটি রিপোর্টে সম্প্রতি আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ তোলা হয়। করফাঁকির স্বর্গরাজ্যে একাধিক ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে লেনদেন, বিপুল পরিমাণ ঋণ সংক্রান্ত তথ্য লুকনোর অভিযোগ ওঠে। বলা হয়, ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গোষ্ঠী লাগাতার শেয়ার দরে কারচুপি করেছে, আর্থিক প্রতারণায় যুক্ত থেকেছে। তার পর থেকেই শেয়ার বাজারে লাগাতার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন আদানি। সেরা ১০ ধনকুবেরের তালিকার বাইরে চলে গিয়েছেন তিনি। বাজার থেকে তুলে নিতে হয়েছে FPO। 


এর পর পরই, আমেরিকার HNI কর্পোরেশন প্রায় চার গুণ বেশি দরে আদানি গোষ্ঠীর FPO-তে ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। আবু ধাবির রাজ পরিবারের ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং কো. মোটা টাকা বিনিয়োগের কথা জানায়। আবু ধাবির বিভিন্ন পারিবারিক ব্যবসা থেকে আরও ৯ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের কথা জানা যায়। সাহায্য আসে মরিসাস, সিঙ্গাপুর থেকেও। এর পর, গতকাল সংসদে বাজেট পেশ হওয়ার পরই বাজার থেকে FPO তুলে নেয় আদানি গোষ্ঠী। ভারতীয় শিল্পপতিদের অনেকেও এগিয়ে আসেন বলে জানা গিয়েছে, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন সজ্জন জিন্দল, সুনীল মিত্তলরা। ভারতীয় জীবন বিমা, SBI জীবন বিমা, HDFC জীবন বিমা এবং SBI ইপিএফ-ও তাতে অংশ নেয়। সেই নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়ন শুরু হতে সময় লাগেনি। কেন্দ্রীয় সরকার তথা নরেন্দ্র মোদির সুহৃদ হওয়ার দরুণই বিপদ জেনেও আদানিকে সাহায্য করতে সকলে ঝাঁপিয়ে পড়েন বলে অভিযোগ করেন বিরোধীরা।


সরাসরি আদানির নাম যদিও মুখে আনেননি মমতা


এ দিন সরাসরি আদানির নাম যদিও মুখে আনেননি মমতা। তবে শেয়ার বাজারে আদানি গোষ্ঠীর ভরাডুবির কথা চাপা নেই। তাতেই দুই দুইয়ে চার করে নিচ্ছে রাজনৈতিক মহল। তবে বাংলায় আদানি গ্রুপের সঙ্গে হাত মিলিয়েই তাজপুর বন্দর গড়ছে মমতার সরকার। সেই কথাও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ।