সন্দীপ সরকার, বিটন চক্রবর্তী ও মনোজ বন্দ্যোপাধ্য়ায়, কলকাতা: খালিস্তানি মন্তব্য়ের অভিযোগ ঘিরে যখন চতুর্দিকে বিতর্কের ঝড়, তখন ২০২০ সালে বিজেপির নবান্ন অভিযানে, বলবিন্দর সিং নামে এক ব্যক্তির পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময় পাগড়ি খুলে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূলকে পাল্টা আক্রমণে নামল গেরুয়া শিবির। শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য়, এখনও ওই ঘটনায় ক্ষমা চায়নি পুলিশ। পাল্টা তৃণমূলের দাবি, সন্দেশখালি ইস্য়ুকে (Sandeshkhali Incident) আড়াল করতেই খলিস্তানি ইস্য়ুকে (Khalistan Remarks Row) সামনে রেখে রাজনীতি করা হচ্ছে।
কোন ঘটনা 'অস্ত্র' বিজেপির?
IPS অফিসারকে খালিস্তানি বলে আক্রমণের অভিযোগ ঘিরে যখন চতুর্দিকে বিতর্কের ঝড়, তখন ২০২০ সালে বিজেপির নবান্ন অভিযানের (BJP Nabanna Abhijan) একটি ঘটনাকে হাতিয়ার করে পাল্টা তৃণমূলকে নিশানা করছ গেরুয়া শিবির। বিজেপির নবান্ন অভিযানের সময় এই বলবিন্দর সিং -এর কাছ থেকে উদ্ধার হয় পিস্তল। আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে বলবিন্দর সিং-এর পাগড়ি খুলে যায়। যা নিয়ে তখন বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। কারণ, শিখ ধর্মাবলম্বীদের কাছে পাগড়ি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর বিষয়।
এখন সেই প্রসঙ্গ তুলে শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari on Khalistani remarks Controversy) এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ২০২০ সালে, কলকাতায় বিক্ষোভ দেখানোর সময় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ বলবিন্দর সিংকে মারধর করে, তার পাগড়ি টেনে নামিয়ে দেয় এবং তাঁকে তাঁর চুল ধরে টেনে নিয়ে যায়। বিরোধী দলনেতা আরও লিখেছেন, এই একই পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ যারা এখনও বলবিন্দর সিংয়ের কাছে ক্ষমা চাননি এবং তাঁকে ন্যায়বিচার পেতে সাহায্য করার জন্য কোনও পদক্ষেপ নেননি, এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ অনুসরণ করে একটি বিপর্যয় তৈরি করার চেষ্টা করেছেন, সন্দেশখালি থেকে নজর ঘোরানোর জন্য এটি একটি বিমুখী কৌশল।
সেদিনের ঘটনার ভিডিও-ও পোস্ট করেছেন বিরোধী দলনেতা। এরকমই একাধিক ভিডিও পোস্ট করে বঙ্গ বিজেপির তরফে লেখা হয়েছে, 'আমরা, বাংলার মানুষও সমানভাবে ক্ষুব্ধ। যাদের রাজ্য়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী হিসেবে কাজ করা উচিত, তারা নিজেদেরকে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের পাপোষে পরিণত করেছে। যেহেতু পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ দক্ষতার কথা বলছে, তাই আমাদের কি মনে করিয়ে দিতে হবে যে পুলিশ যদি তাদের কাজ করে তাহলে কি সন্দেশখালির ঘটনা ঘটত?' সেখানে আরও লেখা রয়েছে, '...শিখদের প্রতি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ কতটা অসম্মানজনক তা এই ভিডিও ও ছবিতে দেখা যাচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জরাজীর্ণ প্রশাসনকে চালানোর জন্য আপনি পাগড়ি খুলেছেন এবং একজন শিখ বিক্ষোভকারীদের রাস্তায় টেনে এনেছেন। আমাদের জ্ঞান দেবেন না।'
তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh on Suvendu Adhikari Remarks) বলেন, 'ওসব কাউন্টার পোস্টে কিছু এসে যায় না। মানুষ চোখের উপর যা দেখেছেন, শিখ সম্প্রদায় সব থেকে বড় কথা কী মনে করছেন, শিখ সম্প্রদায় মনে করছেন শুভেন্দু এই মন্তব্যটা নিশ্চিতভাবে তাদের ভাবাবেগে আঘাত লেগেছে এবং আমরাও সেটা সমর্থন করি।'
বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, 'কোনও শিখ বিক্ষোভ হচ্ছে না। যাঁরা বিক্ষোভ করছে তাঁরা তৃণমূলের নেতা। এক ব্যক্তির কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে কোনও একটি মন্তব্য পুরো শিখ সমাজের বিরুদ্ধে নয়।'
২০১০ সালের ৯ অগাস্ট, মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের কনভয়ে ধাক্কা মেরেছিল একটি ট্রাক। ট্রাকচালক গুর্জন্ত সিংকে গ্রেফতার করে প্রথমে জামিন দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরের দিনই তৎকালীন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করায়, ফের ট্রাকচালক গুর্জন্ত সিংকে গ্রেফতার করে CID। পাঞ্জাবের তৎকালীন মুখ্য়মন্ত্রী প্রকাশ সিং বাদল থেকে তামিলনাড়ুর তৎকালীন রাজ্য়পাল সুরজিৎ সিং বারনালা। তৃণমূলের কাছে লরি চালক গুর্জন্ত সিংয়ের মুক্তির আবেদন জানান। রাসবিহারি অ্য়াভিনিউয়ের শ্রী গুরু সিং সভাও গুর্জন্তের মুক্তির জন্য় তদ্বির করে। প্রায় মাসখানেক বন্দি থাকার পর অবশেষে মুক্তি পান সেই লরি চালক।
আরও পড়ুন: বাড়ির বাইরে গেলে সঙ্গে রাখুন ছাতা, আজ কোথায় বৃষ্টির পূর্বাভাস?